বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ে
গত বছর প্রায় দুই মাস পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেমিস্টার পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেশনজটের কবলে পড়লেন এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অনেকে জানান,
বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগের বেপরোয়া
কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রশাসন কার্যকর
পদক্ষেপ না
নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে বর্তমানে ৫
হাজার ৯০৮ জন পড়াশোনা করছেন।
২০০৩ সালে
সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান চালু হওয়ার পর কোনো সেশনজটে পড়তে হয়নি শিক্ষার্থীদের। ২০১৪ সালের শুরুর
দিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও
টানা হরতালের
মধ্যেও একদিনও পাঠদান (ক্লাস) ও পরীক্ষা বন্ধ থাকেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনের অদক্ষতা ও কিছু শিক্ষার্থীকে
নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে তাঁদের
অক্ষমতার কারণেই
সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ল। অতীতের সব সুনাম নষ্ট করে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে কলুষিত করল।’
২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী সংগঠনটির এক নেতাকে পিটিয়ে আহত করেন।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষে
অধ্যয়নরত আহত ওই
নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ পরে মারা যান। তিনি ছাত্রলীগের আশরাফুল হক হল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন
করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময়
২৩ দিন
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে।
একই বছরের ২১ মে একজন শিক্ষকের মানহানির অভিযোগ এনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক সপ্তাহ
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। এ ঘটনার
জন্যেও ছাত্রলীগকে
দায়ী করা হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন্দলেও তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকে।
এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিবাদে টানা ৩৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
থাকে। ১৯ জানুয়ারি দুই পক্ষের
সংঘর্ষের সময়
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বয়রা গ্রামের শিশু রাব্বি (১০) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। কিন্তু ওই বছর শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় বলে জানান
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
২০১৪ সালে কয়েক দফায় ৫৫ দিন বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়েছেন সব অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের
শিক্ষার্থীরা। জানুয়ারি মাসে স্নাতকোত্তর
(মাস্টার্স)
শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হয়। কিন্তু চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো শেষ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে পারেননি। অর্থাৎ জানুয়ারি-জুন সেশনে ভর্তি না হতে পারায় ছয় মাসের
সেশনজটে পড়লেন প্রায় এক হাজার
শিক্ষার্থী।
আশিফুল ইসলাম নামের শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন,
‘জানুয়ারি মাসেই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার
ব্যাপারে ডিনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে
কয়েকবার অনুরোধ
করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। শিক্ষাজীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেল ছয়টা মাস।’
এদিকে যেসব শিক্ষার্থী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তৃতীয় বর্ষের শেষ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা
শেষ করবেন, তাঁরাও সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ক্লাস ও পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত তাঁরা।
ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক মেজবাউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ বর্ষে উঠতে
যাচ্ছেন, তাঁরা সেশনজটে পড়বে কি না সেটি এখন বলা যাবে না। তবে সেশনজট মুক্ত রাখতে
কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপাচার্য মো. রফিকুল হকের বক্তব্য জানতে তাঁর দুটি
মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।