এনটিপিসি
বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত
মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামে পৃথক কোম্পানি করে এই
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর উৎপাদনক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট।
জিপিএফজির বিনিয়োগের নৈতিক অবস্থানটি দেখভাল করে নরওয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিনিয়োগ তদারকি সংস্থা কাউন্সিল অব এথিকস।
ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী এনটিপিসিতে জিপিএফজির বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। এই অর্থ নরওয়ের সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতার টাকা। কাউন্সিল অব এথিকস সুপারিশে বলেছে, যেহেতু এনটিপিসি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা, নির্মাণ, পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এই প্রকল্প যেহেতু সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই এনটিপিসি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা উচিত।
ভারতীয় কোম্পানি থেকে নরওয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় শঙ্কর তাম্রকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। আপনি এনটিপিসির সঙ্গে কথা বলেন।’
ওয়েবসাইটে দেওয়া ভারতের এনটিপিসির জনসংযোগ বিভাগে ফোন করলে কেউ ধরেননি। পরে ই-মেইল করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
নরওয়ের কাউন্সিল অব এথিকসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (বিজ্ঞান) এরিক ফরবার্গের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার ভিত্তিতে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য প্রতিবেদনেই সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া আছে।’
তবে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের পরিচালক রবীন্দ্রনাথ সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বছরে আগস্টে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে আপত্তি তোলে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ বন্ধ না করলে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশন সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারানোর ঝুঁকির কথা জানায়।
নরওয়ের জনগণের অর্থ কোনো অনৈতিক, অমানবিক বা পরিবেশবিধ্বংসী কোনো খাতে বিনিয়োগ করা হলো কি না, তা তদারক করে কাউন্সিল অব এথিকস। সংস্থাটি গত ৩ ডিসেম্বর রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনে কী ধরনের ক্ষতি করবে, তার ওপরে ১৯ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশেই বাঘ ও ডলফিনের সংরক্ষিত এলাকাটি ইউনেসকো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এবং এর ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি কারণে সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত, কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং কয়লা সুন্দরবনের ভেতরের পশুর নদ দিয়ে বনের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত আক্রাম পয়েন্টে খালাস করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যও ওই পথেই নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ছাই বের হবে, যা থেকে মারাত্মক দূষণকারী মার্কারি, আর্সেনিক ও অন্যান্য ভারী ধাতু নদের পানিতে পড়তে পারে। ওই ছাই সুন্দরবনের জৈববস্তুর সঙ্গে মিশে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করবে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের নদী খনন করতে হবে। এতে তিন কোটি কিউবিক মিটার মাটি নদী থেকে তোলা হবে, যা দিয়ে ২০০টি ফুটবল মাঠ বানানো সম্ভব। এই বিপুল পরিমাণে মাটি কোথায় রাখা হবে, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। নদী খননের ফলে বিপুল পরিমাণে অ্যাসিড মাটি থেকে উঠে আসবে। এতে সুন্দরবন শ্বাসমূলীয় ও জলজ প্রাণীদের সেখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
কাউন্সিল অব এথিকস সূত্রে জানা গেছে, তারা সুন্দরবন সম্পর্কে ওই তিনটি উদ্বেগের বিষয়ে জানতে এনটিপিসির সঙ্গে গত মার্চে যোগাযোগ করে। উত্তরে এনটিপিসি থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ এবং তাদের বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে এত দূরে যে তা বনটির পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দূরত্ব সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনটিপিসি সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবস্থাপনা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও সন্তোষজনক নয়। এই প্রেক্ষাপটে কাউন্সিল অব এথিকস ইউনেসকো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের স্বতন্ত্র, উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সুপারিশও মানা হয়নি।
নরওয়ের এই কাউন্সিল অব এথিকস ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে মোট ১১টি কোম্পানি থেকে সে দেশের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে সুপারিশ করেছে। তাতে রামপাল ছাড়াও আছে স্পেনের জ্বালানি কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি রেপসোল এসএ (অভিযোগ, কয়েকটি দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন), ব্রিটিশ স্বর্ণখনি কোম্পানি রেন্ডগোল্ড রিসোর্স (মালিতে যুদ্ধ এবং সংঘাতে যুক্ত হওয়া) উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের তেল-গ্যাস কোম্পানি সোকো ইন্টারন্যাশনাল, হংকংভিত্তিক কৃষি-জ্বালানি কোম্পানি নোবেল গ্রুপ, চীনের চায়না ওশেন রিসোর্সেসের বিরুদ্ধে পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগ এনে বিনিয়োগ তুলে নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে চীনের রাষ্ট্রীয় অটোমোবাইল কোম্পানি ডংফেং মোটরের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক খনিজ সম্পদ উত্তোলনকারী কোম্পানি তাহোই রিসোর্সেসের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী ইনোফোসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নৈতিক কারণে এবং চীনের চায়না রেলওয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নরওয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
এরই মধ্যে জিপিএফজি ডংফেং মোটর থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রেপসোল এসএ এবং সোকো ইন্টারন্যাশনালের বিষয়ে সুপারিশ বিবেচনায় বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এনটিপিসিসহ অন্য কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান যে অনৈতিক ও দুঃখজনক, তা নরওয়ের কাউন্সিল অব এথিকসের সুপারিশের মাধ্যমে আবারও সামনে এল। বাংলাদেশ সরকারেরও দায়িত্ব সুন্দরবনের জন্য ধ্বংসকারী এই প্রকল্প থেকে সরে আসা। কেননা, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি এই সরকারের আমলেই সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে।
জিপিএফজির বিনিয়োগের নৈতিক অবস্থানটি দেখভাল করে নরওয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিনিয়োগ তদারকি সংস্থা কাউন্সিল অব এথিকস।
ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী এনটিপিসিতে জিপিএফজির বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। এই অর্থ নরওয়ের সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতার টাকা। কাউন্সিল অব এথিকস সুপারিশে বলেছে, যেহেতু এনটিপিসি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা, নির্মাণ, পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এই প্রকল্প যেহেতু সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই এনটিপিসি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা উচিত।
ভারতীয় কোম্পানি থেকে নরওয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় শঙ্কর তাম্রকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। আপনি এনটিপিসির সঙ্গে কথা বলেন।’
ওয়েবসাইটে দেওয়া ভারতের এনটিপিসির জনসংযোগ বিভাগে ফোন করলে কেউ ধরেননি। পরে ই-মেইল করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
নরওয়ের কাউন্সিল অব এথিকসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (বিজ্ঞান) এরিক ফরবার্গের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার ভিত্তিতে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য প্রতিবেদনেই সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া আছে।’
তবে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের পরিচালক রবীন্দ্রনাথ সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বছরে আগস্টে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে আপত্তি তোলে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ বন্ধ না করলে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশন সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারানোর ঝুঁকির কথা জানায়।
নরওয়ের জনগণের অর্থ কোনো অনৈতিক, অমানবিক বা পরিবেশবিধ্বংসী কোনো খাতে বিনিয়োগ করা হলো কি না, তা তদারক করে কাউন্সিল অব এথিকস। সংস্থাটি গত ৩ ডিসেম্বর রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনে কী ধরনের ক্ষতি করবে, তার ওপরে ১৯ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশেই বাঘ ও ডলফিনের সংরক্ষিত এলাকাটি ইউনেসকো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এবং এর ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি কারণে সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত, কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং কয়লা সুন্দরবনের ভেতরের পশুর নদ দিয়ে বনের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত আক্রাম পয়েন্টে খালাস করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যও ওই পথেই নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ছাই বের হবে, যা থেকে মারাত্মক দূষণকারী মার্কারি, আর্সেনিক ও অন্যান্য ভারী ধাতু নদের পানিতে পড়তে পারে। ওই ছাই সুন্দরবনের জৈববস্তুর সঙ্গে মিশে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করবে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের নদী খনন করতে হবে। এতে তিন কোটি কিউবিক মিটার মাটি নদী থেকে তোলা হবে, যা দিয়ে ২০০টি ফুটবল মাঠ বানানো সম্ভব। এই বিপুল পরিমাণে মাটি কোথায় রাখা হবে, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। নদী খননের ফলে বিপুল পরিমাণে অ্যাসিড মাটি থেকে উঠে আসবে। এতে সুন্দরবন শ্বাসমূলীয় ও জলজ প্রাণীদের সেখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
কাউন্সিল অব এথিকস সূত্রে জানা গেছে, তারা সুন্দরবন সম্পর্কে ওই তিনটি উদ্বেগের বিষয়ে জানতে এনটিপিসির সঙ্গে গত মার্চে যোগাযোগ করে। উত্তরে এনটিপিসি থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ এবং তাদের বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে এত দূরে যে তা বনটির পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দূরত্ব সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনটিপিসি সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবস্থাপনা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও সন্তোষজনক নয়। এই প্রেক্ষাপটে কাউন্সিল অব এথিকস ইউনেসকো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের স্বতন্ত্র, উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সুপারিশও মানা হয়নি।
নরওয়ের এই কাউন্সিল অব এথিকস ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে মোট ১১টি কোম্পানি থেকে সে দেশের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে সুপারিশ করেছে। তাতে রামপাল ছাড়াও আছে স্পেনের জ্বালানি কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি রেপসোল এসএ (অভিযোগ, কয়েকটি দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন), ব্রিটিশ স্বর্ণখনি কোম্পানি রেন্ডগোল্ড রিসোর্স (মালিতে যুদ্ধ এবং সংঘাতে যুক্ত হওয়া) উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের তেল-গ্যাস কোম্পানি সোকো ইন্টারন্যাশনাল, হংকংভিত্তিক কৃষি-জ্বালানি কোম্পানি নোবেল গ্রুপ, চীনের চায়না ওশেন রিসোর্সেসের বিরুদ্ধে পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগ এনে বিনিয়োগ তুলে নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে চীনের রাষ্ট্রীয় অটোমোবাইল কোম্পানি ডংফেং মোটরের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক খনিজ সম্পদ উত্তোলনকারী কোম্পানি তাহোই রিসোর্সেসের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী ইনোফোসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নৈতিক কারণে এবং চীনের চায়না রেলওয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নরওয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
এরই মধ্যে জিপিএফজি ডংফেং মোটর থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রেপসোল এসএ এবং সোকো ইন্টারন্যাশনালের বিষয়ে সুপারিশ বিবেচনায় বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এনটিপিসিসহ অন্য কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান যে অনৈতিক ও দুঃখজনক, তা নরওয়ের কাউন্সিল অব এথিকসের সুপারিশের মাধ্যমে আবারও সামনে এল। বাংলাদেশ সরকারেরও দায়িত্ব সুন্দরবনের জন্য ধ্বংসকারী এই প্রকল্প থেকে সরে আসা। কেননা, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি এই সরকারের আমলেই সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে।