National news - পদ্মায় লঞ্চডুবি, নিহত ৪৩ যাত্রী ছিল দুইশ, নিখোঁজ ৪০, দুর্ঘটনা তদন্তে কমিটি

পদ্মায় লঞ্চডুবি, নিহত ৪৩
পদ্মায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে এমভি মোস্তফা নামের একটি লঞ্চ। গতকাল রবিবার দুপুরে সারবাহী একটি কার্গোর ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত নয়টা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৪০ জন।
যেভাবে দুর্ঘটনা: বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, লঞ্চটি বেলা পৌনে ১২টার দিকে পাটুরিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে বিপরীত দিক থেকে আসা সারবাহী কার্গো এমভি নারগিস-১ লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি ডুবে যায়। তবে লঞ্চে কত জন যাত্রী ছিল, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনগণ আশপাশের লঞ্চ নিয়ে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তারা অর্ধশতাধিক যাত্রীকে উদ্ধারে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী গোয়ালন্দ কৃষি অফিসের হেড ক্লার্ক তফসির জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকা থেকে আসা কার্গোটি লঞ্চের মাঝখানে ধাক্কা দেয়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লঞ্চটি উল্টে ডুবে যায়। এ সময় তিনিসহ কেবিনের বাইরে থাকা যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে অন্য লঞ্চ ও ট্রলারে উঠতে সক্ষম হন। তবে লঞ্চের ভেতরে থাকা শতাধিক যাত্রী বের হতে পারেননি। এদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন তিনি।
রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নারী-শিশুসহ অন্তত ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ফরিদপুরের বেতেঙ্গা গ্রামের ইয়ার আলীর কন্যা শারমিন (২০), তার পুত্র ইমামুল (১৪) ও কন্যা ফারজানা (৫)। ভেদরপুর গ্রামের আরতি সাঁতরে রক্ষা পেলেও স্বামী বৈদ্যনাথ (৭০), জা চম্পা (৫২), অনিমা (৪৫) ও বোন অর্চনা (৩০) মারা যায়। এ ছাড়া, গোপালগঞ্জের বাসিন্দা রেজাউলের স্ত্রী হাফিজা (৩৫) ও পুত্র মাসুদ (১২) প্রাণ হারায়। এ লঞ্চের আরোহী শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামের হাসু (৫৭) ও ষাইটঘর গ্রামের রতন সরকার (৫০) দৌলতদিয়া ঘাটে ডিউটিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে মারা যায়। এরা দু’জন এ রুটের অপর লঞ্চের কর্মচারী। এ সকল লাশ উদ্ধারের পর আত্মীয়-স্বজন ও উদ্ধার কর্মীদের আহাজারিতে এলাকায় এক হূদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়
স্থানীয়রা দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৪০-৫০ জনকে উদ্ধার করে। এরমধ্যে ৮ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলো মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোছাইল গ্রামের আতর আলীর স্ত্রী লাইলী বেগম (৭০) ও গোপালগঞ্জের সোহরাবের পুত্র জুনায়েদ (১)। উদ্ধার পাওয়া যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন জানান, গোপালগঞ্জের রিমা (৪৫), রিঞ্জি খাতুনের স্বামী হাসান (৫০), কুষ্টিয়া কুমারখালীর বেলা আক্তারের স্বামী ইউনুস (৪৫) ও অপর দুই পুত্র নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকৃত যাত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে এক মর্মস্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নিখোঁজদের কয়েকজন: রাজবাড়ির জয়নাল (৫৫), কন্যা নাসিমা (৩০), দোহার উপজেলার বান্দুরা গ্রামের সুফিয়া (৩০), তার শাশুড়ি নবীজান (৭০), কন্যা সুমি (২), ফরিদপুরের বেতেঙ্গা গ্রামের ইয়ার আলীর কন্যা শারমিন (২০), নাতনি ফারজানা (৫) ও পুত্র ইয়ামুল (১৪), ভেদরপুরের বৈদ্দনাথ (৭০), তার ভাইয়ের স্ত্রী চম্পা (৫০), অনীমা (৪৫) ও শালিকা অর্চনা (৩০), গোপালগঞ্জের রিমা (৪৫), রেজাউলের পুত্র মাসুদ (১৫) ও স্ত্রী হাফিজা (৩২), রিমজি খাতুনের স্বামী হাসান (৫০), রতন সরকার (৫০), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বেলা আক্তারের স্বামী ইউনুস (৪৫) ও তাদের দুই পুত্র নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতদের লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা: বিকাল ৫টার দিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উদ্ধার তত্পরতার খোঁজ-খবর নেন। এ সময় নৌমন্ত্রী নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে  প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের পর ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা  দেন।
এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় তিন লস্করসহ সারবাহী কার্গোটি আটক করা হয়েছে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুজ্জামান এ খবর নিশ্চিত করেছেন। দুর্ঘটনার পর দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে মানিকগঞ্জের শিবালয় ?উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে একটি মেডিক্যাল সেন্টার খোলা হয়েছে ।
তদন্ত কমিটি: সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক হয়েছেন অধিদফতরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. শাজাহান। সদস্য দু’জন হলেন- অধিদফতরের স্পেশাল অফিসার মেরিন সেফটি গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান ও মুখ্য পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।
লঞ্চ উদ্ধারের চেষ্টা
ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দল, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তত্পরতা চালিয়ে বিকালের দিকে বিআইডব্লিউটিসি উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি-৮৯ দিয়ে নিমজ্জিত লঞ্চটি পাটুরিয়ার দিকে টেনে আনার চেষ্টা চালায়। উদ্ধারকর্মী ডুবুরিরা জানায়, লঞ্চ দুর্ঘটনাস্থলে প্রায় ১৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নদীতে জোয়ার আসায় সামান্য সেএদিকে,  মাওয়া থেকে ছেড়ে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি রুস্তম ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। পুলিশ জানায়, ঘাতক কার্গোর মাস্টার ও সুকানি পলাতক তবে লস্কর শাহীনুর রহমান, শহিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, নিহতদের লাশ পরিবহন ও দাফন-সত্কারের জন্য লঞ্চ মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করছে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts