শুধু কি বেগুনি রঙের পোশাক পরা, আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি ঘিরে আরও কত আয়োজন। ‘আমাদের অফিসে এই দিনটি কাটে উৎসবের মতোই। সেদিন পুরুষ সহকর্মীরা চাঁদা তুলে নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি কিনে দেন। অফিসের সব নারী কর্মীই পান এ রকম শাড়ি, সেটা পরেই অফিস করা হয়। আরও একটি বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেদিন প্রতিটি বিভাগের প্রধান করে দেওয়া হয় একজন নারীকে। সেটা শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, সত্যিই তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পান। দিনজুড়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার তো হয়ই।’ বললেন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপস্থাপক ফারহানা নিশো। সেখানকার করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
একটি দিন নারীদের জন্য, বছরের বাকি দিনগুলো তবে কী? এমন বিতর্ক তো আছেই। ‘বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসও তো এক দিন। তবে কি আমরা বছরের বাকি দিনগুলো ভুলে থাকি এ দিনগুলোর কথা। তা তো নয়। এই একটি দিনে নারীদের নানা ইস্যু সামনে তুলে ধরা হয়। আর সেসব নিয়েই সারা বছর কাজ করা হয়। নতুন অঙ্গীকার, নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্যই এই একটি দিনের আয়োজন।’ বললেন শাহীন আনাম। আর সেই একটি দিনে খুব সহজেই সবাই একাত্ম হতে পারেন এই বেগুনি রংটার মাধ্যমে। নতুন পোশাক কিনতে হবে এর জন্য, তা নয়। এক টুকরা স্কার্ফ বা ব্যাজ জড়িয়েই কিন্তু হতে পারে এর প্রকাশ। বাকি দিনগুলো রইল এই দিনটির তাৎপর্য মনে রেখে সেই অনুয়ায়ী কাজ করার।
কথা হলো অরণি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ইসমাত সুলতানার সঙ্গে। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁরা চেষ্টা করছেন শিশুদের মনে সম-অধিকারের বিষয়টি গেঁথে দেওয়ার। ‘অধিকার মানে কিন্তু কোনো অপব্যয় নয়। সবাই সমান। সবাই বন্ধুর মতো। এই ভাবনাটাই যাতে শিক্ষার্থীরা ভাবতে শেখে, সেই চেষ্টা থাকে আমাদের।’ বললেন তিনি।
আলাদা ছুটি নেই। সাধারণ কর্মদিবসেই পড়েছে এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তবে অফিসগুলোতে নানা আয়োজন আজকাল হতে দেখা যায়। অনেক অফিসে কর্মীরা আগে থেকেই ঠিক করেই রাখেন, বেগুনি রঙের পোশাক পরবেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ে কাটে দিনটি। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে এই দিনটি পালিত হয় বিশ্বব্যাপী। অনেকে বেগুনি রঙের ব্যাজও পরেন। বেগুনি রংটার মাধ্যমেই প্রকাশ করেন এই দিনটির মূল ভাবনার সঙ্গে নিজের সংহতি।
পয়লা ফাল্গুনে বাসন্তী, একুশে ফেব্রুয়ারিতে সাদা-কালো, স্বাধীনতা দিবসে লাল-সবুজ, বৈশাখে লাল-সাদা। বাঙালির দিবস উদ্যাপনের বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে রঙের ভাবনা। ‘রং তো যোগাযোগেরই একরকম ভাষা। মুখে বলার প্রয়োজন নেই, পোশাকের রংটার মাধ্যমেই জানানো যায় পুরো আবহের সঙ্গে আপনার একাত্মতা। বিশেষ দিবসে বিশেষ রঙের পোশাক পরার চল এভাবেই গড়ে উঠছে।’ বললেন নিত্য উপহারের ডিজাইনার বাহার রহমান।
আর বিশেষ এই বেগুনি রংটাই কীভাবে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একরকম প্রতীক, সেটা জানা হলো শাহীন আনামের কাছ থেকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তিনি। ‘বেগুনি রংটা নারীবাদীদের প্রতিবাদের একধরনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনের ইতিহাস যুক্ত আছে একটি উপন্যাসের সঙ্গে। অ্যালিস ওয়াকার রচিত দ্য কালার পারপল বইটি এর অনুপ্রেরণা। এই বইতে তিনি তুলে ধরেছেন নারীদের অধিকারের কথা, একই সঙ্গে এসেছে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের কথাও। সেখান থেকেই নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গেছে এই রংটা।’ বললেন তিনি।