আমি প্রথমে একজন সাধারণ উদ্যোক্তা ছিলাম। এরপর কোটিপতি হয়েছি। আর এখন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছি। আমার সামাজিক পরিচিতি বদল হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনে ও অভ্যাসেও কমবেশি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি অভ্যাস আজও অপরিবর্তিত থেকে গেছে। সেটা বই পড়ার অভ্যাস। আমি যখন শুধু একজন উদ্যেক্তা ছিলাম, তখন প্রতি সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। যখন উদ্যোক্তা থেকে কোটিপতি বনে গেলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। এরপর যখন মানবাধিকারকর্মী হলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়ি। বিভিন্ন সময়ে পড়া আমার কয়েকটি প্রিয় বইয়ের কথা আজ আমি বলব। আমি মনে করি এই বইগুলো প্রত্যেকেরই পড়া উচিত।
ট্যাপ ড্যান্সিং টু ওয়ার্ক
এটা ওয়ারেন বাফেটকে নিয়ে লেখা বই। ক্যারল লুমিসের ট্যাপ ড্যান্সিং টু ওয়ার্ক বইটি যে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তার মনের ভেতর অবশ্যই দুটি বিষয় খোদাই হয়ে যাবে। এক. কীভাবে বাফেট তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছালেন এবং তাঁর ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় বিনিয়োগনীতি কী ছিল। দুই. জানা যাবে ব্যবসা সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ।
১৯৯৬ সালে আমি এক লেখায় লিখেছিলাম যে এমন কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি, যাঁর ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আছে। এখন পর্যন্ত আমার পর্যবেক্ষণ বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি। ব্যবসার কলাকৌশল সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। সুতরাং ব্যবসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ ধারণা পেতে হলে এই বইটি পড়া জরুরি।
মেকিং দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ডভ্যাস্লাভ স্মিল পেশায় পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। তাঁর বেশির ভাগ বই জ্বালানি ও পরিবেশ নিয়ে। আপনাদের মনে হতে পারে মেকিং দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড বুঝি জাগতিক কোনো বিষয় নিয়ে লেখা বই। আসলে তা নয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু প্রয়োজন আর আমরা কতটুকু ব্যবহার করি, তা নিয়ে এই বই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রে ও অন্যান্য ধনী দেশে গত ১০০ বছরে কীভাবে মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত হয়েছে। আমরা এখন চাই, এমন একটি দৈব ঘটনা ঘটুক, যার মাধ্যমে পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে মানবতার সব জায়গা আমরা দখলে নিতে পারব। তার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, আমরা আসলে কোথায় চলেছি? আমাদের গন্তব্য কোনখানে? এই বই-ই হতে পারে সেই জানার খুব চমৎকার একটি উৎস।
দ্য সিক্সথ এক্সটিংশনপরিবেশ বিজ্ঞানীরা এটা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে পাঁচটি বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। আর এিলজাবেথ কোলবার্ট তাঁর এই বইয়ে মানুষের এমন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, যা আসলে পৃথিবীর ইতিহাসে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ষষ্ঠ ঘটনা।
স্ট্রেস টেস্টটিমোথি গাইথনার একবার এক মানুষের ছবি আঁকেন, যেখানে দেখা গেল মানুষটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। একই সময় দেখা গেল প্রশাসনও ভেতরে-বাইরে সমালোচনার যুদ্ধে লিপ্ত। অর্থনৈতিক মন্দার রাজনৈতিক যুদ্ধটা বরবারই খুব কুৎসিত হয়। কিন্তু জনগণ যদি এ বিষয়ে (অর্থনৈতিক মন্দা) একটুখানি জ্ঞান রাখে, তাহলেই ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। স্ট্রেস টেস্ট নিঃসন্দেহে এই জ্ঞানার্জনে সহায়তা করবে।
দ্য বেটার অ্যাঞ্জেলস অব আওয়ার নেচারআমি এ পর্যন্ত যতগুলো বই পড়েছি তার মধ্যে এই বইটিকে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। মানুষ যে ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত কম সহিংস এবং অধিকতর মানবিক হয়ে উঠছে, স্টিভেন পিংকার এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ হাজির করেছেন। আর সহিংস অবস্থা থেকে মানবিক অবস্থায় উত্তরণের যে প্রচলন শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে, তা আজও অব্যাহত আছে।
বইটিতে এই মানবিক বিষয়ের ওপরেই তুলনামূলকভাবে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে খুবই আশাবাদী একজন মানুষ। বইটি আমাকে ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের কলাকৌশল নিয়ে চিন্তা করার খোরাক জুগিয়েছে।
দ্য ম্যান হু ফেড দ্য ওয়ার্ল্ডলিওন হেসার নোবেলবিজয়ী নরম্যান বোলাকে নিয়ে লিখেছেন দ্য ম্যান হু ফেড দ্য ওয়ার্ল্ড। যদিও অনেকেই নরম্যানের নাম জানেন না, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন ইতিহাসের পাতায়। বলা হয় যে কোটি কোটি অনাহারী মানুষের জীবনের মধ্যে তাঁর উদ্ভাবিত ‘নতুন জাতের বীজ’ সংরক্ষিত আছে।
নরম্যান ছিলেন এমন একধরনের মানুষ, যিনি একই সঙ্গে গবেষণাগারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ দিয়েছেন। বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন বার্লগ কীভাবে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন।
বিজনেস অ্যাডভেঞ্চারস১৯৯১ সালের কথা। আমি ওয়ারেন বাফেটকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার সবচেয়ে পছন্দের বই কোনটি। তখন তিনি বলেছিলেন, বিজনেস অ্যাডভেঞ্চারস। এটা শোনার পর বইটির ব্যাপারে আমার আগ্রহ জন্মায়। আমি সংগ্রহ করে বইটি পড়ি। তারপরের ঘটনা বুঝতেই পারছেন, বইটি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
জন ব্রুকসের এই বইটি পড়ে একটি বিষয় বুঝেছি, প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রচেষ্টার জন্য ‘মানুষ’ একটি অপরিহার্য ব্যাপার। আপনি সঠিক পণ্য নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন কি না এটা কোনো বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, আপনার পণ্য উৎপাদন পরিকল্পনা এবং পণ্য বিপণন পরিকল্পনা। আর এই দুই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত মানুষ নির্বাচন করাই হচ্ছে প্রধান বিষয়।
দ্য বুলি পুলপিট
সামাজিক পরিবর্তন আসলে কীভাবে ঘটে? এটা কী কোনো নেতার অনুপ্রেরণায় ঘটে? কিংবা এই পরিবর্তনের জন্য সমাজের তৃণমূলে প্রথমত কোনো বড় ধরনের অনুষঙ্গ কাজ করে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যেটা করেছিলেন, সেটা হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষকে একত্র করতে পেরেছিলেন। রুজভেল্ট তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বেশ কিছু রাজনৈতিক সংস্কার করার চেষ্টা করেছিলেন। সাফল্য পেতে দেরি হয়েছে তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন নিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন।
ডরিস কেয়ার্নস গুডউইনের বইটি আপনাকে এসব জানতে সহায়তা করবে।
দ্য রোজি প্রজেক্ট
যারা অতিমাত্রায় যুক্তিবাদী, তারা এই বইয়ের নায়কের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাবেন। এই বইয়ের নায়ক একজন বংশগতিবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি এমন একজন স্ত্রী খুঁজছিলেন, যাঁর কি না অ্যাসপারগার নামের রোগ আছে!
গ্রেয়েম সিমসনের এই বইটি অত্যন্ত হাস্যরসাত্মক, বুদ্ধিদীপ্ত ও সাবলীল ভাষায় লেখা। আমি তো এক বৈঠকেই বইটি পড়ে শেষ করে ফেলেছি!