Traveller news - নাফাখুমের জলছবি...

শুভ্র–সবুজে সুন্দর নাফাখুম, ছবি: লেখক

     
পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হবে রেমাক্রি খাল। আমরা যাচ্ছি নাফাখুম। কিছুদূর এগোতেই দলের একজনের ভয়ার্ত চিৎকার, ‘সাপ! সাপ!’ খালের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় আসলেই একটা সাপ! এঁকেবেঁকে যাচ্ছিল আমাদের গন্তব্যের দিকেই। একে তো পিচ্ছিল পাথর, তার ওপর এমন ‘ভ্রমণসঙ্গী’ আমাদের পথটা যেন আরও বৈরী করে তুলল! দলের গাইড সেলিম সাহস দিলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। সাপের ক্ষতি না করলে আমাদেরও ক্ষতি করবে না।’ সেলিমের কথা প্রমাণ করার জন্যই বুঝি সাপটা নিজের মতো চলে গেল গন্তব্যে। আমরাও নিরাপদে উঠে এলাম খালের ওপারে।
কেবল পানিতেই নয়, পাহাড়ি অঞ্চলের ডাঙ্গায়ও আছে নানান কিছিমের ‘ভয়ংকর’ জীব। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকরের তালিকায় সবার ওপরে থাকবে মশা আর জোঁক। তবে এমন ‘আপদ-বিপদের’ কথা এক নিমেষেই ভুলে যাবেন, যখন কানে বাজবে একটানা শোঁ শোঁ শব্দ। দলের একজন তো প্রায় চেঁচিয়েই উঠল, ‘নাফাখুম চলে এসেছি!’ মুহূর্তেই সবার মাঝে কিসের যেন প্রস্তুতি। প্রস্তুতি পর্ব সারতে না-সারতেই বিশাল শুভ্র-সবুজ এক সুন্দরের মুখোমুখি আমরা! অবিশ্রান্ত এক ঝরনা ঝরে পড়ছে পাহাড়ের চূড়া থেকে। দারুণ সুরেলা একটা শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে জলের কণা। রোদের আলোয় সৃষ্টি হচ্ছে সাতরঙা জলছবি। সবুজের মাঝে অন্য রকম রঙিন এক পৃথিবী।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়টায় নাফাখুমে অনেক পানি। পানির বেগও তাই প্রচণ্ড! গাইডের কড়া হুঁশিয়ারি, ‘এই পানিতে গোসল কইরেন না কিন্তু! উপরেও যাইবেন না।’ গাইডের ‘হুঁশিয়ারি’ উপেক্ষা করে কয়েকবার ঝরনার ওপরে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। বুঝলাম, নাফাখুম এখন আসলেই ‘ভয়ংকর’!
তবে ওই ভয়ংকর সুন্দর নাফাখুমের জলে পুরোপুরি না ভিজলেও ভোর ছয়টায় ট্রলারে চেপে শুরু করা যাত্রার ক্লান্তি কেটে গেল মনের অজান্তেই।
আমরা শুরুটা করেছিলাম বান্দরবানের থানচি উপজেলা থেকে। ট্রলারে সাধারণত থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। তবে মাঝপথে তিন্দু রাজাপাথর এলাকাটি ঘুরে দেখার মতো। বিশালাকৃতির অসংখ্য পাথর পড়ে আছে নদীতে। তার মধ্যে একটি রাজাপাথর অন্যটি রানিপাথর। আসার পথে নদীর ছন্দ, দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের মৌনতা আর হঠাৎ হঠাৎ আদিবাসীদের মুখ আমাদের মুগ্ধ করছিল বারবার। অবশেষে ট্রলার থামল রেমাক্রি বাজারে এসে। এখান থেকে পানির গভীরতা এতই কম যে ট্রলার চলার কোনো উপায় নেই। অগত্যা সেখান থেকে পুরোটাই হাঁটা পথ। ঘণ্টা দুয়েক রেমাক্রি খালের পাড় ধরে হেঁটে আসতে হয়েছে নাফাখুমে। সেই নাফাখুমে, যেখানে সবুজের মাঝে খেলা করে পৃথিবীর সব রং, সব সৌন্দর্য!
রেমাক্রি বাজার থেকে রেমাক্রি খালের পাড় বেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটলে দেখা মিলবে অনিন্দ্য সুন্দর নাফাখুম ঝরনা। 
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবানে যাওয়ার বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। তাদের মধ্যে শ্যামলী, হানিফ, ডলফিন, বিআরটিসি অন্যতম। বাসের ভাড়া নন এসি ৬২০ টাকা ও এসি ৮০০ টাকা। বান্দরবান থেকে বাসে কিংবা ফোরহুইল ড্রাইভ গাড়ি (চান্দের গাড়ি) দিয়ে যেতে হবে থানচি। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১৬০ টাকা। আর মানুষ বেশি হলে চান্দের গাড়ি নিয়ে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন থানচি উপজেলায়। সে ক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে গাড়িপ্রতি চার হাজার ৫০০ টাকা করে। থানচি থেকে ট্রলারযোগে যেতে হবে রেমাক্রি ঘাট। প্রতি ট্রলারের ভাড়া পড়বে দুই হাজার টাকা করে। তবে একা একা যেতে চাইলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা করে। রেমাক্রি বাজার থেকে রেমাক্রি খালের পাড় বেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটলে দেখা মিলবে অনিন্দ্য সুন্দর নাফাখুম ঝরনা। তবে থানচি থেকেই আপনাকে গাইডের সাহায্য নিতে হবে। গাইডের খরচ আলোচনা সাপেক্ষে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts