Fun news - খোলা চিঠি দিদির কাছে

তিস্তা নদীর ছবি (২০১৪ সালের মার্চ মাসে তোলা): মঈনুল ইসলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি: আউটলুক ইন্ডিয়া। ফটোশপে সম্পাদিত

     
প্রিয় দিদি,
আপনাদের চিত্রজগতের মানুষেরা বেশ স্বাস্থ্যসচেতন। তাঁদের প্রায় সবাই স্লিম, সাইজ জিরো ফিগারের অধিকারী। কিন্তু বাকি সবই যেন কেমন! আপনাদের পেঁয়াজ, রসুন আমাদের পেঁয়াজ, রসুনের তুলনায় বেশ স্বাস্থ্যবান। গরুগুলোও বেশ মোটাসোটা। এমনকি আপনাদের মসুরের ডাল পর্যন্ত আমাদের মসুরের ডালের দুই গুণ, তিন গুণ। আপনি হয়তো জানেন, আমরা কেবল মুরগি কেনার সময় দেশিটাকে প্রাধান্য দিই। তা ছাড়া আর সবকিছুতেই আমাদের বিদেশপ্রীতি। তাই আমরা সারা বছর আপনাদের স্বাস্থ্যবান পেঁয়াজ, রসুন, চাল, ডাল, নুন—সব আমদানি করি। ঈদ এলে আমদানি করি পাখি ড্রেস, কুমকুম শাড়ি। পাখি ড্রেস না পেলে সংসারে আমদানি হয় অশান্তি। গরু আমদানি করি হাজারে হাজারে। তবে গরুর চামড়া আবার ঠিকই চলে যায় আপনাদের ওখানেই। গরু মেরে চামড়া দান যাকে বলে আরকি! পেটের খোরাকের চ্যানেল পাল্টে মনের খোরাকের চ্যানেলে যাই। এই চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের বইয়ের বাজারে আপনাদের লেখকেরা আসেন। সঙ্গে তাঁদের বই। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাদের গায়ক আসেন, সঙ্গে আসে গান। আজকাল সিনেমা হলগুলোতে আপনাদের চলচ্চিত্রও আসতে শুরু করেছে। এই দেশে ‘আশা’ এবং ‘আসা’র কোনো শেষ নেই!
দিদি, আপনি হয়তো জানেন, আমাদের টিভি রুমে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অটোমেটিক চলে আসে আপনাদের টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালের ঢেউ। সেই ঢেউয়ে ভেসে ভেসে কেউ কাঁদে, কেউ হাসে! আর সেই ঢেউয়ের সঙ্গে চুপি চুপি চলে আসে আপনাদের সিরিয়ালের কাহিনির মতো জীবনধারা। ঘুমের মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে কেউ কেউ চিৎকার করে ওঠে, ‘নেহি, ইয়ে কাভি নেহি হো সাকতা!’ টিভির রুম ছেড়ে আসি খেলার মাঠে। আমরা না গেলেও আপনাদের ক্রিকেট দল আমাদের মাঠে খেলতে আসে। আমাদের ডাকলে নাকি আপনাদের ‘স্ট্যাটাস’ থাকে না! ফেসবুক থাকতে এই জমানায় স্ট্যাটাস নিয়ে এত দুশ্চিন্তা আর কেউ করে বলে জানা নেই আমাদের! যা হোক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্ষা মৌসুমে আপনাদের দেশ থেকে তেড়ে আসে বন্যার পানি! সে পানিতে ভেসে যাই আমরা, ভেসে যায় খেতের ফসল, সোনালি স্বপ্ন।
কিন্তু দিদি, আমরা যখন পানিতে ভেসে যেতে চাই, তখন তো পানির দেখা পাই না! আপনাদের দেওয়া বাঁধের ফলে আমাদের তিস্তা নদী আজ মৃতপ্রায়। বাংলা সিনেমায় এত দিন মরুভূমির দৃশ্য দেখা যেত না। হয়তো খুব বেশি দেরি নেই, যেদিন আমরাও তিস্তার বুকে মরুভূমির শুটিং করতে শুরু করব। ভিনদেশ থেকে হয়তো পর্যটক আসবে বাংলাদেশের মরুভূমি দেখতে! এতে করে হয়তো পর্যটনে আমরা বেশ এগিয়েও যাব! তবে সেই এগিয়ে যাওয়ায় আমাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই! আপনি বলেছেন আপনার ওপর ভরসা রাখতে। কিন্তু সেটা কত দিন? আশা করি, পত্রপাঠ সেটা জানাবেন।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts