Science and Technology news - চাঁদের আলোয় জীবন, পূর্ণিমায় বিস্তার

পূর্ণিমার রাতে এই উদ্ভিদ পতঙ্গকে কাছে টানতে একধরনের শর্করাজাতীয় তরল নিঃসরণ করে l ছবি: ক্রিস্টিনা বলিন্ডারচাঁদের ওপর নির্ভরশীল এটিই একমাত্র উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম এফেড্রা ফোয়েমিনি। সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী আকস্মিকভাবেই এটির খোঁজ পেয়েছেন।
এই উদ্ভিদে ফুল হয় না। এটি রাতের বেলা ছোট ছোট স্বচ্ছ গুটিকা থেকে একধরনের মিষ্টি তরল পদার্থ নিঃসরণ করে। প্রজননে সহায়ক নিশাচর পতঙ্গগুলো কাছে টানার জন্যই এই প্রক্রিয়া। ফোঁটায় ফোঁটায় নিঃসৃত ওই তরল পদার্থের আকর্ষণে পতঙ্গ বা মাছিরা যখন ওই উদ্ভিদের ওপর বসে, তখনই এটির পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় চাঁদের আলো প্রয়োজন হয়, যা সেই স্বচ্ছ গুটিকায় প্রতিফলিত হয়ে পোকামাকড়গুলোকে আকৃষ্ট করে।
গবেষক দলটির প্রধান ক্যাটারিনা রিডিন বলেন, উদ্ভিদের পরাগায়নে সহায়ক পতঙ্গ পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা গ্রিসে গিয়েছিলেন। নিষ্ফল একটি সপ্তাহ কাটানোর পর তাঁদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা রাতে ওই পতঙ্গের সন্ধানে মাঠে যাওয়ার পরিবর্তে আয়েশ করে খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনাও করে ফেলেন। কিন্তু জোছনার আলোয় হঠাৎ করেই তাঁদের নজরে পড়ে এফেড্রা ফোয়েমিনির উজ্জ্বলতা আর তাকে ঘিরে পতঙ্গের ওড়াউড়ি। তাঁদের গবেষণা নিবন্ধটি বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োলজি লেটার্স-এ প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্ভিদটির পরাগায়নের সঙ্গে চান্দ্র চক্রের সম্পর্ক রয়েছে—এমন ধারণাটিকে প্রথম দিকে তেমন আমল দেননি গবেষকেরা। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে পূর্ণিমার সময় তাঁরা ওই সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। তাঁরা দেখতে পান, ঠিক পূর্ণিমার লগ্নে উদ্ভিদের স্বচ্ছ গুটিকাগুলো বেরিয়ে আসে। কিন্তু বায়ুপরাগী আরেকটি উদ্ভিদে পূর্ণিমার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।.
পূর্ণিমার সঙ্গে অনেক প্রাণী প্রজাতির তৎপরতার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। যেমন: বিভিন্ন ধরনের কাঁকড়া, সামুদ্রিক পাখি, গুবরে পোকা ও প্রবাল। কিন্তু উদ্ভিদজগতে এফেড্রা ফোয়েমিনিই এখন পর্যন্ত প্রথম, যার অস্তিত্ব নির্ভর করে পূর্ণিমার ওপর। রিডিন বলেন, তাঁদের জানামতে আর কোনো উদ্ভিদের এ রকম বৈশিষ্ট্য নেই। রাতে গাছটির তরল নিঃসরণের ফোঁটাগুলো পূর্ণিমার আলোয় হীরার মতো উজ্জ্বল দেখায়। অভূতপূর্ব সেই দৃশ্য।

তবে উদ্ভিদটি পূর্ণিমার আগমন ঠিক কীভাবে টের পায়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সম্ভবত তারা চাঁদের আলো বা মহাকর্ষীয় পরিবর্তনগুলো নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারে। রিডিন মনে করেন, মানুষ যেভাবে আলো দূষণ করছে, তাতে ওই অভিনব উদ্ভিদ প্রজাতিটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে ব্যাপারটি নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। পতঙ্গপরাগী উদ্ভিদ প্রজাতিগুলো গ্রামীণ এলাকা থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় বায়ুপরাগী প্রজাতিগুলোর অবস্থা অনেকটা ভালো।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts