National news - তিস্তা সেচ খালে পানি নেই, বিপাকে বোরো চাষিরা


তিস্তা সেচখালে পানি নেই। ডিজেল-চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন সেচখালের আওতাভুক্ত কৃষকেরা। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বিশমুড়ি গ্রামের দিনাজপুর সেচখালের পাশ থেকে তোলা। ছবি: মীর মাহমুদুল হাসান
বোরো আবাদ করা নীলফামারীর চাষিরা তিস্তা সেচ খালে পানি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। সেচ খালের উৎসমুখে পানি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।


আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নীলফামারী সদরের ওপর দিয়ে যাওয়া তিস্তা সেচ প্রকল্পের দিনাজপুর সেচ খালের আওতাভুক্ত এলাকা ঘুরে কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।


জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের চাঁদেরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুর সেচ খালটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। সেচ খালে পানি না থাকার কারণে শুকিয়ে আছে শাখা খালগুলোও। ওই খালের পাশ ঘেঁষে কৃষকেরা তাঁদের বোরো খেত বাঁচানোর জন্য ডিজেল-চালিত সেচ পাম্প দিয়ে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।


ডিজেল-চালিত সেচ পাম্প মালিকেরা বলছেন, আগে কিছু পানি পাওয়া গেলেও প্রায় এক মাস ধরে সেচ খালে পানি না থাকায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ কারণে একটি জমিতে সেচ দিতে একাধিক স্থানে তাদের বোরিং করতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ।


রামনগর ইউনিয়নের বিশমুড়ি গ্রামে সেচ খালের পাশে ডিজেল-চালিত সেচ পাম্পে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই গ্রামের কৃষক দেলোয়ার রহমান। তিনি জানালেন, বোরো লাগানোর সময় দুবার তিনি খালের পানি পেয়েছেন। কিন্তু এক মাস ধরে কোনো পানি নেই। বাধ্য হয়ে মানুষের নষ্ট হওয়া স্যালো মেশিন দুই হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে মেরামত করে তিনি পানির জন্য বোরিং করছেন। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে চারবার চার জায়গায় বোরিং করেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বলছে পানি আসবে; কিন্তু পানি আসে না। জানালেন, এ বছর তিনি ছয় বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছেন।
ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বললেন, সেচ খালের পানি দিয়ে তিনি চার বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছিলেন। আর পানির অভাবে পাঁচ বিঘা জমি পতিত আছে। এখন সেচ খালে পানি না থাকায় ওই চার বিঘা জমির বোরো খেতও রক্ষা করা যাচ্ছে না। ডিজেল-চালিত সেচ পাম্প দিয়ে প্রতিদিন সেচ দিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সেচ খালে পানি না এলে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তাঁর দাবি, সেচ খাল হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে এমন অবস্থা কখনো হয়নি। পানি থাকবে না-এটা পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের আগে জানালে কৃষকেরা বিকল্প প্রস্তুতি নিতেন।
তিস্তা সেচখালে পানি নেই। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর সেচখালের আওতাভুক্ত নীলফামারীর রামনগর ইউনিয়নের চাঁদেরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মীর মাহমুদুল হাসানওই এলাকার সেচ পাম্প মিস্ত্রি মতিয়ার রহমান বলেন, আগে এসব এলাকায় দুই-একটা সেচ পাম্প ছিল। এখন মাঠজুড়ে স্যালো মেশিন চলছে। গত এক মাসে তিনি প্রায় ১০০ মেশিন মেরামতের কাজ করেছেন বলে জানান।


পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সহিদ প্রথম আলোকে বলেন, উৎসমুখে পানি না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ অবস্থা চলছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে গতকাল বুধবার ২১০ কিউসেক ও আজ ৩০০ কিউসেকের নিচে পানি পাওয়া গেছে, যা নদীর চোয়ানো পানি। ওই পানি দিয়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব। এ কারণে দিনাজপুর সেচ খালের জলঢাকা উপজেলার দুন্দিবাড়ি থেকে দিনাজপুরের রানীর বন্দর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় সেচ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। তবে তাঁর দাবি, তাঁরা জানুয়ারি মাস থেকে কৃষকদের বলে আসছেন, এ বছর পানি দেওয়া যাবে না। নিজ উদ্যোগে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, এ বছর জেলায় ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সেচ খালের আওতায় হয়েছে ১০ হাজার হেক্টরে। সেচ খালে পানি না থাকার কারণে ওই সব কৃষক সেচপাম্প ব্যবহার করছেন, এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts