জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান ও লাক্সতারকা আজমেরী হক বাঁধন জুটিবদ্ধ হয়ে
অভিনয় করছেন নতুন একটি ধারাাবাহিক নাটকে। দর্শকপ্রিয় নির্মাতা মাসুদ
সেজানের রচনা ও পরিচালনায় জীবনবোধের গল্প নিয়ে নির্মিত এই নাটকের নাম ‘একটি
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’। নাটকের গল্প ও এই জুটির অভিনয় ভাবনা নিয়ে এবারের আয়োজন।
লিখেছেন খালেদ আহমেদ ও ছবি
তুলেছেন সোহেল মামুন
বিশ্বাস-অবিশ্বাস, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যুগে যুগে চলে আসছে। একবিংশ শতাব্দীর এই
প্রান্তে এসে মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে অনেক কিছুই অর্জন করেছে। কিন্তু
আমরা এখন পরস্পরকে কতটুকুইবা বিশ্বাস করতে পারি। যেমন—বাসে উঠে সহযাত্রীকে
বিশ্বাস করতে পারছি না। তার দেওয়া কোনো খাবারও ভয়ে খাচ্ছি না। আবার
সন্তানকে বাসার কাজের লোক দিয়ে স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাই। কারণ মনে সংশয় থাকে,
কাজের লোকটি অপহরণকারী দলের সঙ্গে জড়িত কি না। বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয়
জিনিস কিনতে গেলেও ভয়ে থাকি। বুঝতে চেষ্টা করি, ওই জিনিসে ফরমালিন আছে কি
না। কারণ আজ খাবারেও বিষ মেশায় মানুষ। আবার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক নিয়েও আমাদের নানা সংশয়ে থাকতে হয়। নতুন কেউ
বন্ধুত্বের জন্য রিক্যুয়েস্ট পাঠালে, তা এক্সসেপ্ট করতে ভয় লাগে। কারণ ওই
ব্যক্তিটি ফেক কি না। তাই বলা যায়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস এখন সমাজের
মানুষগুলোকে ক্যান্সারের মতো কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে—জীবনের এমন বহুমাত্রিক
সংকটের গল্প নিয়ে মাসুদ সেজান নির্মাণ করছেন নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘একটি
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’। এই নাটকে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন
জাহিদ
হাসান ও বাঁধন। এতে আরও অভিনয় করেছেন ডা. এজাজ, শামীমা নাজনীন, তারিক খান,
রোবেনা রেজা জুঁই, উজ্জ্বল মাহমুদ, নূর আলম নয়ন, সাজ্জাদ হোসাইন, হায়দার
কবির মিথুন, রিমি করিম, জয়রাজ প্রমুখ। প্রথমেই নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে জাহিদ
হাসানের সাথে কথা হলো। তিনি বলেন, ‘নাটকে আমার চরিত্রের নাম মাহবুব। প্রথম
প্রেমে প্রতারিত হয়ে সে আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারে না। তাই বিয়ে
করতেও ভয় পায়। উপকার করলে ক্ষতি করে, ভালোবাসলে আঘাত করে, সুখের কথায় হিংসা
করে, দুঃখের কথায় সুযোগ খোঁজে—নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কারণে মাহবুব এই
প্রবাদটি বিশ্বাস করে। তাই সহজে কারও উপকার করতেও চায় না। যদি একান্তই কারো
উপকার করতে হয় তবে তাকে শর্ত দিয়ে উপকার করে। সব মিলিয়ে মাহবুব চরিত্রটি
বেশ মজার। অভিনয় জীবনে নানা চরিত্রে কাজ করলেও মাহবুবের ভূমিকায় অভিনয় করে
ভালো লাগছে।’ বাঁধনের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করতে কেমন লাগল—জানতে চাইলে
জাহিদ হাসান বলেন, ‘বাঁধন একজন গুণী অভিনেত্রী। তার সঙ্গে অভিনয় করে ভালো
লেগেছে। আমাদের জুটির অভিনয়টা আশা করি দর্শকের ভালো লাগবে।’ এবার নিজের
চরিত্র বিশ্লেষণ করলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল বাঁধন। তার ভাষ্যে, ‘এই নাটকে আমি
নাহার চরিত্রে অভিনয় করেছি। তার জীবনে ঘটেছে নানা ঘটনা। তাই ছেলেদেরকে
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তার। মাহবুব ও আমি একই এলাকায় থাকি। তার সঙ্গে চলতি
পথে মাঝেমধ্যে কথা হয়। ভালো ছেলে হিসেবে তাকে পছন্দ করি। মাহবুবের পরিবার
কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে বিয়ে দিতে পারেনি। তাই এবারের কৌশলটা একটু
ভিন্ন। তার মা আমাকে অনেক বুঝিয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য রাজি করিয়েছে। বিয়ের
দিন আমি পার্লার থেকে সাজগোজ করে বের হয়ে মাহবুবের সামনে পড়ি। তখন মাহবুব
আমাকে বলে, কই যাও। আমি উত্তর দিই, বান্ধবীর বিয়ে খেতে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর
মাহবুব বাসায় গিয়ে দেখে তার বিয়ের আয়োজন। কনে বসে আছে ঘোমটা দিয়ে। কাজী
তার রেজিস্ট্রি খাতা নিয়ে তৈরি। তখন তার মা মাহবুবকে বলে, বাবা তুই আজকে
অমত করিস না বিয়েতে, রাজি হয়ে যা। সে কিছুতেই রাজি না হলে তার মা বলে, বাবা
বউয়ের সুন্দর মুখখানা একবার দেখ। মাহবুব ঘোমটা তুলে আমাকে দেখে চিত্কার
করে বলে, মা এই মেয়ে মিথ্যুক! আমি একে বিয়ে করব না। একটু আগে রাস্তায় দেখা
হলে সে আমাকে বলেছে বান্ধবীর বিয়ে খেতে যাচ্ছে। অথচ সত্য কথাটা বললে কী
হতো। বিয়েও ভেঙে যায়। কিন্তু নাহার মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে জীবনে যদি বিয়ে
করে তবে মাহবুবকেই করবে। সব মিলিয়ে নাহার চরিত্রটিতে অভিনয় করে আমার ভালো
লেগেছে।’ লাক্সতারকা বাঁধন আরও বলেন, ‘জাহিদ ভাই অনেক গুণী এবং উঁচু মাপের
একজন অভিনেতা। তার সাথে অভিনয় করতে পেরে ভালো লেগেছে। তিনি অনেক সহযোগিতা
করেন। অনেক ভালো লেগেছে নাটকটিতে অভিনয় করে।’
প রি চা ল ক ভা ব না
রাস্তায় বের হলেই সামনে পড়ে অবিশ্বস্ত, মিথ্যা, নকল মানুষ। এ সমস্ত মানুষ
বর্তমানে সমাজটা দূষিত করে তুলছে। প্রসঙ্গক্রমে আরও বলতে হয়, সমাজের বেশির
ভাগ মানুষই ভালো মানুষ। কিন্তু যারা খারাপ মানুষ তারা বেশি সরব। তাই মনে হয়
যেন খারাপ মানুষের সংখ্যাই বেশি। এসব খারাপ মানুষ সম্পর্কে সচেতন হওয়া
দরকার। জীবনবোধের এই মেসেজ নিয়েই আমার নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘একটি বিশেষ
বিজ্ঞপ্তি’। ‘ওরে বাবা বাঘ নয়, হায়েনা-কুকুর নয়, মানুষকে আজ ভয় পাচ্ছে
মানুষ’—শিরোনামে নতুন এই ধারাবাহিকের জন্য একটি টাইটেল সংও করেছি। গানটির
মধ্যেই রয়েছে পুরো নাটকের গল্পটা। আশা করছি, নতুন এই ধারাবাহিকটি দর্শকদের
মানুষ চেনার জন্য সহায়ক হবে।