রোজকার
কাজ শেষে ফেসবুক খুলতেই ওয়ালে দেখি ঝরনাধারা। ছবিটির বিবরণ পড়ে আরও অবাক
হলাম। চট্টগ্রাম শহরের এত কাছে, অথচ এর কথা জানতে পারিনি। মন চাইছিল তখনই
গিয়ে দেখে আসি।
আলোকচিত্রী বন্ধু রাজীবকে নিয়ে রওনা হলাম পরের দিন। গন্তব্য খইয়াছড়া ঝরনা। রাত আটটায় রওনা দিয়ে দেড় ঘণ্টা পর মিরসরাই বাজারে পৌঁছালাম। সেখানে সাংবাদিক পলাশ মাহবুবের বাসায় রাতটা কাটিয়ে খুব ভোরে রওনা হব আমরা। ছবি তোলার জন্য ভোরের আলো চাইছিলাম আমরা।
ভোর চারটা ২০ মিনিটে রওনা হলাম খইয়াছড়ার পথে। যত দূর গাড়ির রাস্তা আছে, তত দূর আমাদের মোটরবাইকে এগিয়ে দেবেন পলাশ। যাওয়ার পথে মোরগের ডাক শুনে আশঙ্কা জাগল, আমরা পৌঁছানোর আগেই ভোর তার রূপ হারাবে। হালকা ঠান্ডা বাতাসে মিনিট পনেরো যাওয়ার পর একটি বাঁশের সাঁকোর সামনে গাড়ি থামল। এরপর হেঁটে যেতে হবে। শুরু হলো আমাদের পায়ে চলা।
চোখ যে দিকে যায়, অন্ধকার আর অন্ধকার, কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রাজীবকে বললাম, ‘ভয় নেই, আমার মুঠোফোনের আলো ধরেই এগুনো যাক।’ সাঁকো পার হওয়ার পর একটু যেতেই দেখলাম রাস্তাটা দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে। কোন দিকে যাব, বুঝতে না পেরে ফোন করলাম পলাশ ভাইকে। তিনি আমাদের সহজ একটা পথের কথা জানালেন। মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে সামনে এগোতেই দেখলাম ফসলি জমি। খেতে আইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম জমিতে অসংখ্য কাকতাড়ুয়া। জোনাকি পোকার শব্দ, একটু দূরে ছড়ার পানি গড়িয়ে পড়ার ছল ছল শব্দ আর কাকতাড়ুয়ার অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা—সব মিলিয়ে কেমন একটা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করল। তবে ঝোপজঙ্গল আর কাঁটায় ছেয়ে থাকা অন্ধকার পথও তুচ্ছ মনে হলো। জলের শব্দ শুনতে শুনতে এগোচ্ছিলাম। যতই সামনে এগোচ্ছি, শব্দ ততই তীব্র হচ্ছে। অনেক্ষণ এগোনোর পর উঁচু পাহাড়। তার ঢাল বেয়ে উঠতেই দেখলাম একটু দূরে সরু দুধসাদা রেখা নিচের দিকে নেমে গেছে। শব্দ শুনে বুঝতে দেরি হলো না এটি পাহাড়ের জলধারা। সামনে এগোতে এগোতে জলের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে জলের ধারাটাও বড় হতে লাগল। কিন্তু যেমনটি আশা করা গিয়েছিল, ততটা বড় নয় ঝরনাটি। এটাই কি খইয়াছড়া ঝরনার মূলধারা? ছবিতে কি এটাই দেখেছিলাম? কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর মন ভরল না। আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা।
আলোকচিত্রী বন্ধু রাজীবকে নিয়ে রওনা হলাম পরের দিন। গন্তব্য খইয়াছড়া ঝরনা। রাত আটটায় রওনা দিয়ে দেড় ঘণ্টা পর মিরসরাই বাজারে পৌঁছালাম। সেখানে সাংবাদিক পলাশ মাহবুবের বাসায় রাতটা কাটিয়ে খুব ভোরে রওনা হব আমরা। ছবি তোলার জন্য ভোরের আলো চাইছিলাম আমরা।
ভোর চারটা ২০ মিনিটে রওনা হলাম খইয়াছড়ার পথে। যত দূর গাড়ির রাস্তা আছে, তত দূর আমাদের মোটরবাইকে এগিয়ে দেবেন পলাশ। যাওয়ার পথে মোরগের ডাক শুনে আশঙ্কা জাগল, আমরা পৌঁছানোর আগেই ভোর তার রূপ হারাবে। হালকা ঠান্ডা বাতাসে মিনিট পনেরো যাওয়ার পর একটি বাঁশের সাঁকোর সামনে গাড়ি থামল। এরপর হেঁটে যেতে হবে। শুরু হলো আমাদের পায়ে চলা।
চোখ যে দিকে যায়, অন্ধকার আর অন্ধকার, কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রাজীবকে বললাম, ‘ভয় নেই, আমার মুঠোফোনের আলো ধরেই এগুনো যাক।’ সাঁকো পার হওয়ার পর একটু যেতেই দেখলাম রাস্তাটা দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে। কোন দিকে যাব, বুঝতে না পেরে ফোন করলাম পলাশ ভাইকে। তিনি আমাদের সহজ একটা পথের কথা জানালেন। মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে সামনে এগোতেই দেখলাম ফসলি জমি। খেতে আইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম জমিতে অসংখ্য কাকতাড়ুয়া। জোনাকি পোকার শব্দ, একটু দূরে ছড়ার পানি গড়িয়ে পড়ার ছল ছল শব্দ আর কাকতাড়ুয়ার অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা—সব মিলিয়ে কেমন একটা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করল। তবে ঝোপজঙ্গল আর কাঁটায় ছেয়ে থাকা অন্ধকার পথও তুচ্ছ মনে হলো। জলের শব্দ শুনতে শুনতে এগোচ্ছিলাম। যতই সামনে এগোচ্ছি, শব্দ ততই তীব্র হচ্ছে। অনেক্ষণ এগোনোর পর উঁচু পাহাড়। তার ঢাল বেয়ে উঠতেই দেখলাম একটু দূরে সরু দুধসাদা রেখা নিচের দিকে নেমে গেছে। শব্দ শুনে বুঝতে দেরি হলো না এটি পাহাড়ের জলধারা। সামনে এগোতে এগোতে জলের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে জলের ধারাটাও বড় হতে লাগল। কিন্তু যেমনটি আশা করা গিয়েছিল, ততটা বড় নয় ঝরনাটি। এটাই কি খইয়াছড়া ঝরনার মূলধারা? ছবিতে কি এটাই দেখেছিলাম? কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর মন ভরল না। আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা।
টানা ২০-২৫ মিনিট হাঁটার পর আশপাশে সবকিছু একটু পরিষ্কার
হতে লাগল। পাহাড়ের সবুজ বেষ্টনী ভেদ করে সকালের আলো উঁকি দিয়েছে। জোনাকির
ডাক বন্ধ হয়েছে, তার স্থান দখল করে নিয়েছে পাখির কিচিরমিচির। একটু যেতেই
থমকে দাঁড়ালাম দুজন। গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে ৩০-৩৫ ফুট উঁচু
থেকে গড়িয়ে পড়া জলরাশি। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই
মুখের ভাষা হারিয়ে গেল। এমন ঝরনাও তবে আছে! লোকালয়ের এত কাছেই! বিস্ময়
কাটতেই শুরু হলো ছবি তোলা। দুজন অন্য সবকিছু ভুলে পাল্লা দিয়ে ছবি তুলেছি।
কখন যে ঘণ্টা দুয়েক সময় চলে গেছে, টেরও পাইনি।
একসময় রোদ এসে পড়ল ঝরনার ছিটকে পড়া জলের ওপর। দেখে মনে
হয়, অসংখ্য হীরা শব্দ করে গড়িয়ে পড়ছে নিচের দিকে। এরপর আর একটু ওপরে
উঠলে স্তরে স্তরে সাজানো তিনটি ছোট ঝরনার দেখা মেলে। আর জল পড়ার শব্দও যে
কত বিচিত্র হতে পারে, তা এখানে না এলে জানা হতো না। কোথাও ছলছল, কোথাও
কলকল, ঝিমঝিম, ফুটফুট, ফটফট কত অদ্ভুত শব্দেই যে তাকে অনুবাদ কারা যায়!
যাওয়ার সময় যেসব আমাদের চোখে পড়েনি, ফিরতি পথে ভোরের
আলোয় তা দেখে অবাক হতে হলো। পাহাড়ের গায়ে নানা ঝোপে ফুটে আছে রং-বেরঙের
ফুল। তার চারপাশে প্রজাপতির দল। পাহাড়ের বাধা পেরিয়ে ক্ষণে ক্ষণে উঁকি
দেওয়া সূর্যের আলোতে ছোটাছুটি করছিল কাঠবিড়ালিরা।
ছোট একটা দোকানে রুটি-সবজি আর কলা দিয়ে তৃপ্তি করে নাশতা
সারা গেল। সকাল ১০টার মধ্যেই আমরা ফিরলাম বাজারে। হাতে অনেক সময় আছে।
কোথায় যাওয়া যায়! ফোনে পলাশ মাহবুব জানালেন এখানে মহামায়া লেক ও মুহুরি
সেচ প্রকল্পের কথা। আর দেরি না করে রওনা হলাম মহামায়ার দিকে। সেখানে
পৌঁছানোর পর ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ঘুরলাম লেকের বিভিন্ন জায়গায়। এখানেও
পাহাড়ের গায়ে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝরনার দেখা পাওয়া গেল। লেকের পানিতে
শত শত পানকৌড়ির মাছ শিকার, সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নৌকা চলে যাওয়ার দৃশ্য সব
মিলে যেন একটি ছবি।
যেভাবে যাবেন
বাসযোগে মিরসরাই নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে
খইয়াছড়ায় যেতে হবে। এরপর চার থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে ঝরনায় পৌঁছাতে হয়।
আবার ওই স্থান থেকে অটোরিকশাযোগে মহামায়া লেক ও মুহুরি সেচ প্রকল্পে
যাওয়া যায়। শীতের এই সময়টাতেও ঝরনায় পানি আছে। এ সময় রাস্তাও ভালো
থাকে।