পাটুরিয়া
থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে পদ্মায় রবিবার ১২টার দিকে ‘এমভি মোস্তফা-৩’
নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে
দাঁড়িয়েছে, এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৩ জন নারী ও পাঁচ শিশু রয়েছে। এখনো
নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী
১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে রিপোর্ট
জমা দেবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা
করেছেন নৌমন্ত্রী।
কমিটির
আহবায়ক হলেন, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মোঃ
শাজাহান। সদস্য দু’জন হলেন- সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের স্পেশাল অফিসার মেরিন
সেফটি গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান ও মুখ্য পরিদর্শক মোঃ শফিকুর রহমান।
লঞ্চডুবির
খবরে পদ্মার পাড়ে হতাহতদের স্বজনেরা ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের আহাজারিতে পদ্মার
বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। স্বজনদের ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে,
স্থানীয়ভাবে নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস হতাহতদের উদ্ধার তত্পরতা চালালেও
লঞ্চটি উদ্ধারের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। মাওয়া থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ
হামজা রওনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিকেল
৫টার দিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং
উদ্ধার তত্পরতার খোঁজ-খবর নেন। এ সময় নৌ মন্ত্রী শাজাহান নিহতের প্রত্যেক
পরিবারকে প্রথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা এবং পরর্বতীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
দাখিলের পর ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন।
লঞ্চডুবির
ঘটনায় এর আগেই সারবাহী কার্গো এমভি নারগিস-১ আটক করা হয়। পরে কার্গোটির
তিন লস্করকেও আটক করা হয়েছে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুজ্জামান এ
খবর নিশ্চিত করেছেন।
দৌলতদিয়া
শাখার বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে
ছেড়ে আসা এমভি মোস্তফা নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চকে দুপুর ১২টার দিকে
ধাক্কা দেয় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সারবাহী কার্গো। এতে লঞ্চটি ডুবে যায়।
তবে লঞ্চে কত যাত্রী ছিল, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল।
দুর্ঘটনার
পরপরই স্থানীয় জনগণ আশপাশের লঞ্চ নিয়ে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধারের জোর
চেষ্টা চালায়। তারা শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধারে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে ডুবুরি ও
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের উদ্ধাদের চেষ্টা
চালাচ্ছে।লঞ্চডুবির ঘটনায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে স্ব স্ব জেলা
প্রশাসকের উদ্যোগে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
এছাড়া
পাটুরিয়া ঘাটে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে
একটি মেডিকেল সেন্টার খোলা হয়েছে । ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী গোয়ালন্দ কৃষি
অফিসের হেড ক্লার্ক তফসির জানান, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় তিনিসহ কেবিনের
বাইরে থাকা যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে অন্য লঞ্চ ও ট্রলারে উঠতে সক্ষম হন। তবে
লঞ্চের ভেতরে থাকা শতাধিক যাত্রী বের হতে পারেনি। এদের মধ্যে অনেকের
মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন তিনি।
তফসির
আরো জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকা থেকে আসা একটি কার্গো লঞ্চটির
মাঝখানে ধাক্কা দেয়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লঞ্চটি উল্টে ডুবে গেছে। খবর
পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে।