Business news - সংশয়ে রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন, অবরোধ হরতাল নাশকতাকে দুষছেন রপ্তানিকারকরা

সংশয়ে রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন
চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সংশয়ে পড়েছে। চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, গত জুলাই থেকে সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি বেড়েছে আড়াই শতাংশেরও কম। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এবারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। বরং গতবারের অর্জন ধরে রাখাই মুশকিল হবে। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে গত দুই মাস ধরে চলা অবরোধ আর হরতালে ক্রেতারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতারা সম্ভাব্য অর্ডারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে তা ভারত, পাকিস্তান আর ভিয়েতনামে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম মনে করছেন, দ্রুত স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে না আসলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরো বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে পারে।
গত বুধবার বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রথমবারের মত বিজিএমইএ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, স্থিতিশীলতা থাকলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের অবিশ্বাস্য অগ্রগতি হতো।
গার্মেন্টস উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা জানতে চেয়ে ই-মেইল বা ফোনে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশ সফর বাতিল করলেও রপ্তানিকারকরা তৃতীয় কোন দেশে গিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন। ইউরোপ ও আমেরিকার কারখানা পরিদর্শক দল অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শনও পিছিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতির কারণে তাদের পক্ষে কারখানায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন, এ সুযোগে অর্ডার কমানোর পাশাপাশি অনেক ক্রেতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম দামে অর্ডার দিতে চাইছেন। একাধিক উদ্যোক্তা এমন অভিযোগ করলেও অর্ডার হারানোর ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে কেউই সংশ্লিষ্ট বায়ারের (ক্রেতা প্রতিষ্ঠান) নাম বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
অবরোধে ক্ষতির হিসাব নির্ধারণে সম্প্রতি ৪০টি কারখানার উপর একটি জরিপ চালিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাতে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত অর্ডার বাতিল, পণ্য শিপমেন্টে দেরি, সড়কে পরিবহনে হামলায় পণ্যের ক্ষতি, যথাসময়ে পণ্য পাঠানোর ব্যর্থতায় ক্রেতাকে দেয়া ডিসকাউন্ট আর বিমানে পণ্য পাঠাতে গিয়ে তাদের বড় অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। কেবল ৪০টি কারখানার ক্ষতি হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। 
প্রতিযোগী দেশগুলোতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্ডার সরিয়ে নেয়ার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম। ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম, ভারত আর পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে অনেক বেশি হারে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামের বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ, ভারতের ১০ ও পাকিস্তানের বেড়েছে ২০ শতাংশ। বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া আগামী মাসগুলোতে দেখা যাবে। তাতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া আরো পরিষ্কার হবে। আতিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দূরে থাক, গত বছরের সমান রপ্তানি হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের আশ্বস্ত করছি, পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হবে। কিন্তু দুই মাস হয়ে গেল পরিস্থিতির উন্নতি হলো না। এখন আমরা তাদের কী জবাব দেব?’
সংগঠনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ক্রেতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও তারা আস্থা রাখতে পারছেন না। ইতিমধ্যে অনেক বায়ার এক-তৃতীয়াংশ অর্ডার বাতিল করেছেন।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩২০ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩০ কোটি ডলারের। বাকী চার মাসে ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তা সম্ভব নয়। রপ্তানির ৮১ শতাংশ আসে গার্মেন্টস খাত থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে এ পণ্য রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়েনি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি সামান্য বাড়লেও একই সময়ে কমেছে টেরিটাওয়েল, ম্যান মেড ফিলামেন্টস ও স্টেপল ফাইবার, জুট ইয়ার্ন ও টোয়াইন, কাঁচা পাট, কটন ও কটন পণ্য, সিল্ক, হিমায়িত খাদ্য ও চিংড়ি, ভেজিটেবলস, কাট ফ্লাওয়ার ও ফলিয়েজ, কাগজ ও কাগজ পণ্য, ফার্নিচার পণ্য, ওষুধ, সিরামিক সামগ্রী, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts