আড়াই মাস ধরে সহিংসতা
মানুষের উত্কণ্ঠা রাষ্ট্র ও সমাজকে দুর্বল করে দিচ্ছে :ড. নেহাল করিম, সমাজ বিজ্ঞানী
স্বাভাবিকতা হারানোর কারণে মানুষের আবেগ ও কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে :ড. নজরুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞানী
টানা আড়াই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি মানুষই এই অস্থিরতার শিকার। বিভিন্ন মাত্রায় লাগাতার এই সহিংসতার ফলে নানাদিক থেকে সমাজে এর নেতিবাচক উপসর্গ দেখা দেবে। এর কিছু স্বল্পমেয়াদি, কিছু হবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ। এর ফলে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রাজনৈতিক এই অস্থিরতা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করছে। একজন মানুষও নির্ভয়ে ঘরের বাইরে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। চাকরিজীবীরা ভয়ে-ভয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। ব্যবসায়ীরা পদে-পদে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় কোনো কোনো জিনিসের দাম বেড়েছে, যার শিকার কম-বেশি প্রায় সবাই। বাসের চলাচল কমে যাওয়ায় বিকল্প পরিবহনে যাতায়াত করায় মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। বিয়ের মৌসুম চলে গেল, রাজনৈতিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিয়ের হারও কমে গেছে। পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও অনেকে এবার বাত্সরিক বনভোজনে যেতে পারেননি। এভাবে সবদিক থেকে মানুষ নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়ে পড়েছে যা কার্যত: গোটা রাষ্ট্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই সমাজবিজ্ঞানী আরো বলেন, ‘আমি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি- যখনই ঘরের বাইর হচ্ছি, মনের ভেতর অজানা একটা ভীতি কাজ করছে। মানসিকভাবে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয়।’ তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেও সবাই এই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার। স্ত্রী বাইরে গেলে, স্বামী-সন্তান দুশ্চিন্তায় থাকেন; স্বামী-সন্তান ঘরের বাইরে গেলে স্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়েন। স্বজন মারা গেলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জানাজা পড়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনের প্রতিটি কাজে ক্ষতিগ্রস্ত, সবাই উত্কণ্ঠায় ও মানসিক অশান্তিতে।
মানসিকভাবে মানুষ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, একটি সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা। মুক্তচিন্তার জন্য দরকার ভীতিমুক্ত পরিবেশ; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, মানুষের মধ্যে চিন্তার ভয়, কথা বলার ভয় কাজ করছে। এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তার মতে, পরিস্থিতি এতটাই অস্বস্তির যে ‘আমার কিছু করার নেই’-মানুষ মানসিকভাবে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে নিজের কোনো ভূমিকা রাখা থেকে প্রত্যেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে। সামাজিকভাবে এই অবস্থার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অধ্যাপক নজরুল বলেন, পেট্রোল বোমায় যারা হতাহত হয়েছে, দোষে বা নির্দোষ হয়েও যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বা কারাগারে এবং যারা ‘নিখোঁজ’- তাদের পরিবারগুলোর ব্যাপক অংশ সরাসরি আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর সামগ্রিক ক্ষতির মাশুলটা আসলে সমাজকেই দিতে হবে।
লাগাতারভাবে চলা অবরোধ-হরতাল, পেট্রোল বোমায় মানুষকে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, জনসমাগমে আচমকা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো, গবাদিপশু ও গাছ ধ্বংস করা, নিত্যপণ্য এবং আমদানিকৃত রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুরের ফলে রাষ্ট্র কী কী ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে বা পড়বে? এ ব্যাপারে ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমরান হুসাইন বলেন, ‘এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই অবস্থা আরও দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে। এনিয়ে মানুষ ভেতরে ভেতরে দুঃসহ যন্ত্রণায় ভুগছে যা ব্যক্ত করছে পারছে না। মানুষ পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরছে, গুলিতে মরছে, গুম হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেন এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমি ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেলে কারও কিছুই যায় আসে না, আমার পরিবারের কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। একটি সমাজ বা রাষ্ট্র এভাবে বেশিদিন সুস্থ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, এখন সাময়িকভাবে হয়তো মনে হতে পারে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তবে হঠাত্ করে এটির অবনতি ঘটবে না-এর নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। বিশেষ করে, পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে চলে গেলে, তখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে কেন আজ আইএস, বোকোহারাম-ইত্যাদির প্রকাশ ঘটলো? এর কারণ একটিই-কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি করা হলে সেটি পূরণ করে অপশক্তি। যখন পছন্দের, মত প্রকাশের ও বিরোধিতার সুযোগ থাকে না, তখনই এরকম অপশক্তির আবির্ভাব হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা ইরশাদ নাসির ইত্তেফাককে বলেন, মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে, কিন্তু এখন তারা অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। সমাজ বিজ্ঞানে আমরা এটাই পড়াই যে, অর্থনীতি ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজকে গ্রাসের ফল কখনও স্বল্পমেয়াদি হয়, কখনও হয় দীর্ঘমেয়াদি। কারণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি- এই তিনটি বিষয় পরস্পরের পরিপূরক। তিনি বলেন, শিশুরাও এই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার। তাদের শিক্ষাবর্ষ তছনছ হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই তারা বড় হোঁচট খাচ্ছে, সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে পাঁচদিনই তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে তাদের মনোজগতে। যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজে।
মানুষের উত্কণ্ঠা রাষ্ট্র ও সমাজকে দুর্বল করে দিচ্ছে :ড. নেহাল করিম, সমাজ বিজ্ঞানী
স্বাভাবিকতা হারানোর কারণে মানুষের আবেগ ও কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে :ড. নজরুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞানী
টানা আড়াই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি মানুষই এই অস্থিরতার শিকার। বিভিন্ন মাত্রায় লাগাতার এই সহিংসতার ফলে নানাদিক থেকে সমাজে এর নেতিবাচক উপসর্গ দেখা দেবে। এর কিছু স্বল্পমেয়াদি, কিছু হবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ। এর ফলে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রাজনৈতিক এই অস্থিরতা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করছে। একজন মানুষও নির্ভয়ে ঘরের বাইরে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। চাকরিজীবীরা ভয়ে-ভয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। ব্যবসায়ীরা পদে-পদে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় কোনো কোনো জিনিসের দাম বেড়েছে, যার শিকার কম-বেশি প্রায় সবাই। বাসের চলাচল কমে যাওয়ায় বিকল্প পরিবহনে যাতায়াত করায় মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। বিয়ের মৌসুম চলে গেল, রাজনৈতিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিয়ের হারও কমে গেছে। পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও অনেকে এবার বাত্সরিক বনভোজনে যেতে পারেননি। এভাবে সবদিক থেকে মানুষ নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়ে পড়েছে যা কার্যত: গোটা রাষ্ট্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই সমাজবিজ্ঞানী আরো বলেন, ‘আমি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি- যখনই ঘরের বাইর হচ্ছি, মনের ভেতর অজানা একটা ভীতি কাজ করছে। মানসিকভাবে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয়।’ তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেও সবাই এই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার। স্ত্রী বাইরে গেলে, স্বামী-সন্তান দুশ্চিন্তায় থাকেন; স্বামী-সন্তান ঘরের বাইরে গেলে স্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়েন। স্বজন মারা গেলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জানাজা পড়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনের প্রতিটি কাজে ক্ষতিগ্রস্ত, সবাই উত্কণ্ঠায় ও মানসিক অশান্তিতে।
মানসিকভাবে মানুষ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, একটি সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা। মুক্তচিন্তার জন্য দরকার ভীতিমুক্ত পরিবেশ; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, মানুষের মধ্যে চিন্তার ভয়, কথা বলার ভয় কাজ করছে। এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তার মতে, পরিস্থিতি এতটাই অস্বস্তির যে ‘আমার কিছু করার নেই’-মানুষ মানসিকভাবে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে নিজের কোনো ভূমিকা রাখা থেকে প্রত্যেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে। সামাজিকভাবে এই অবস্থার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অধ্যাপক নজরুল বলেন, পেট্রোল বোমায় যারা হতাহত হয়েছে, দোষে বা নির্দোষ হয়েও যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বা কারাগারে এবং যারা ‘নিখোঁজ’- তাদের পরিবারগুলোর ব্যাপক অংশ সরাসরি আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর সামগ্রিক ক্ষতির মাশুলটা আসলে সমাজকেই দিতে হবে।
লাগাতারভাবে চলা অবরোধ-হরতাল, পেট্রোল বোমায় মানুষকে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, জনসমাগমে আচমকা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো, গবাদিপশু ও গাছ ধ্বংস করা, নিত্যপণ্য এবং আমদানিকৃত রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুরের ফলে রাষ্ট্র কী কী ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে বা পড়বে? এ ব্যাপারে ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমরান হুসাইন বলেন, ‘এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই অবস্থা আরও দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে। এনিয়ে মানুষ ভেতরে ভেতরে দুঃসহ যন্ত্রণায় ভুগছে যা ব্যক্ত করছে পারছে না। মানুষ পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরছে, গুলিতে মরছে, গুম হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেন এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমি ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেলে কারও কিছুই যায় আসে না, আমার পরিবারের কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। একটি সমাজ বা রাষ্ট্র এভাবে বেশিদিন সুস্থ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, এখন সাময়িকভাবে হয়তো মনে হতে পারে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তবে হঠাত্ করে এটির অবনতি ঘটবে না-এর নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। বিশেষ করে, পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে চলে গেলে, তখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে কেন আজ আইএস, বোকোহারাম-ইত্যাদির প্রকাশ ঘটলো? এর কারণ একটিই-কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি করা হলে সেটি পূরণ করে অপশক্তি। যখন পছন্দের, মত প্রকাশের ও বিরোধিতার সুযোগ থাকে না, তখনই এরকম অপশক্তির আবির্ভাব হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা ইরশাদ নাসির ইত্তেফাককে বলেন, মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে, কিন্তু এখন তারা অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। সমাজ বিজ্ঞানে আমরা এটাই পড়াই যে, অর্থনীতি ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজকে গ্রাসের ফল কখনও স্বল্পমেয়াদি হয়, কখনও হয় দীর্ঘমেয়াদি। কারণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি- এই তিনটি বিষয় পরস্পরের পরিপূরক। তিনি বলেন, শিশুরাও এই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার। তাদের শিক্ষাবর্ষ তছনছ হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই তারা বড় হোঁচট খাচ্ছে, সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে পাঁচদিনই তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে তাদের মনোজগতে। যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজে।