National news - তিস্তার পানি চুক্তির পক্ষে কাজ করব শেখ হাসিনাকে মমতা ব্যানার্জি




তিস্তার পানি চুক্তির পক্ষে কাজ করব
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরে তার রাজ্য সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি এবং দেশটির স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করি। এটি আমাদেরও দেশ, অতএব পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে যত শিগগির সম্ভব তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখব।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে দুই নেতা প্রায় আধা ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অর্থাত্ ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রথম বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতেও পরামর্শ দেন তিনি। মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থেই এই চুক্তি হবে।
মমতা ব্যানার্জি নির্দিষ্ট করে বলেছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এটি ইতিবাচকই হবে। তিনি স্থল সীমানা চুক্তি (এলবিএ) সম্পর্কে বলেছেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি লোকসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে। ইতিমধ্যেই বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছে। মমতা বলেন, যদিও বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার, তারপরও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখব। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি এবং লোকসভার আসন্ন অধিবেশনে বিলটি পাস করানোর জন্য আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।
২০১১ সালে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে তা আটকে যায়। আর স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরেও বিরোধিতা ছিল মমতার সরকারের।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনেক আগেই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে এবং তিনি ছিটমহলবাসীদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্মরণ করেন। জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছিটমহলবাসীদের দুর্ভোগের ব্যাপারে তিনি সচেতন। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন ছিটমহল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, সে কারণে আমাদের মধ্যে একটি মতৈক্য হয়েছে এবং আশা করি ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া লোকসভা অধিবেশনে এটি পাশ হবে। বৈঠক শেষে মমতা ব্যনার্জি বলেন, বাংলাদেশের আমন্ত্রণে অমর একুশে কর্মসূচিতে যোগদান করতে পেরে তিনি আনন্দিত। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি এই আমন্ত্রণ খুবই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সম্পর্ক গঙ্গা-যমুনার মতোই গভীর ও বিস্তৃত।
 
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বড়বোনের মতোই দেখেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীও মমতা ব্যানার্জিকে তাঁর ছোট বোনের মতোই দেখেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বয়সে ছোট ছিলেন এবং তিনি প্রায়ই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতেন। অমর গান শোনো একটি মুজিবরের কণ্ঠেতাঁর প্রিয় গান এ কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি এ গানের কয়েকটি লাইন গেয়ে শুনিয়েছেন।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের কাছেও মহান নেতা হিসেবে সম্মানিত। আওয়ামী লীগের সাথেও আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও বিস্তৃত করার প্রয়োজন রয়েছে। তনি স্পষ্টভাবে বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি ভূমিকা রাখব। 
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, মমতা ব্যানার্জি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের অংশগ্রহণে যৌথ সাংস্কৃতিক উত্সবের আয়োজন করতে একটি কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছেন। এই কমিটিতে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। মমতা বন্দোপাধ্যায় কমিটির জন্য তার মন্ত্রিসভা থেকে একজন মন্ত্রীকে মনোনয়ন দেবেন।
বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলকাতায় বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে পশ্চিমবঙ্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে এ ভবনটি নির্মিত হবে। মমতা বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার উদ্বোধনের জন্য কলকাতা সফরে যেতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান। মমতা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় কবির নামে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আমন্ত্রণ আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন দিকনির্দেশনা সংযুক্ত হয়েছে এবং এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে আসার ভিত্তি স্থাপিত হলো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এই সফরের মধ্যদিয়ে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মমতা ব্যানার্জি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নৌকার একটি ছবি উপহার দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার ছবি দেয়ার সময়ে প্রধানমন্ত্রী হেসে মমতাকে বলেন, নদীতে যেনো পানি থাকে। জবাবে মমতা বলেন, নদীতে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
মমতার সাত ঘোষণা
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি ঢাকা সফরকালে সাতটি ঘোষণা দিয়েছেন মমতা ব্যনার্জি। এর মধ্যে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে চিকিত্সার প্রয়োজনে যেসব বাংলাদেশি যাবেন তাদের জন্য কলকাতায় বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণ, প্রতিবছর দুই দেশের চলচ্চিত্র উত্সবের আয়োজন, সাংস্কৃতিক ও ধ্রুপদি সঙ্গীত উত্সব আয়োজন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা, যৌথ সাংস্কৃতিক কমিটি গঠন, ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে ৫০০ বই প্রদান এবং কলকাতার ৮ সেক্সপিয়ার স্বরণির (থিয়েটার রোড) অরবিন্দ ভবনকে মুজিবনগর সরকারের স্মৃতি ভবন হিসেবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। মমতা ব্যানার্জি সফরকালে এসব ঘোষণা দেন।
যমুনায় চা-চক্র
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মানে এক চা চক্রের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তুষারঝড়ে ফ্লাইট বিলম্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরতে দেরি হওয়ায় অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এই চা চক্রে মমতাকে আপ্যায়িত করেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডা. দীপু মনি এমপিসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে এক বৈঠক করেন। তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হন।  
মমতার ঢাকা ত্যাগ
তিনদিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল রাত সাড়ে ৯ টায় কলকাতার উদ্দেশে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন মমতা ব্যানার্জি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে বিদায় জানান। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts