সবুজে ঘেরা একটি গ্রাম, কাঁচা রাস্তা ধরে এগুলে গাছের ছায়া আর পুকুরের কোল
ঘেঁষে একটি ঝকঝকে টিনের ঘর। ঘরের মালিক গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার
রাশিদা বেগম। ঘরটি তার স্বপ্ন প্যাকেজের অংশ। মাতৃত্বকালীন দরিদ্রভাতা
পাওয়ার পর তাকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করতে এই ঘর আর একটি গাভী
দেয়া হয়। এতেই তার অবস্থার আকাশ জমিন ফারাক বলে জানালেন রাশিদা। যে স্বামী
তাকে তাচ্ছিল্য করতো আজ সেই কদর করে, শ্বাশুড়ি আর বঞ্চনা দেয় না।
প্রতিবেশিরা তাকে সম্মান করে। এই হল নারীর ক্ষমতায়নকেই বাস্তবায়নের জন্য
স্বপ্ন-এর উদ্দেশ্য। এখানে যেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের
উন্নয়নের সংজ্ঞা মূর্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন অবকাঠামোগত
উন্নয়ন নয় বরং মানুষের সক্ষমতার বিকাশই উন্নয়ন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা
একজন দরিদ্র মা গর্ভধারণকাল থেকে শুরু করে পরের ২৪ মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট
হারে অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে মাসিক ৫শ’ টাকা করে এই ভাতা প্রদান
করে সরকার। এ ভাতা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে। যার মাধ্যমে দেশের মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসকল্পে
সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। লক্ষ্য অনুযায়ী দরিদ্র মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস
মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় উন্নত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ
বৃদ্ধি, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবা বৃদ্ধি, ইপিআই ও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের
হার বৃদ্ধি (২ সন্তানের অধিক নয়)। যৌতুক, তালাক ও বাল্য বিবাহ রোধ, জন্ম
নিবন্ধনে উত্সাহিত করা, বিবাহ নিবন্ধন থাকাই মূল উদ্দেশ্য বলে জানান মহিলা ও
শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি আরও বলেন, সরকারের এই
কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নীরন্তর প্রচেষ্টা
আরও ত্বরান্বিত হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এর প্রথম
লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোনচনই বাস্তবায়নে স্বপ্ন ভূমিকা রাখবে। দেশের দরিদ্র
গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নারী উন্নয়ন ও নারীর
ক্ষমতায়নে দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের বিনিয়োগ সহায়তার জন্য সরকারের স্বপ্ন
বাস্তবায়ন কর্মসূচিকে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন
চৌধুরী। তিনি বলেন, যে সকল এলাকায় সহযোগিতা দেয়া হবে সে সকল এলাকায়
মনিটরিং-এর মাধ্যমে প্রভাব মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরে কার্যক্রম গ্রহণ করা
উচিত।
কারা পাবেন
মাতৃত্বকালীন ভাতা ২৪
মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে অর্থ সহায়তা শেষ হলে সে মা কি করবেন। তার
অর্থনৈতিক মুক্তি কিভাবে হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্বপ্ন দ্রষ্টা
ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান। তিনি বলেন, স্বপ্ন প্যাকেজ হল
মা-বাবা-শিশু কেন্দ্রিক ২০ বছর এক প্রজন্ম মেয়াদী দারিদ্র্য বিমোচনের
লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত কার্যক্রম। মাতৃত্বকালীন ভাতাপ্রাপ্ত মাকেই স্বপ্ন
প্যাকেজ প্রদান করা হয়। মা ও তার সন্তানকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা— স্বাস্থ্য,
পুষ্টি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্ড, শিক্ষা ও বিনোদন কার্ড, স্বাস্থ্যসম্মত
পায়খানাসহ একটি ঘর, জীবিকায়ন সামগ্রী এবং কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে উন্নয়ন ঋণ
(্ক্ষুদ্রঋণ) প্রদান করা হয়। সুবিধাভোগী ও বাছাই হওয়ার ৭টি শর্ত হল প্রথম
বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল (যে কোন একবার), বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার
ঊর্ধ্বে, মোট মাসিক আয় ১৫০০ টাকার নিম্নে, দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার
পাবেন, কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে, নিজের বা পরিবারের
কোন কৃষি জমি, মত্স্য চাষের জন্য পুকুর নেই। জুলাই মাসে গর্ভধারিনী ‘মা’।
আমাদের রামগতি ও চাটখিল প্রতিনিধি জানান, স্থানীয়দের মধ্যে স্বপ্ন প্যাকেজ
কার্যক্রম বাস্তবায়নে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, এ কার্যক্রমটি পাইলট আকারে শুরু
করা হলেও আগামীতে তা প্রকল্পাকারে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
শুরুতে ঢাকা বিভাগের টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) ও কালিগঞ্জ (গাজীপুর),
চট্টগ্রামের চাটখিল (নোয়াখালী) ও রামগতি (লক্ষ্মীপুর), রাজশাহীর সিংড়া
(নাটর) ও বদলগাছি (নওগাঁ), সিলেটের শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), খুলনার
মুজিবনগর (মেহেরপুর), বরিশালের দৌলতখান (ভোলা) এবং রংপুরের উলিপুর
(কুড়িগ্রাম) উপজেলা। এ অর্থ বছরের বাজেটে স্বপ্ন প্যাকেজ কর্মসূচি ৫.৫০
কোটি (পাঁচ কোটি পঞ্চাশ লাখ) টাকা ব্যয় প্রাক্কলনে জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০১৬
মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এ কর্মসূচির ব্যয় মহিলা ও শিশু
বিষয়ক মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব রিসোর্স সিলিং হতে নির্বাহ করবে।