ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে তরুণরা যথেষ্ট সচেতন নয়। তাঁদের সচেতন করার দায়িত্ব অভিভাবকদের। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, সন্তানকে যেভাবে সাঁতার শেখানো হয়, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে এখনকার ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে শেখাতে হবে ।
তরুণদের অনলাইন সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি
গবেষণা করেছেন মার্কিন গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, অধিকাংশ তরুণই ফেসবুকের
মতো সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্কে ব্যক্তিগত তথ্য আপলোড করেন কিন্তু এতে যে
ঝুঁকি রয়েছে সেটি বিবেচনায় করেন না। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট
ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য পেয়েছেন। খবর
আইএএনএসের।
মার্কিন গবেষকেরা দাবি করেছেন, ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট আপলোড করার সময় তা নিয়ে তরুণরা চিন্তাভাবনা
করেন না। কিন্তু সেই তুলনায় বয়স্করা কিছুটা বেশি সচেতন থাকেন। তরুণরা আগে
ছবি বা তথ্য প্রকাশ করার পর তার প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় আনেন।
গবেষকেরা
তরুণদের নিয়ে গবেষণার জন্য পিউ রিসার্চ সেন্টার ২০১২ এর ‘টিনস অ্যান্ড
প্রাইভেসি ম্যানেজমেন্ট’ জরিপের তথ্য ব্যবহার করেছেন। ওই জরিপে
যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮৮ জন তরুণ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের আচরণ নিয়ে জরিপ
চালানো হয়।
গবেষক হাইয়ান জিয়া এই গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন,
প্রাপ্তবয়স্করা অনলাইনে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে
সচেতন থাকলেও তরুণরা বিষয়টি নিছকই পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেন।
তরুণরা
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে নিজেকে জাহির করার প্ল্যাটফর্ম ও অন্যদের কাছে
গ্রহণযোগ্যতার উপায় হিসেবে ধরে নেন বলে তাঁরা প্রায় অনলাইন ঝুঁকির মধ্যে
পড়ে যান। যখন তাঁরা প্রাইভেসি নিয়ে ঝুঁকির বিষয়টি বুঝতে পারেন তখন তা থেকে
মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন। এ সময় তাঁরা বয়স্কদের কাছ থেকে পরামর্শ দেন বা
অনলাইনের তথ্য মুছে দেন। অনেক সময় পুরোপুরি অফলাইনেও চলে যান।
১৭
মার্চ কম্পিউটার সাপোর্টেড কোঅপারেটিভ নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সোশ্যাল কম্পিউটিং
নামের সম্মেলনে এই গবেষণার ফল জানান গবেষকেরা। গবেষক জিয়া বলেন, ‘অনেক সময়
মা বাবা সন্তানকে ঝুঁকি এড়াতে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট
ব্যবহার থেকে পুরোপুরি দূরে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু এতে অন্য সমস্যা
দেখা দেয়। ইন্টারনেট বা অনলাইন যোগাযোগ বাদ দিয়ে তরুণদের বেড়ে ওঠা এখন
কল্পনা করা যায় না। কিন্তু তাদের অনলাইনের ঝুঁকি সম্পর্কে না জানালে যেমন
বিপদ ঘটতে পারে তেমনি তাদের ইন্টারনেট বঞ্চিত করলে ইন্টারনেটের ইতিবাচক
সুবিধাগুলোও তারা পায় না। এতে তারা কীভাবে ঝুঁকি এড়াতে হয় বা নিরাপদ উপায়ে
অনলাইন ব্রাউজ করতে হয় তা শেখে না।
জিয়া পরামর্শ দিয়ে বলেন, তরুণদের
ইন্টারনেট সম্পর্কে জানানো অনেকটাই সাঁতার শেখানোর মতো বিষয়। সন্তান যেন
ধীরে ধীরে পানিতে নামে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে তা খেয়াল রাখতে হবে এবং নিজে
গভীর জলে গিয়ে সাঁতার কাটার আগে কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় তা শিখিয়ে দিতে
হবে।’