Lifestyle news - মধ্যপ্রাচ্যে মুটিয়ে যাচ্ছে মানুষ

সৌদি আরবের খালিদ বিন মোহসিন শাহরির ওজন ৬০০ কেজির বেশি।
বয়স আর কতইবা হবে? বড়জোর ১৮ থেকে ২০। কিন্তু ওজন? ৬০০ কেজিরও বেশি! যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন সৌদি আরবের খালিদ বিন মোহসিন শাহরি। নিজে নড়তে-চড়তে পারেন না। সৌদির কিং ফাহাদ মেডিকেল সিটিতে চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালে তাঁকে রিয়াদে নেওয়া হয়।

তাঁকে মালামাল পরিবহনের ট্রাকে করে বিছানাসহ রিয়াদে আনার ভিডিও দেখেছে সারা বিশ্ব। তাঁর এই অতিরিক্ত ওজন ব্যতিক্রমী ঘটনা হলেও তা মধ্যপ্রাচ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরেছে।

গবেষকেরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল, যেমন-কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের হার বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছে, যা এই এলাকার মোট জনসংখ্যার নয় দশমিক সাত শতাংশ। অবশ্য ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয় না। আইডিএফের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যে ডায়াবেটিসের হার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

চল্লিশ বছর বয়সী শাহজাদ আহমেদ মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘আমি স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে এক দশক আগে আবুধাবি চলে আসি। এখানে আসার পরই আমার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি লক্ষ্য করি। আমি খুব মোটা হয়ে গেলাম। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসি। বেশি মাত্রায় কোলস্টেরল সেবন, শ্বাস নিতে না পারায় হাঁপানির ওষুধ খেয়ে আমার অবস্থা আরও কাহিল হয়ে গেল।’

এর কারণ সম্পর্কে শাহজাদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন, বিশেষ করে বসে বসে কাজ করা, বেশি বেশি খাবার খাওয়া এর কারণ। বিলাসবহুল জীবনযাপনই একমাত্র কারণ। এয়ার কন্ডিশন পরিবেশে আমরা এখানে শারীরিকভাবে সক্রিয় কোনো কাজ করি না, কম্পিউটার বা টিভির সামনেই কেটে যায় বেশির ভাগ সময়। এতে ক্যালরি খরচ হয় কম। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবখানেই খাবার থাকে টেবিল ভর্তি। স্থূলতা ও ডায়াবেটিস তাই এখানে ‘লাইফস্টাইল রোগ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

আবুধাবিতে ২০১০ সাল থেকে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ডায়াবেটিস সেন্টারে কাজ করছেন চিকিৎসক ফারহানা বিন লুথা। এই প্রতিষ্ঠানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডায়াবেটিস নিয়ে প্রচারণার কাজ করছে। ড. বিন লুথা বলেন, অধিকাংশ মানুষ ‘টাইপ-২’ ডায়াবেটিসের ভুগছেন, কিন্তু তাঁরা এটা বুঝতে পারেন না। কোনো উপসর্গ না থাকায় তাঁরা কোনো চিকিৎসা নেন না। এতে কিডনির সমস্যা, হৃদ্‌রোগ বা অন্ধত্ব নেমে আসতে পারে। এটা ইনসুলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই হরমোনটি অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হয় এবং রক্ত, গ্লুকোজ, চিনি ব্যবহার করে শরীরকে শক্তি জোগায়। ডায়াবেটিস কয়েক প্রকার হতে পারে। এর মধ্যে ‘টাইপ ওয়ান’ হচ্ছে জুভেনাইল ডায়াবেটিস বা শিশুদের বহুমূত্র রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এ রোগ হলে দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। ‘টাইপ টু’ হচ্ছে সবচেয়ে পরিচিত ডায়াবেটিস রোগ। এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তা ব্যবহার করতে পারে না। আইডিএফের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts