বইমেলায় সবাই বই কিনতে আসেন, স্টলে স্টলে ঘুরে বই কেনেন। ছোট ছোট আড্ডায়
জমে ওঠে মেলা। এর বাইরেও মেলায় মানুষের আরেকটি আকর্ষণ থাকে মেলামঞ্চের
অনুষ্ঠানকে ঘিরে। যারা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা পছন্দ করেন তারা বিকালে শুরু
হওয়া সেই আলোচনা শুনতে চলে আসেন অনেক আগেই। কিন্তু সন্ধ্যার পরে মেলামঞ্চের
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে সন্ধ্যার পরে
অনেকেই চলে আসেন বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের মূলমঞ্চে। সঙ্গীত
আয়োজন তো থাকেই, মাঝে মাঝে কবিতা আবৃত্তি ও নাটকও প্রদর্শিত হয় এ মঞ্চে।
ফলে বই কেনার পাশাপাশি বিনোদনের এই ব্যবস্থাও মেলায় আসা মানুষের কাছে ভালোই
সমাদর পায়। মেলায় আসা মানুষের কাছে মূলমঞ্চের অনুষ্ঠানের কদরও কম নয়।
গতকাল মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন লালনসম্রাজ্ঞী কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন। ছিলেন
দেশের লোকসঙ্গীতের সব পুরোধা শিল্পী। আকরামুল ইসলাম, সেলিম চৌধুরী, বদিয়ার
রহমান, আবদুল লতিফ সাঁই, সফিউল আলম রাজা, শিপ্রা ঘোষ, জসীম উদ্দীন সজল
প্রত্যেকেই তাদের গানে মুগ্ধ করেন দর্শক-শ্রোতাদের। এছাড়া ছিল আবৃত্তি
সংগঠন ‘ক’জনা’র পরিবেশনা। এছাড়া যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ
চট্টোপাধ্যায় (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম, (বাঁশি), এস. এম. রেজা বাবু (ঢোল),
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (দোতারা) দৌলতুর রহমান (কী-বোর্ড) এবং মিলন বাউল
(মন্দিরা)।
এদিকে মেলা কিন্তু পুরোপুরি জমে উঠেছে। মেলা খুলে
যাবার পর থেকেই আগ্রহী পাঠকের আনাগোনায় ভরে ওঠে মেলা। সব স্টলে বই চলে আসায়
সবাই কিছু না কিছু বিক্রি করছেন। এদিকে, জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল,
সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, আহসান হাবীব সবার বই চলে এসেছে
মেলায়। ফলে স্টলে স্টলে জমে উঠেছে বিক্রি।
মেলায় শুটিং!
বুধবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে হঠাত্ই প্রচুর ভিড়। ভিড়কে লক্ষ্য
করে এগিয়ে যেতেই দেখা মিললো, অভিনেত্রী তিশা ও নিশোকে। বিশেষ কোন এক দিবসের
জন্য চলছে নাটকটির শুটিং। সেই সঙ্গে আরও নাটকের শুটিং চলছিল উদ্যানের আরেক
অংশে। সেখানে চলছিলো একুশের বিশেষ নাটক ‘বোধ’-এর শুটিং। যাতে অংশ
নিচ্ছিলেন অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ।
নজরুল মঞ্চের চিত্র
বুধবার মেলার নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন হয় ছয়টি বইয়ের। এর মধ্যে শাহ
আলমগীর মোড়ক উন্মোচন করেন নন্দিতা থেকে প্রকাশিত শামীম পারভেজের ‘হূদয়ের
কথা’, শিমূল মুস্তাফা উন্মোচন করেন ইউনিভার্সাল একাডেমি শিমুল পারভীনের
‘দেখতে আমি পাইনি তোমায়’। প্রাবন্ধিক আবুল মকসুদ উন্মোচন করেন মাহবুব
কামালের ‘জাত নিমের পাতা’।
নতুন বই
একাডেমির
তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,
গতকাল বুধবার মেলার একাদশ দিনে নতুন ১০৭টি বই এসেছে। এর মধ্যে— গল্প ২২,
উপন্যাস ১৬, প্রবন্ধ ৭, কবিতা ২০, গবেষণা ২, ছড়া ৩, জীবনী ১, মুক্তিযুদ্ধ
৩, বিজ্ঞান ৩, ইতিহাস ২, রাজনীতি ২, স্বাস্থ্য ১, অনুবাদ ১, বৈজ্ঞানিক
কল্পকাহিনী ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর বই এসেছে ২৩টি।
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নেতা শহিদ তাজউদ্দীন আহমদের
নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ,
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার এবং সুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব
করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ’৭১ এর পরাজিত শক্তি ২০১৫
সালে এসেও ষড়যন্ত্র করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সুতরাং এই সময়ে এসে নতুন করে
তাজউদ্দীন আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি শত্রুর হাতকেই
শক্তিশালী করবে এবং নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্তির ঘোরে আবদ্ধ হয়ে যাবে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, জাতির কঠিনতম সময়ে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন
শক্ত করে হাল না ধরলে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার গঠন করা সহজ হতো না।
তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পথ
কুসুমাস্তীর্ণ হয়েছিল।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ
বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ বাংলার ইতিহাসের এক অনন্য পুরুষ। এদেশের সংগ্রামী
রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত
নানান পর্যায়ে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ।
আজকের অনুষ্ঠান
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘শিশুসংগঠক
রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের নব্বইতম জন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন। আলোচনায়
অংশগ্রহণ করবেন মাহবুব তালুকদার, আলী ইমাম, লুত্ফর রহমান রিটন এবং প্রত্যয়।
সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান।