Science and Technology news - হারিয়ে গেছে ‘অন্ধকার রাত’!

পিটসবুর্গ শহরের রাতের আকাশ l ছবি: আর জে শ্মিডট
 
আলোদূষণের কারণে বিশ্বের বড় শহরগুলো থেকে ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝোড়ো রাত’ হারিয়ে গেছে। কৃত্রিম আলোর যুগ শুরু হওয়ার আগে মেঘেরা আকাশের বিভিন্ন তারা থেকে বের হওয়া আলো ঢেকে রাখত। কিন্তু মেঘ থাকলেও এখন আকাশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয় বিজলি বাতির আলোয়। এতে প্রাণিকুল ও গাছপালার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন।
কোনো বড় শহর এখন একেবারেই আঁধারে ডুবে গেলে বুঝতে হবে সেটা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে, ঝড়-বৃষ্টির কারণে নয়। আকাশছোঁয়া অট্টালিকাগুলোয় এখন গভীর রাতে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও কমলা আলোর আবরণ দেখা যায়। নিচ থেকে আকাশে ছড়ানো এ ধরনের আলোকে জার্মানির একদল গবেষক আলোদূষণ আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, এই কৃত্রিম আলোয় রাতের প্রাকৃতিক আলো দূষিত হয়।
বার্লিনের লিবনিজ ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার ইকোলজি অ্যান্ড ইনল্যান্ড ফিশারিজের গবেষক ফ্রাংক হলকার বলেন, আধুনিক বিশ্বে আপনাকে কোনো ঝোড়ো রাতকেও উজ্জ্বল বলতে হবে। কারণ, সেটি অন্ধকার নয়।
কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রথনি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরির পরিচালক ফিল ল্যানগিল বলেন, রাতের আকাশে কৃত্রিম আলোর আধিপত্য প্রকৃতির ওপর একধরনের আঘাত।
বিজ্ঞানীরা রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা পরীক্ষা করেছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাম, শহরতলি ও নগর এলাকার আকাশের পার্থক্য ধরা পড়ে। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বাছাই করার পরিবর্তে তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান বিবেচনায় ২২টি এলাকার আকাশ নির্বাচন করে ওই পরীক্ষা চালান। মেঘাচ্ছন্ন এসব আকাশের মধ্যে মাত্র দুটিতে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকতে দেখা যায়। অবশিষ্ট এলাকাগুলোর আকাশের মেঘে রাতের বেলা কৃত্রিম আলোর প্রতিফলন বা আলোদূষণ শনাক্ত করা হয়। গবেষণায় শহরের সীমানার মধ্যে মেঘলা আকাশে উজ্জ্বলতার পরিবর্তন, গ্রাম ও শহরতলি এলাকায় একই ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণার আগেও মানুষ সাধারণ বিবেচনায় বুঝতে পারে যে এখনকার যুগে রাতের আকাশ আর আগের মতো নেই। কিন্তু তাঁদের এ রকম ধারণার সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ ছিল না।
জার্মানির পোস্টডামে অবস্থিত জিএফজেড সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের পদার্থবিদ ক্রিস্টোফার কাইবা বলেন, রাতের আকাশ কতটা উজ্জ্বল হতে পারে, সে ব্যাপারে আগে তাঁদের স্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল। এখন তাঁরা বিশ্বজুড়ে রাতের আকাশ কীভাবে বদলাচ্ছে, তার একটি সার্বিক চিত্র তৈরি করার চেষ্টা করছেন। মানুষের কারণেই এ পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক শহরে রাতের রাস্তায় উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। এতে সেখানকার বৃষ্টিভেজা সড়কে আলো প্রতিফলিত হয়ে আকাশের দিকে যাচ্ছে।
বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোর আকাশে এখন নক্ষত্র ও চাঁদের উপস্থিতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। চাঁদ আকাশে ওঠে ঠিকই, কিন্তু তাতে আকাশের উজ্জ্বলতায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। কৃত্রিম আলোর দাপুটে আচরণের কারণেই এমনটা হয়। তবে গ্রামাঞ্চলের আকাশে চাঁদ-তারার উপস্থিতি ঠিকই নজরে পড়ে। গবেষকেরা আরও দেখতে পান, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে উজ্জ্বল আকাশের দেখা মিলেছে নেদারল্যান্ডসের শিপলুইডেন শহরে। সেখানে বিভিন্ন গ্রিনহাউস থেকে মধ্যরাতেও উজ্জ্বল আলো আকাশে ছড়াচ্ছে। ফলে সম্ভাব্য সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন কোনো রাতের চেয়ে শহরটির আকাশের উজ্জ্বলতা ১০ হাজার গুণ বেশি।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, আকাশের বৈশিষ্ট্যে এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে কিছু কিছু কৃত্রিম আলো উপকারী এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু অতিরিক্ত এবং অপ্রত্যাশিত আলোর উপস্থিতিতে প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া উচিত।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts