Economy News - এখনো দরিদ্র চার কোটি মানুষ

     
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য  ,দারিদ্র্য কমার চিত্র 
বাংলাদেশে এখনো ৩ কোটি ৮৫ লাখ দরিদ্র মানুষ রয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রায় এক দশকের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি কমেছে। দারিদ্র্যের হার কমানো বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে সারা বিশ্বেই সমাদৃত।সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের হারের সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
জিইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
জিইডির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৯৯২ সালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে যত লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে, এর প্রায় ৪৫ শতাংশই বর্তমান সরকারের বিগত পাঁচ বছরে।
উল্লেখ্য, খানা আয় ও ব্যয় জরিপ করে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্য পরিস্থিতির হালনাগাদ এ তথ্য তৈরি করেছে জিইডি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের পূর্বশর্ত। প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দারিদ্র্য বিমোচন পুরোপুরি করা যাবে না। গরিব মানুষের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।’ তাঁর মতে, তাদের (গরিব মানুষ) শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেই হবে না। তাদের দক্ষও করে তুলতে হবে, যাতে বাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। এ জন্য শিক্ষা, পুষ্টি খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিনায়ক সেন মনে করেন, শুধু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমেও পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব নয়। এটি সাময়িক উদ্যোগ। তবে গরিব মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও রাষ্ট্রের বিনিয়োগ—এমন সব উদ্যোগই সমন্বিতভাবে করতে হবে।
জিইডির সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ বছরে দারিদ্র্য বিমোচনের ধারাবাহিকতা ধরে জিইডি এ হিসাব প্রাক্কলন করেছে। বিশ্বব্যাংকও এ হিসাব আমলে নিয়েছে।
দরিদ্র ও হতদরিদ্র কারা—এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে শামসুল আলম জানান, মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় পদ্ধতি অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ২১২২ ক্যালরি খাদ্য খেতে হয়। এর জন্য যে পরিমাণ আয় করতে হবে, ওই ব্যক্তি যদি সেই আয় করতে সক্ষম না হন, তবে তিনি দরিদ্র। সেই হিসাবে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে হলে বর্তমান বাজারে একজন ব্যক্তিকে মাসে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা আয় করতে হবে। অন্যদিকে হতদরিদ্র বলতে যে ব্যক্তি দৈনিক ১৮০৫ ক্যালরি খাদ্য কেনার অর্থ সংস্থান করতে পারেন না তাঁকে বোঝানো হয়। সেই হিসাবে, হতদরিদ্র ব্যক্তিরা মাসে ১ হাজার ৬০০ টাকার কম আয় করেন।
বিগত সব সরকারই দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বা প্রকল্প নিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের কৃতিত্ব ক্ষমতাসীন সব সরকারের। তবে বিগত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে দারিদ্র্যের হার কমার প্রবণতার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জিইডি প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে। শতাংশীয় পয়েন্টে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দারিদ্র্যের হার কত কমেছে তা উল্লেখ করেনি জিইডি। উল্লেখ্য, ওই দুই বছরে (২০০৭ ও ২০০৮) শতাংশীয় পয়েন্টে দারিদ্র্য কমেছে ৫ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদকালে দারিদ্র্যের হার ৩৩ দশমিক ৪ থেকে ২৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। এ সময়ে দারিদ্র্য কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর ২০১৪ সালে দারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে।
জিইডির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্য হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। দেশের ৬৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ এখনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর একটির সুবিধাও পায় না। সেই হিসাবে, ২ কোটি ৪৬ লাখ গরিব মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। এ হিসাবও পরিকল্পনা কমিশনের।
পরিকল্পনা কমিশনের তৈরি করা স্থায়ী জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলের (এনএসপিএস) খসড়ায় এ তথ্য রয়েছে। বর্তমানে ১০২টি কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো—বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, উপবৃত্তি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ভার্নারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ)।
তবে কত মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পায়—এর কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। কেননা, একজন সুবিধাভোগী একাধিক সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১০-এর হিসাবে, দেশের সাড়ে ২৪ শতাংশ পরিবার অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা পায়।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts