কাপড়ের ওপর একের পর এক নকশা এঁকে দিচ্ছে বিশালকায় স্ক্রিন প্রিন্টের মেশিন বা যন্ত্র। পাশেই বুনন হয়ে বের হয়ে আসছে গজের পর গজ ইলাস্টিকের ফিতা। এমব্রয়ডারি মেশিনও চলছে বিরামহীন, কাপড়ের ওপর কারুকাজ হচ্ছে। অন্যদিকে গেঞ্জির কাপড় তৈরি কিংবা ডাইং ও ওয়াশিংয়ের যন্ত্রগুলো চলছে থেমে থেমে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এখন যেন পুরোটাই একটা বড়সড় বস্ত্র বা পোশাক তৈরির কারখানা। সেখানে গতকাল বুধবার থেকে পোশাক ও বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী শুরু হওয়ার সুবাদেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে ৩৩টি দেশের বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী ৮৮০টি প্রতিষ্ঠান। সম্মেলন কেন্দ্রের ১৬টি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্টলের সংখ্যা ১ হাজার ৬০টি।
আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচয় ঘটানো এবং স্থানীয়ভাবে তা সংগ্রহের সুযোগ করে দিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনীটি (ডিটিজি) আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), তাইওয়ানের চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল ও হংকংয়ের ইয়োর্কার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানি যৌথভাবে চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজক। এবার এই আয়োজনের ১২ বছর পূর্তি হচ্ছে।
প্রদর্শনীতে বিশ্বখ্যাত বারুডান, জ্যাকব মুলার, এলএমএল, তাজিমা, এম অ্যান্ড আর, সীমা সিকিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের স্টল থেকে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পিনিং, উইভিং, ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং টেস্টিং, ওয়াশিং, এমব্রয়ডারি ও সেলাই-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে নিট পোশাকের ৮০-৮৫ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের ৩৫-৪০ শতাংশ কাপড় দেশের বস্ত্রকলগুলোই জোগান দিচ্ছে। বস্ত্র খাতের এই অবদান আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। গত বছর বস্ত্র খাতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। তিনি বলেন, চাহিদামতো গ্যাস-বিদ্যুৎ ও সরকারের সহায়তা পেলে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি এখন ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলারের। এ জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ফেব্রিকস বা কাপড় প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে দেশীয় বস্ত্রকলগুলো জোগান দিচ্ছে এক হাজার কোটি ডলারের। বাকি ৬০০ কোটি ডলারের কাপড় আমদানি করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এটি হলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ফেব্রিকস লাগবে। ফলে বস্ত্র খাতের অনেক সুযোগ আছে।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাকশিল্পে ফ্যাশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মাসেই ফেব্রিকসের ধরন পরিবর্তন হয়। এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে স্থানীয় কারখানাগুলোর উন্নয়ন করতে হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ বলেন, দেশের বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। এ জন্য কারখানার উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের উদ্যোক্তারা সরাসরি বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরও বক্তব্য দেন বস্ত্রমন্ত্রী এমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি আসলাম সানি ও চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাইগার লিন।
আয়োজকেরা জানান, আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রবেশ ফি লাগবে না।