National news - ৫দিন ‘ছুটি’ ২দিন ক্লাস স্কুল অবরোধ ও হরতালের আওতামুক্ত রাখার দাবি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের

৫দিন ‘ছুটি’ ২দিন ক্লাস
‘হরতাল-অবরোধের কোন মানে হয় না। সপ্তাহের পাঁচটা দিন আমি বাসায় একা কাটাই, ছুটির দুটি দিন স্কুলে আসি’—স্কুল গেটে কথা হচ্ছিল মালিহা তাবাসসুমের সঙ্গে। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি স্বনামধন্য স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মালিহা বলে, ‘মা-বাবা দুজনেই চাকরি করেন। সপ্তাহের অন্য পাঁচটা দিন তো আমি স্কুলে আসি। ছুটির দুটি দিন মা-বাবার সঙ্গে কাটাই। কিন্তু গত তিন মাস ধরে এভাবে চলছে। পেট্রোল বোমার আতঙ্কে তো বাসার নিচে একা নামতেও ভয় লাগে।’ মালিহার মা শিরীন সুলতানা বললেন, ‘ছুটির দিন ছাড়া স্কুলে আসতে সাহসে কুলায় না। বাচ্চার জান আগে নাকি পড়াশোনা!’
অবরোধ-হরতালে এখন সাধারণ জীবন-যাত্রায় খুব একটা প্রভাব না পড়লেও রাজধানীর স্কুলগুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পেট্রোল বোমার আতঙ্কে শিশুদের স্কুলে আনতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা। সরকারি-বেসরকারি ও ইংরেজি মাধ্যমের অনেক স্কুল সাপ্তাহিক কর্মদিবসে খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা খুব একটা আসছে না। এর মধ্যে কিছুদিন আগে ধানমন্ডিতে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের পর রীতিমত আতঙ্কে ভুগছেন অভিভাবকরা। এরপর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে চাইলেও অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবার স্কুল করছে শিক্ষার্থীরা। সপ্তাহের বাকি ৫ দিন অনেকটা গৃহবন্দী থাকছে তারা। এ অবস্থায় দেশের স্কুল-কলেজগুলো অবরোধ ও হরতালের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এর ফলে শুধুমাত্র পরীক্ষার সময়সূচিই লণ্ডভণ্ড হয়নি, স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে কোমলমতি শিশুদের ওপরে।
রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষয়িত্রী বললেন, ‘বাচ্চাদের জীবনটা থমকে গেছে। এই শহুরে জীবনে শিশুদের জন্য মুক্ত পরিবেশ এনে দেয় স্কুল। অনেক পরিবারেই মা-বাবা দুজনেই চাকরি করেন। সিঙ্গেল পরিবার। এসব পরিবারের বাচ্চারা তো ডিপ্রেশনে ভুগছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিশুরা খুব স্পর্শকাতর হয়। টেলিভিশনে, খবরের কাগজে প্রতিদিন পেট্রোল বোমায় মানুষের মৃত্যু তাদের মনে আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে।’
এই আতঙ্ক এতটাই যে রাজধানীর বেশ কিছু স্কুলে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস না পরে স্কুলে আসার নির্দেশনা দিয়েছে। যাতে শিশুদের ওপরে কোন আক্রমণ না আসে। সাধারণত শুক্রবার রাজধানীজুড়েই একটা ছুটির আমেজ বিরাজ করে। কিন্তু এখন শুক্রবারেই রীতিমত ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঢাকা। হরতাল-অবরোধের আতঙ্কে সপ্তাহের অন্য পাঁচটি দিন স্কুলগুলো মূলত বন্ধ থাকে। ছুটির দুটি দিন চলে স্কুল। সকালে স্কুল খোলা, রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ সারি। স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। দুপুরে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত চলে এই ব্যস্ততা ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লার ভেতরের কিছু কিছু স্কুল খোলা থাকলেও স্বনামধন্য ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলো সপ্তাহের কার্যদিবসগুলোতে বন্ধ থাকে। কর্তৃপক্ষ স্কুলে উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব স্কুলের শিক্ষকরা বলেছেন, শিক্ষা কার্যক্রম একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। ছুটির দুটি দিনের ক্লাসে পুরো সপ্তাহের হোম ওয়ার্ক দিয়ে দেয়া হচ্ছে বাচ্চাদের। পরের সপ্তাহে জমা নেয়া হচ্ছে। এতে তো আর পাঁচ দিনের ক্লাসের অভাব পূরণ হয় না।
অভিভাবকরাও এ নিয়ে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন। রাজনৈতিক এ অচলাবস্থা কবে কাটবে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তারা। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বাবা বললেন, ‘ক্লাস ফোরে পড়ে আমার মেয়ে। তার বেতন দেই প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু পড়াশোনা তো তিন মাস ধরে একেবারেই বন্ধ। বাচ্চারা বাসায় থাকায় যেমন লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তেমনি আমাদেরও কষ্টে উপার্জিত টাকা পানিতে যাচ্ছে।’
‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা: এদিকে আগামী ৫ মে থেকে শুরু হওয়ার কথা ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কারণ এর আগে এসএসসি পরীক্ষা হরতালের জন্য ঠিক সময়ে হয়নি, এমনকি জানুয়ারি মাসে ‘এ’ লেভেলের কয়েকটি পরীক্ষাও বাতিল হয়েছে। ফলে আগামী মে মাসে পুনরায় সেই পরীক্ষায় বসতে হবে। পুনর্বার গুনতে হবে পরীক্ষার ফি। তবে পরীক্ষার ফি পুনর্বার দেয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে যে পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। সে টাকা আমাদের কেন ভরতে হবে। তারা এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে দুটি আন্তর্জাতিক বোর্ডের অধীনে। যে কোন পরীক্ষা বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শেষ করার ব্যাপারে বোর্ডগুলোর নির্দেশনা রয়েছে। হরতালের সময় পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ক্যামব্রিজ ও এডেক্সেল উভয় বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা দেশের পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ কাউন্সিল সেটাই অনুসরণ করে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts