প্রকৃতিবিষয়ক
লাইব্রেরি নওয়াজেশ নলেজ সেন্টার থেকে হুট করেই আয়োজন ছিল এবার। জানলাম,
সবাই মিলে ঘুরতে যাবে আড়িয়াল বিলে। নিমেষেই চোখের সামনে ভেসে উঠল ঢেউহীন
এক পানির রাজ্য, যেখানে টলটলে জল-জঙ্গলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শাপলা ফুলের
কলি। আর আকাশজুড়ে মেঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ছে নাম না-জানা পাখিরা।
কল্পনার সব রং একত্র করে রাজি হয়ে গেলাম এই ভ্রমণে। জীবনে কখনো
বিল-না-দেখা আমার চোখে তখন নতুন কিছুর তৃষ্ণা। অবশেষে সেই আগ্রহের চূড়ান্ত
পরিণতি ঘটল গত সপ্তাহে।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাটের গাড়িতে উঠে শহর-নগর-নদী পেরিয়ে দুপাশের সবুজ মাঠে চোখ বুলাতে বুলাতেই চলে এল শ্রীনগর বাজার। পানিতে থই থই করছে শ্রীনগর বাজারের চারপাশ। কালভার্টের নিচ দিয়ে বিলের দিকে ছুটছে খালের পানি। সেদিকে তাকিয়েই মনটা আনন্দে নেচে উঠল; অনেক পানি পাওয়া যাবে তাহলে। ভেজবাজার নামের এক জায়গা থেকে ট্রলার নিলাম। দিনচুক্তি ভাড়া। আমাদের বিকেলে আবার এখানে নামিয়ে দেবে।
ট্রলারঘাট থেকে ছোট্ট একটা খাল পেরিয়ে যেতে হয় মূল বিলে। শুরুর দিকের পানিটুকু অনেক ঘোলা। কিছুদূর পেরোতেই বদলে যেতে থাকে দুপাশের দৃশ্যপট। সবুজের মিছিলে একটু একটু করে জানান দিতে থাকে নীলচে পানির ছটা। সেই পানির ওপর কমা-দাঁড়ি-সেমিকোলনের মতো সাদাটে মেঘের আনাগোনা! চোখের সামনে শুধু সবুজ কলমিশাক আর নীলচে পানি। একসময় অজানা লতায় আটকে গেল আমাদের ট্রলারের প্রপেলার। একটুখানি বিরতি। এর পরই আবার যখন ট্রলার চলা শুরু হলো, তখন ঠিক চোখের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সুন্দরের কারখানা। একটা বাঁক পেরোতেই চোখে পড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য! অগণিত কচুরিপানাকে একত্র করে নৌকা বানিয়ে ফেলেছেন একজন। বিশাল এক বাঁশ নিয়ে সেই নৌকা চালিয়েও নিয়ে যাচ্ছেন! আরেকটা বাঁক পেরোতেই শুরু হলো দিনের সবচেয়ে ভালো লাগা মুহূর্তগুলোর। খোলা জলাপ্রান্তর পেরোতে পেরোতে হঠাৎ ঢুকি কচুরিপানার জঙ্গলে। সেখান থেকে বের হয়েই শাপলা ফুলের অরণ্যে গিয়ে পড়ি। হাঁচড়েপাঁচড়ে শাপলা তুলে তার ডাঁটায় এক কামড় বসাতে না বসাতেই চোখের সামনে এসে পড়ে একটা হিজলগাছ। তার ওপরে আবার ভুবনচিলের পাখা গুটিয়ে বসে থাকা, সাদা বকের খেয়ালি ওড়াউড়ি।
এলোমেলো পানি পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই সামনে পড়ল টলটলে পানি। সেই পানির ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য ছিল না আমাদের কারোই। যে কয়টা লাইফজ্যাকেট আনা হয়েছিল, তা-ই গায়ে চড়িয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রলারের এমাথা-ওমাথা থেকে!
এবারে গন্তব্য ‘গাঁধিঘাট’। পেটভরা খিদে নিয়ে ঘাটে উঠে দেখি ত্রিসীমানায় কোনো হোটেল নেই। অনেক হেঁটে একজনকে পেলাম। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, এখানে ভাত পাওয়া যাবে কোথায়? তিনি হাত নেড়ে বললেন, নেই। এখানে কিচ্ছু পাওয়া যায় না। বিলের মধ্যে খোলা আসমানের নিচে নৌকার ওপরে মাছ-ভাত খাওয়ার স্বপ্ন ততক্ষণে শরতের মেঘের মতোই মিলিয়ে গেছে। রাক্ষুসে খিদে পেটে নিয়ে ছুট লাগালাম মাওয়া ঘাটের দিকে। পাঁচটা ইলিশ চলে গেল আমাদের পেটে। এরপর পেটে হাত বুলানো, ঘুমে চোখ জড়ানো আর ক্লান্ত-অবসন্ন দেহ নিয়ে চোখ বুজে শহরের উদ্দেশে রওনা। চোখের পাতায় এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ভুবনচিলের ওড়াউড়ি আর চিংড়ির দৌড়ঝাঁপ। নদী-খাল আর সাগর দেখা শেষে এবার স্মৃতিতে গেঁথে রাখলাম বাংলাদেশের একটা ‘বিল’।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আড়িয়াল বিলে এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ‘ইলিশ’ গাড়িতে করে মাওয়া ফেরিঘাটের দিকে রওনা দেবেন। মাঝপথে শ্রীনগরের ভেজবাজারে নেমে পড়বেন। ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা করে। সেখান থেকে ভালো একটা ট্রলার দেড় হাজার টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসুন আড়িয়াল বিল। একটা জিনিস বুকের মধ্যে গেঁথে নিয়ে যাবেন, এ দেশের সবকিছুই আমাদের। কাজেই এগুলো কোনোভাবেই আমরা নষ্ট করব না। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন ও অপচনশীল কিছু ফেলব না। আমি যে সৌন্দর্য দেখার জন্য এখানে ছুটে এসেছি, আমার ছোট ভাই, সন্তান যেন কয়েক দশক পরও এখানে এসে ঠিক আমার মতো করেই চোখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলতে পারে, ‘দেখো দেখো, আমাদের বাংলাদেশ কী সুন্দর!’
ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাটের গাড়িতে উঠে শহর-নগর-নদী পেরিয়ে দুপাশের সবুজ মাঠে চোখ বুলাতে বুলাতেই চলে এল শ্রীনগর বাজার। পানিতে থই থই করছে শ্রীনগর বাজারের চারপাশ। কালভার্টের নিচ দিয়ে বিলের দিকে ছুটছে খালের পানি। সেদিকে তাকিয়েই মনটা আনন্দে নেচে উঠল; অনেক পানি পাওয়া যাবে তাহলে। ভেজবাজার নামের এক জায়গা থেকে ট্রলার নিলাম। দিনচুক্তি ভাড়া। আমাদের বিকেলে আবার এখানে নামিয়ে দেবে।
ট্রলারঘাট থেকে ছোট্ট একটা খাল পেরিয়ে যেতে হয় মূল বিলে। শুরুর দিকের পানিটুকু অনেক ঘোলা। কিছুদূর পেরোতেই বদলে যেতে থাকে দুপাশের দৃশ্যপট। সবুজের মিছিলে একটু একটু করে জানান দিতে থাকে নীলচে পানির ছটা। সেই পানির ওপর কমা-দাঁড়ি-সেমিকোলনের মতো সাদাটে মেঘের আনাগোনা! চোখের সামনে শুধু সবুজ কলমিশাক আর নীলচে পানি। একসময় অজানা লতায় আটকে গেল আমাদের ট্রলারের প্রপেলার। একটুখানি বিরতি। এর পরই আবার যখন ট্রলার চলা শুরু হলো, তখন ঠিক চোখের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সুন্দরের কারখানা। একটা বাঁক পেরোতেই চোখে পড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য! অগণিত কচুরিপানাকে একত্র করে নৌকা বানিয়ে ফেলেছেন একজন। বিশাল এক বাঁশ নিয়ে সেই নৌকা চালিয়েও নিয়ে যাচ্ছেন! আরেকটা বাঁক পেরোতেই শুরু হলো দিনের সবচেয়ে ভালো লাগা মুহূর্তগুলোর। খোলা জলাপ্রান্তর পেরোতে পেরোতে হঠাৎ ঢুকি কচুরিপানার জঙ্গলে। সেখান থেকে বের হয়েই শাপলা ফুলের অরণ্যে গিয়ে পড়ি। হাঁচড়েপাঁচড়ে শাপলা তুলে তার ডাঁটায় এক কামড় বসাতে না বসাতেই চোখের সামনে এসে পড়ে একটা হিজলগাছ। তার ওপরে আবার ভুবনচিলের পাখা গুটিয়ে বসে থাকা, সাদা বকের খেয়ালি ওড়াউড়ি।
এলোমেলো পানি পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই সামনে পড়ল টলটলে পানি। সেই পানির ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য ছিল না আমাদের কারোই। যে কয়টা লাইফজ্যাকেট আনা হয়েছিল, তা-ই গায়ে চড়িয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রলারের এমাথা-ওমাথা থেকে!
এবারে গন্তব্য ‘গাঁধিঘাট’। পেটভরা খিদে নিয়ে ঘাটে উঠে দেখি ত্রিসীমানায় কোনো হোটেল নেই। অনেক হেঁটে একজনকে পেলাম। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, এখানে ভাত পাওয়া যাবে কোথায়? তিনি হাত নেড়ে বললেন, নেই। এখানে কিচ্ছু পাওয়া যায় না। বিলের মধ্যে খোলা আসমানের নিচে নৌকার ওপরে মাছ-ভাত খাওয়ার স্বপ্ন ততক্ষণে শরতের মেঘের মতোই মিলিয়ে গেছে। রাক্ষুসে খিদে পেটে নিয়ে ছুট লাগালাম মাওয়া ঘাটের দিকে। পাঁচটা ইলিশ চলে গেল আমাদের পেটে। এরপর পেটে হাত বুলানো, ঘুমে চোখ জড়ানো আর ক্লান্ত-অবসন্ন দেহ নিয়ে চোখ বুজে শহরের উদ্দেশে রওনা। চোখের পাতায় এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ভুবনচিলের ওড়াউড়ি আর চিংড়ির দৌড়ঝাঁপ। নদী-খাল আর সাগর দেখা শেষে এবার স্মৃতিতে গেঁথে রাখলাম বাংলাদেশের একটা ‘বিল’।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আড়িয়াল বিলে এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ‘ইলিশ’ গাড়িতে করে মাওয়া ফেরিঘাটের দিকে রওনা দেবেন। মাঝপথে শ্রীনগরের ভেজবাজারে নেমে পড়বেন। ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা করে। সেখান থেকে ভালো একটা ট্রলার দেড় হাজার টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসুন আড়িয়াল বিল। একটা জিনিস বুকের মধ্যে গেঁথে নিয়ে যাবেন, এ দেশের সবকিছুই আমাদের। কাজেই এগুলো কোনোভাবেই আমরা নষ্ট করব না। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন ও অপচনশীল কিছু ফেলব না। আমি যে সৌন্দর্য দেখার জন্য এখানে ছুটে এসেছি, আমার ছোট ভাই, সন্তান যেন কয়েক দশক পরও এখানে এসে ঠিক আমার মতো করেই চোখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলতে পারে, ‘দেখো দেখো, আমাদের বাংলাদেশ কী সুন্দর!’