Science and Technology news - এন্টিবায়োটিকের ক্ষতি কমাবে প্রোবায়োটিক

এন্টিবায়োটিকের ক্ষতি কমাবে প্রোবায়োটিক
পোল্ট্র্রি শিল্পে গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে মানব দেহে এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের আশংকা দেখা দিচ্ছে। তবে এই শিল্পে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।
ব্রয়লার মুরগীতে প্রোবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে গবেষণায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। গবেষণা করেছেন পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ডা: হোসেন সোহেল। এতে সহায়তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড ফুড অ্যানালাইসিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা:সফিকুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রবিউল হক।
ডা. হোসেন সোহেল জানান, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার শুধু গ্রোথ প্রমোটার হিসেবেই থেমে থাকেনি। রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্সা ক্ষেত্রেও অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। কোন প্রকার বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই মানুষের জন্য ব্যবহূত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এন্টিবায়োটিক এখন পোল্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়।
এই শিল্পে উচ্চক্ষমতার এন্টিবায়োটিকের পাশাপাশি এখন দুই বা ততোধিক এন্টিবায়োটিকের সমন্বিত থেরাপি দিয়ে যেন চিকিত্সার প্রতিযোগিতা চলছে। এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার পাকস্থলি এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস করে না, বরং কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে তোলে। 
এছাড়া এন্টিবায়োটিকের রেসিডিউয়াল প্রভাব মানব শরীরের রোগ সহনশীলতা কমিয়ে দেয়। এভাবে আক্রমণ ছড়ালে রোগের প্রখরতা হবে মানবকুলের জন্য অনেক ভয়াবহ। চিকিত্সা  হবে অনেক ব্যয়বহুল। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই পশু এবং পোল্ট্র্রি শিল্পসহ সকল খাদ্যজাত শিল্পে গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প ব্যবহার এখন সময়ের দাবি।
প্রোবায়োটিক কি?
প্রোবায়োটিক হলো কিছু উপকারী জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের মিশ্রণ। এটা পাকস্থলি এবং অন্ত্রে এ প্রবেশের পর নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে অন্ত্রের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কিছু নির্যাস তৈরি করে যা অপকারী ব্যাকটেরিয়ার বংশ বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। খাদ্যের হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে রাখে সতেজ ও রোগমুক্ত। প্রোবায়োটিক মানব শরীরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
গবেষণা পদ্ধতি
ডা: সোহেল গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন খামারে কয়েকশ’ ব্রয়লার মুরগীর উপর গবেষণা করেন। তিনি কিছু মুরগীতে এন্টিবায়োটিক, কিছু মুরগীতে প্রোবায়োটিক এবং কিছু মুরগীতে এন্টিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক একত্রে ব্যবহার করেন। খাদ্য, পানি, তাপমাত্রা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা সকল মুরগীর জন্য সমান রাখেন। পরীক্ষা শেষে দেখেন প্রোবায়োটিক ব্যবহূত মুরগীতে গ্রোথ এবং ফিড কনভারশন রেটিও (এফসিআর) ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন রোগের উপক্রম ও মৃত্যু হার ছিল অন্যান্য পরীক্ষা থেকে সবচেয়ে কম।
এ প্রসঙ্গে ডা:সোহেল বলেন, আমাদের দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করছে ব্রয়লার মুরগী। এই মুরগীতে উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব মানবদেহে পড়ে। অপরদিকে প্রোবায়োটিক ব্যবহারে কোন ক্ষতির সম্ভবনা নেই।
ডা:সফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্রয়লারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে রেসিডিউয়াল পার্ট (অবশেষ) কিছু থেকেই যায়। তবে প্রোবায়োটিক ব্যবহারে এ ধরনের কোন সমস্যা হয় না। এ গবেষণা বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের জন্য মাইলফলক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো:নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রোবায়োটিক ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। তবে এটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অবশ্যই ক্ষতিকর।

-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts