Traveller news - নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা কবে?

ভাটার সময় পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সৈকতে দড়ি দিয়ে সীমানা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা অতিক্রম করে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে গোসল করছেন পর্যটকেরা। গতকাল লাবণী পয়েন্ট থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

     
সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদ্রের পানিতে নামুন—নির্দেশনাই সার। সাঁতার জানা বা না জানা কোনো পর্যটকই সৈকতে লাইফ জ্যাকেটের দেখা পাবেন না। অথবা ‘লাল পতাকা উড়তে দেখলে সমুদ্রে নামবেন না’—দিব্যি হেঁটে যে কেউ পানিতে নামতে পারবেন। বালুচর পেরিয়ে পানিতে নামা পর্যন্ত কোথাও লাল পতাকার নিশানাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। লাবণী পয়েন্ট (সুইমিং জোন) দিয়েই সাধারণত পর্যটকেরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যান। সৈকতে যাওয়ার পথে নানা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড তাঁদের চোখে পড়বে। কিন্তু গোসল করতে নেমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। সৈকতের নিরাপত্তাব্যবস্থাও ঢিলেঢালা। আছে পর্যটকদের খামখেয়ালিপনা ও নিষেধাজ্ঞা না মানার প্রবণতা।
সরেজমিনে ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় সুইমিং জোনে গিয়ে দেখা যায়, আটজন উদ্ধারকর্মী বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সতর্ক করছেন। দড়ি দিয়ে যে সীমানাপ্রাচীর করা হয়েছে, তা অতিক্রম করে কোনো পর্যটক যাতে গভীর সমুদ্রে চলে না যান। কিন্তু বাঁশির সুর মিলিয়ে গেল ঢেউয়ের গর্জনে। পর্যটকদের অনেকেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে দড়ি ডিঙিয়ে গভীর সমুদ্রে গোসল করায় তখনো ব্যস্ত। এমনকি নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে সি-গাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও শত শত পর্যটক ঝুঁকি নিয়ে গোসল করছেন।
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্ধারকর্মী খোরশেদ আলম (৩০) বলেন, ‘সুইমিং জোন ছাড়া অন্য সৈকতে গোসল করা নিষিদ্ধ করা হলেও পর্যটকেরা মোটেও আমাদের কথা শোনেন না। বাধা দিলে ধাক্কা মেরে সাগরে ঝাঁপ দেন। অনেকে ভাটার টানে হারিয়ে যাচ্ছেন। গত ১২ দিনে দুই তরুণীসহ ১৬ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে।’
সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর সৈকতের সি-ইন পয়েন্টে গোসল করতে নেমে মারা যান ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ(২৫)। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গোসল করতে নেমে মারা যান ঢাকার আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্র মানফেজুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, শাহরিয়ার ইসলাম, গোলাম রহিম, ইতশিয়াক বিন মাহমুদ ও সাব্বির হাসান।
সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ‘ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের’ পরিচালক ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডুবুরি মোস্তফা কামাল বলেন, গত ১৩ বছরে সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা থেকে তাঁরা (ডুবুরিরা) ৮৫ জন পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি পর্যটককে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ২০১১ সালের ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গোসল করতে নেমে মারা যান ক্লোজআপ ওয়ান শিল্পী আবিদ শাহরিয়ারসহ মাত্রার তিন কর্মকর্তা। এর পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন পর্যটকদের নিরাপদ গোসল, সৈকতে বিচ বাইক, স্পিডবোট ও ঘোড়া চলাচল নিষিদ্ধ করাসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনোটির বাস্তবায়ন হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেন, লাবণী পয়েন্টের সুইমিং জোনের নির্দিষ্ট একটি অংশকে বিশেষ জাল দিয়ে ঘিরে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজটি শেষ করা যাচ্ছে না।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts