ইরানের সঙ্গে ছয় শক্তিধর রাষ্ট্রের পরমাণু সমঝোতার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামা এখন নিজ দেশের পার্লামেন্টের কংগ্রেসম্যানদের রাজি করানোর
উপায় খুঁজছেন। এটি করতে গিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলেও ধারণা
করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে গতকাল শনিবার প্রচারিত সাপ্তাহিক রেডিও
এবং ইন্টারনেট ভাষণে জাতিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, এই চুক্তিটি খুবই ভাল
একটি চুক্তি। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন নিশ্চিত করতে চায় তার দীর্ঘদিনের শত্রু
তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
প্রেসিডেন্ট ওবামা পরমাণু চুক্তির প্রতি আইন প্রণেতাদের সমর্থন দেয়ার
আহ্বান জানিয়েছেন। ওবামা আগামী জুন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে
পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সাপ্তাহিক ভাষণে ওবামা বলেন, এই পদক্ষেপ
ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পরমাণু বোমা তৈরির পথ বন্ধ করে দেবে। তিনি
বলেন, জনগণ আমাদের এই সমঝোতাকে সমর্থন দেবে বলে আশা করি। হোয়াইট হাউস
জানিয়েছে, ওবামা শুক্রবার চার কংগ্রেসের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওবামা
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানপন্থি স্পিকার জন
বোয়েনার, হাউসের ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পোলিসি, রিপাবলিকান সিনেটের
সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককোনলে এবং সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতা হ্যারি
রিডের সঙ্গে আলাপ করেছেন। আগামী মাসগুলোতে ওবামা প্রশাসন এ বিষয়ে জোর
প্রচেষ্টা চালাবে বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট
ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, এই সমঝোতা আমেরিকা আর ইরানের
দীর্ঘদিনের তিক্ত সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটাবে। কিন্তু সমঝোতাটিকে একটি
পরিপূর্ণ চুক্তিতে নিয়ে যাওয়াটা দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
সমঝোতার পর অনেককেই উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, এখন আসলে
একটি সমঝোতা হয়েছে। একটি পরিপূর্ণ চুক্তিতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু
রিপাবলিকানরা এর বিরোধিতায় নেমেছেন। তারা ইতোমধ্যে ইরানের ওপর আরো অবরোধ
আরোপের একটি বিলও এনেছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের শক্তিশালী লবি
রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বন্ধুদের অনেকের এই সমঝোতা পছন্দ নাও হতে
পারে। সমঝোতা বাস্তবায়নে এটিও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু যেহেতু
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের অপর চারটি দেশ আর জার্মানিও এর সাথে
যুক্ত আছে এবং তারাও সমঝোতার একটি অংশ, তাই আমেরিকা এই সমঝোতা কার্যকরে
আন্তরিক হবে, বলেন রিয়াজ।
সুইজারল্যান্ডে পশ্চিমা ছয়টি দেশের
সঙ্গে ৮ দিনে দফায় দফায় দরকষাকষির পর ইরান তার ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার
দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। বিনিময়ে পর্যায়ক্রমে ইরানের ওপর থেকে
অবরোধ তুলে নেবে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে ইরান ঠিকমতো শর্ত না মানলে পুনরায়
অবরোধ আরোপ করা হবে।