Entertainment news - মৌসুমী নির্মাতারাই ডোবাচ্ছেন চলচ্চিত্র শিল্পকে!

মৌসুমী নির্মাতারাই ডোবাচ্ছেন চলচ্চিত্র শিল্পকে!
যে একঝাঁক তরুণের হাত ধরে চলচ্চিত্রের একটা নতুন মোড়ের স্বপ্ন দেখছিলেন সবাই সেই স্বপ্নে গুড়েবালি দিয়েছে তরুণ নির্মাতারাই। কারণ ‘প্রফেশনালিজমের প্রকট অভাব।’ সৌখিনতার চর্চা করতে এসে চলচ্চিত্রে প্রথমে কোনোমতে কাউকে লগ্নি করানোর টোপ গেলানো হয়। কোনো টাকাওয়ালা টোপ গিললেই হলো! অমনি ক্যামেরা-লাইট অ্যাকশন শরু হয়ে যায়। শুরু হয় তাদের বর্ণাঢ্য মহরতের জন্য ৫ তারা হোটেলের হলরুম বুকিং। শুটিং-এর চাইতে নায়ক-নায়িকা কিংবা নির্মাতাদের বিভিন্ন দৈনিকের খবরে (প্রেস রিলিজ) বা বিভিন্ন সিনে টকশোতে বসার ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। তখন ছবি রিলিজের খবর তো অনেক দূরের ঘটনা, ছবির কাজ আটকে থাকে মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। এদিকে প্রযোজকের সাথে তরুণ নির্মাতার কয়েক দফা বিবাদের ঘটনাও ঘটে। আমাদের চলচ্চিত্রের অফস্ক্রীনে এই সিকোয়েন্সগুলোই চলতে থাকে প্রতিনিয়ত।

তাই ইদানিংকালের ছবিতে ঝাঁ চকচকে ছবি বা দারুণ ভিএফএক্সের কারসাজি আছে ঠিকই কিন্তু গল্পের নূন্যতম মান নেই। এক কথায় দূর্বল গল্পের কারণে তরুণ নির্মাতারা যেমন দর্শকদের ধাক্কা মেরে বের করে দিচ্ছেন হল থেকে একরাশ বিরক্তি দিয়ে তেমনি সৌখিনতা করতে গিয়ে প্রডিউসারের লগ্নি ভাঙিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে কোনো ‘অন্য’ স্বপ্ন দেখা ব্যবসায়ী। অতপর সেই নির্মাতাও নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
যেমন উদাহরণ দিয়ে বললে বলা যায়, চলচ্চিত্র প্রযোজক- অভিনেতা ফিরোজ শাহী তার এই পরিণত বয়সে টিভি নাটক প্রযোজনা ছেড়ে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে চলচ্চিত্রে কাজ করবেন বলে স্বপ্নে বুক বেঁধেছিলেন। তার নির্মাতা রয়েল খানও নবাগত। ছবির নাম ‘এই গল্পে ভালোবাসা নেই’। ছবির শুরুতে নির্মাতা প্রযোজককে বোঝালেন অন্য একই ফর্মূলায়। যেমন ১০০টি সিনেমা হলে মুক্তি দিলেই তো প্রথম সপ্তাহেই লগ্নি চলে আসবে! আপনাকে আর কে আটকায়! এরপর দু-তিনটে ছোট স্পন্সর আর টিভিস্বত্ত্ব তো লাভের অঙ্কে থাকছেই এরকম নানা রসালো গল্প। আর সেই রসালো গল্পেই পিছলে পা ভাঙেন রঙিন নেশার বড়ি খাওয়া প্রযোজকরা।
সহজ অঙ্কে, শুরুতেই অনেকেই ভেবে বসেন ‘বাহ! এত সহজেই ছবি ব্যবসা করা যায়?’ আর সাথে তো চলচ্চিত্র নায়িকাদের সাথে শখ্যর উপড়ি পাওনা রয়েছেই। এ যেন সোনায় সোহাগা। কিন্তু বাস্তবে দিন শেষে পিতলও মেলে না।
 ঠিক একই উপায়ে কিছু ছবির ইন-ব্র্যান্ডিং-এর শক্তিতেই ছবির ব্যবসা হয়। এতে কেউ কেউ পার করছেন এক অদ্ভুত ‘সাফল্য সময়’। কিন্তু আদতে কি এটাকেও ইন্ডাষ্ট্রির সাফল্য বলা যায়? যেমন প্রযোজক ফেরদৌসের ‘এক কাপ চা’, মাহফুজ আহমেদের ‘জিরো ডিগ্রী’ বা একটি চ্যানেল কর্মকর্তার প্রযোজনায় ‘তাঁরকাঁটা’, তিনটি ছবিই গল্পের অসঙ্গতি আর প্রকট দূর্বল গল্পের কারণে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এসব ছবি হলে দর্শক পায়নি, কিন্তু অন্য উপায়ে খরচাদি ওঠাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। ফলে প্রচারের তাণ্ডব আর কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং এবং মিডিয়ার প্রচারের কারণে হয়তো নির্মাতা-কলাকুশলীরা খুব খুশিই থাকছেন। কিন্তু যে দর্শক সিনেমা হলে ঢুকছেন তার চোখে মুখে মুগ্ধতা আর থাকে না। ফলে হল থেকে বেরিয়ে সেই দর্শক তার আর ১০ বন্ধুকে জোর গলায় বলতে পারছেন না যে ‘ছবিটাতে গল্পের টান টান মুখরতা আছে, তোরাও দেখে আয়।’
অন্যদিকে এই নির্মাতারা নিয়মিত নাটকের পাশাপাশি মাঝে মাঝে সিনেমা বানাতে এসে এই কাণ্ডগুলো ঘটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের বারোটা বাজিয়ে চলছেন। যেমন শাহীন কবির টুটুল একটি টেলিফিল্মকে জোর করে চলচ্চিত্র বানিয়ে হলেন সমালোচিত। এরপর তিনি ‘গোল্লাছুট’ নামের একটি চলচ্চিত্র করার ঘোষণা দিয়ে গান তৈরি করে সেই ছবিটির ভবিষ্যতকে কাফনে মুড়িয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ছবিটির প্লে-ব্যাক শিল্পী আসিফ বলেন, ‘এটা এক ধরণের প্রতারণা। কারণ ছবির নাম করে গান গাইয়ে আর কোনো খবর থাকে না। তাই আমি গানটিকে নিজের প্রডাকশনেই ব্যবহার করবো। কারণ এতে চলচ্চিত্র করার নামের প্রতারকদের কোনোকিছু না হলেও শিল্পীদের কাজের মৃত্যু হয়।’
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts