আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও নারীর অবস্থান বিষয়ে জাতিসংঘ কমিশনের আগামী সপ্তাহের বৈঠকের আগে ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক ফুমজুমালা বারানজি-কাকা শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, নারীর জন্য সমতা অর্জনে ১৮৯টি দেশ সম্মিলিতভাবে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার ২৯ বছর পরও এমনকি একটি দেশও লিঙ্গীয় বৈষম্য দূর ও সমতার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।
১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে ইউএন উইমেনের সম্মেলনে নারীর সমতার জন্য গৃহীত ১৫০ পৃষ্ঠার যুগান্তকারী ‘প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন’ পর্যালোচনায় সামনের সপ্তাহেই বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের এই কমিশন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য ‘মানবাধিকার নারীর অধিকার এবং নারীর অধিকার মানবাধিকার’ ওই সম্মেলনে সারা দুনিয়ার নারী প্রতিনিধিদের উজ্জীবিত করেছিল।
বেইজিং সম্মেলনের পর বিশেষত নারীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে, বারানজি-কাকা মনে করিয়ে দেন, এখনো দুনিয়ায় নারী সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা ২০ জনের চেয়ে কম এবং নারী আইনপ্রণেতার সংখ্যা দুই দশকে ১১ থেকে বেড়ে মাত্র ২২ শতাংশ হয়েছে। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ‘দুনিয়ার সবখানেই আছে’, এটা দুনিয়ায় পুরুষ প্রাধান্যের ফল এবং সত্যি সত্যি নারীর জন্য সমতা নিশ্চিত করতে হলে এটা দূর করতে হবে।
বেইজিং সম্মেলনে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং অসমতা দূর করার ১২টি গুরুতর ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সেসব বিষয়ে কাজ করতে সরকারগুলোকে আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং মানবাধিকার। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো এটা স্বীকার করা হয় যে, কোনো রকম বলপ্রয়োগ ও চাপের মুখোমুখি না হয়ে নারী নিজের যৌনতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশাপাশি এটা আবারও নিশ্চিত করতে বলা হয় যে, কখন সন্তান ধারণ করবেন, সে সিদ্ধান্তের অধিকারও নারীর।
বারানজি-কাকা জানান, যৌনতা ও সন্তান ধারণের বিষয়ে নারীর অধিকার বেইজিং সম্মেলনে যেমন সবচেয়ে গুরুতর আলোচনার বিষয় ছিল, তেমনি এখনো জাতিসংঘের কর্মতৎপরতাতেও এগুলোই সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ইস্যু। তিনি বলেন, এগুলো আমাদের মূল্যবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং এসব অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে—মধ্যপ্রাচ্যে আমরা এমন সহিংস প্রতিরোধ দেখছি। নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের লোকজন স্কুলের মেয়েদের অপহরণ করে পুরুষদের কাছে বউ হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে বলে যে খবর আমরা পাচ্ছি তাতে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, ওই মেয়েদের জন্য কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।
ইউএন উইমেনপ্রধান বলেন, ‘বেইজিং-উত্তর সময়েও আমরা ধর্ষণের যেসব ভয়ংকর ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে সহিংসতার পরিস্থিতিতে তা আমাদের এই বার্তাই দেয় যে, নারীর শরীরকে সম্মান তো দেখানো হয়ই না, বরং এভাবেই দেখা হয় যে পুরুষেরা তা নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়ণের অধিকার রাখে।’
তিনি বলেন, এসব ঘটনার অর্থ হলো বিশ্ব নেতাদের এখনই ‘খুবই শক্তভাবে এবং খুবই খোলামেলাভাবে’ যৌন সহিংসতা এবং নারী অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করা উচিত। আর লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা অবশ্যই তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
বারানজি-কাকা বলেন, পুরুষতন্ত্রের সুবিধা ত্যাগ করাই নারী-পুরুষ সমতার চাবিকাঠি, ছেলেরা যে সুবিধা জন্ম থেকেই পেয়ে আসছে। তিনি জানান, ইউএন উইমেন ১০ জন বিশ্ব নেতা, ১০ জন প্রধান নির্বাহী এবং ১০টা বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজছে যারা এই এজেন্সির ‘হি ফর সি’ বা ‘নারীর পক্ষে পুরুষ’ প্রচারাভিযানের অগ্রদূত হবে। এই অভিযানে দুনিয়ার সব পুরুষ নেতা, পিতা, পুত্র, স্বামী এবং ভাইদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সমতার অধিকার নিশ্চিত করার লড়াইয়ে শামিল হতে।