নারীর সাহিত্য চর্চার ইতিহাস অনেক দিনের। একসময় নারী অবরোধবাসিনী ছিল। সে
সময় লেখার মাধ্যমে নারী বাইরে আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। রবীন্দ্রনাথের
অন্দর মহলের নারীদের মধ্যেও দেখা যায় সাহিত্য চর্চার অনুরাগ। আর বেগম
রোকেয়া তাঁর লেখার মাধ্যমে নারী মুক্তির আশা জাগান। সুফিয়া কামালের
লেখনিতেও ছিল নারী মুক্তির ডাক। শুরুটা বেশ আগের হলেও সাহিত্য জগতে নারী
লেখকরা জায়গা করে নিতে পারেননি। তবে চেষ্টা চলছে অবিরাম। আমাদের সাহিত্য ও
নারী লেখকদের নিয়ে লিখেছেন রাবেয়া বেবী
প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিকরা
বাংলাদেশের সাহিত্য নিজ নিজ সাধ্যের মধ্যে পরিচর্যা করছেন। এখানে কোন
ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি না। তবে মানসম্মত রচনার মূল্যায়ন করবেন সমালোচক।
সবার উপরে বড় সমালোচক সময়। কালের বিচার বড় নির্মম। কাউকে ক্ষমা করে না। যা
বাতিল হওয়ার যোগ্য তা স্বাভাবিক নিয়মে বাতিল হবে। বাংলাদেশের সাহিত্য
মানের দিক থেকে বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে তুলনীয়।
এভাবেই সাহিত্যের
বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বলেন স্বনাম ধন্য কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
তিনি নারী সাহিত্যিক বিষয়ের সমালোচনা করে বলেন, সাহিত্যিকের আবার
নারী-পুরুষ কি? সাহিত্যিকের একটাই পরিচয় তিনি সাহিত্যিক। তবে আমাদের
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেমন অন্য পেশাগুলোতে নারীর প্রবেশ ও বিচরণ মসৃণ নয়
তেমন কিংবা অনেক ক্ষেত্রে তার কঠিন সাহিত্যের ক্ষেত্রে নারীর বিচরণ। যদি
লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো অবস্থা এখনও আমাদের তেমন করে হয়নি বলে
মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এখনও এমন পর্যায়ে আসেনি
যেখানে নারী-পুরুষ যে কেউ সাহিত্যকে পেশা হিসেবে নিতে পারে।
প্রতিদিন হাজারো বইয়ের ভিরে বড়ই কষ্ট করে যে কয়জন নারী সাহিত্যিক নিজেদের
আলাদা জায়গা করেছেন তাদের মধ্যে একটি নাম অদিতি ফাল্গুনি। অদিতি বলেন, একজন
নারী সাহিত্যিক হিসেবে আমার হাজারো ইচ্ছার সাথে প্রতিকূলতার সমঝোতা চলে।
সমাজের সমালোচনার সুযোগ না দিয়ে আমাকে নিজের লেখার মধ্যে বিচরণ করতে হয়।
লেখাকে ভালবেসে লেখক হওয়ার উদারণ টেনে তিনি বলেন, শচিন টেন্ডুলকার বলেছেন,
আমার পাড়ার আমার পাশেই আর একটা ছেলে কিন্তু আমার চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতো।
সে পড়াশুনাকে কেন্দ্র করে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। আমি শুধুই
ভালবাসার জন্যই পরে ছিলাম মাঠে।
আমার বেলাতেও তাই। আমি বিয়ে
করিনি। সংসারে একটা বাচ্চার দায়িত্ব নিতে যে বেগ পেতে হতো তা এড়িয়ে গিয়ে
আমি পুরোটা সময় লেখার জন্য দিতে চেয়ে লেখক হয়েছি। আবার এটাও বলা যায়,
স্বামী সহযোগী হলেও নারীরা লেখাও ভাল করতে পারে। করেছেও সর্বজন প্রিয়
লেখকের তালিকায় কিন্তু সংসারি নারীদের নাম আছে। এ বছর অদিতির দুটি বই
বেরিয়েছে। মেয়েদের সাহিত্য জগতে বিচরণ কম নিয়ে অদিতি বলেন, মেয়েদের সাহিত্য
আলোচনা সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। আমি ছেলেদের দেখেছি একটি বিষয় নিয়ে
তারা বির্তক করে সমাধানে আসার চেষ্টা করে। মেয়েরা তেমন করতে পারে না।
আমরা একটা লেখা নিয়ে আলোচনা করি না। রাজনীতি নিয়েও আমাদের লেখা কম। শুধু
রাজনীতি কেন আমরা একটি ইস্যুকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার ঝড় তোলার
সংস্কৃতিও গড়ে তুলতে পারি না। লেখক হতে চাইলে কি করতে হবে সেলিনা হোসেন
বলেন, পড়ার কোন বিকল্প নেই। অনেক পড়াই একজন লেখক তেরি করতে পারে। একজন
লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি হবে অন্যের চেয়ে আলাদা। সে জীবন থেকে নিবে আবার
কল্পনাকেও মেশাবে সেটা কিভাবে তাকেই নির্ধারণ করতে হবে।
নারী
লেখকের সাহিত্য চর্চা নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান
বলেন, প্রতিদিনই তাদের লেখা বই প্রকাশ হয়। এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই নিজেদের
ভালবাসার প্রমাণ রাখে। বাংলা একাডেমী নবীন লেখকদের বই ছাপে না। কিন্তু যে
টিকে যায় তারা এক সময় বাংলা একাডেমির সাথে নানাভাবে যুক্ত হয়।
এই টিকে যাওয়ার যুদ্ধে নবীন মৌলি আজাদ বলেন, বাবা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে
নিয়ে একটা লেখার প্রশংসা কবি শামসুর রহমান করেন। সেই থেকে লেখক হওয়ার
স্বপ্ন বোনা। আজও সেই স্বপ্নের পথে হাঁটছি। এমন স্বপ্নের পথে হেঁটেই এই
বইমেলায় প্রতিদিন পনের থেকে বিশজন নারীর বই আসে। সেই হিসেবে অনেক নারী
যুক্ত হচ্ছেন সাহিত্য জগতে। তাদের মধ্যে অনেকেইতো পাঠক, সময় আর ভালবাসার
বিচার পেরিয়ে সাহিত্যিক হয়ে সমৃদ্ধ করবেন এই জগতকে।