ঢাকাই
চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা জুটি ‘রাজ্জাক-কবরী’। জুটি হিসেবে এই জুটির
আগে পরে আরও বেশ কিছু জুটি দর্শকপ্রিয়তা পেলেও রাজ্জাক-কবরী জুটির
জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি আর কোনো জুটি। বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত
কিংবদন্তি নায়ক রাজ রাজ্জাক গত ২৫ মার্চ স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন। আবার
আসছে শনিবার আজীবন সম্মানা পদক পেতে যাচ্ছেন মিষ্টি হাসির নায়িকা কবরী।
আজকের বিশেষ এই আয়োজন তাদের দুজনকে নিয়ে। লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন
সময়ের
ধারাবাহিকতায় দুজনই জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়ে গেলেন। একজন নায়ক রাজ
রাজ্জাক, অন্যজন মিষ্টি হাসির নায়িকা কবরী। এই দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে
কালজয়ী জুটির নাম ‘রাজ্জাক-কবরী’। এ জুটির আগে দর্শকপ্রিয়তা পায় রহমান-শবনম
জুটি। কিন্তু এই জুটি খুব বেশি চলচ্চিত্রে একসঙ্গে কাজ না করায় ১৯৬৮ সালে
গড়ে ওঠা রাজ্জাক-কবরী জুটিই এগিয়ে যায় জনপ্রিয়তায়। চলচ্চিত্রে কবরীর অভিষেক
১৯৬৪ সালে প্রয়াত সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের
মধ্যদিয়ে। চলচ্চিত্রটিতে কবরীর নায়ক ছিলেন পরিচালক নিজেই। এরপর কেটে যায়
চার বছর। এই চার বছরে নায়ক রাজের অভিষেক ঘটে ১৯৬৬ সালে জহির রায়হান
পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার সঙ্গে জুটি বেঁধে। তার দু বছর পর
সুভাষ দত্ত রাজ্জাক-কবরীকে জুটি করে নির্মাণ করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি।
প্রথম চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে দর্শকপ্রিয়তা পায় তারা দুজন। ১৯৬৯ সালে কাজী
জহিরের ‘ময়নামতি’ ও মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’, ১৯৭০ সালে নজরুল ইসলামের
‘দর্পচূর্ণ’ , মিতার ‘দীপ নেভে নাই’, কামাল আহমেদের ‘অধিকার’ চলচ্চিত্রে
রাজ্জাক-কবরীর প্রেমের অনবদ্য উপস্থাপন দর্শকের মনে জুটি হিসেবে স্থান করে
নেয়। এরপর এই জুটি অসংখ্য চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন। আর সেসব
চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই সর্বকালের সেরা জুটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন
রাজ্জাক-কবরী। রাজ্জাক-কবরী জুটির পর বাংলা চলচ্চিত্রে ফারুক-ববিতা,
ববিতা-জাফর ইকবাল, শাবানা-আলমগীর, দিতি-ইলিয়াস কাঞ্চন, ইলিয়াস
কাঞ্চন-অঞ্জু, শাবনাজ-নাঈম, সালমান শাহ-শাবনূর, শাকিব-অপু এবং সর্বশেষ
বাপ্পী-মাহি জুটি দর্শকপ্রিয়তা পেলেও কিংবদন্তি জুটি হয়েই রয়ে গেছেন
রাজ্জাক-কবরী। রাজ্জাক-কবরী সর্বশেষ দশ বছর আগে ইস্পাহানী আরিফ জাহানের
পরিচালনায় ‘আমাদের সন্তান’ চলচ্চিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এরপর আর এই
জুটিকে কোনো চলচ্চিত্রে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়নি। চলচ্চিত্রে বিশেষ
অবদানের জন্য নায়ক রাজ রাজ্জাক ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে
‘আজীবন সম্মাননা’ পেয়েছিলেন। গৌরবের বিষয় এই যে, চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে নায়ক
রাজ রাজ্জাকই প্রথম জীবদ্দশায় ২০১৫ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা
হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেলেন গত ২৫ মার্চ। নায়ক রাজ রাজ্জাক বলেন,
‘জীবদ্দশায় রাষ্ট্র কর্তৃক এত বড় স্বীকৃতি পেয়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি আমার
ভক্ত, দর্শক এবং রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে দেশের সর্বোচ্চ
সম্মাননায় সম্মানিত করেছেন। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমি সবসময়ই ভালো থাকতে
পারি।’ বাংলাদেশ প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিও নায়ক রাজের এই অর্জনকে চলচ্চিত্রের
বিরাট এক প্রাপ্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে সমিতির উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি
নাসিরুদ্দিন দিলু, শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানী, পরিচালক সমিতির
সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বিশেষ অভিনন্দন জানান। এদিকে আসছে শনিবার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র
পুরস্কারের অধীনে ‘আজীবন সম্মাননা’ গ্রহণ করবেন চিত্রনায়িকা ও সাবেক সাংসদ
কবরী। কবরী বলেন, ‘চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে
তাই ভীষণ ভালো লাগছে। আমি আমৃত্যু চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই। কারণ আজ এই
অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি চলচ্চিত্রের জন্যই। অভিনয় এবং রাজনীতি দুটো
ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে আমি মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতেই আমি মুগ্ধ।
আমার সকল ভক্ত দর্শকের জন্য অপরিসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।’ আসছে ঢাকা সিটি
কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ‘মেয়র’ পদপ্রার্থী হয়ে ঢাকা উত্তর থেকে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কবরী। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে পাঁচ
দশক অতিবাহিত করেছেন। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই তিনি এর আগে সাংসদ হিসেবে
জয়লাভ করেছিলেন। কবরী বিশ্বাস করেন মানুষের ভালোবাসা নিয়েই তিনি এবারও জয়ী
হবেন।