জাহাজে কর্মকর্তা ও রেটিং—এই দুই ধরনের লোকবল থাকে।
রেটিং হিসেবে কর্মরতদের সাধারণ নাবিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণত প্রতি
জাহাজে ২০ থেকে ২৫ জন কর্মরত থাকেন। এর মধ্যে কর্মকর্তা ১১ জন এবং রেটিং ১০
থেকে ১৪ জন। তবে জাহাজে রেটিং হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর পরীক্ষা দিয়ে
অনেকে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার নজির আছে।
রেটিং বা নাবিক
প্রশিক্ষণের জন্য আছে একমাত্র সরকারি নাবিক প্রশিক্ষণ একাডেমি ‘ন্যাশনাল
মেরিটাইম ইনস্টিটিউট’। গত বছর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের মাদারীপুরে একটি শাখাও
চালু হয়েছে। প্রতিবছর দুই ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করানো হয়। এ ছাড়া
বেসরকারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানও নাবিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মাত্র পাঁচ থেকে
ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরির যোগ্য করে তোলা হয় এসব
প্রতিষ্ঠানে। সরকারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় হোস্টেলে থাকতে হয়।
থাকা-খাওয়া ও শিক্ষাসামগ্রীসহ খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি
প্রশিক্ষণ একাডেমিতে এ খরচ দাঁড়ায় পাঁচ-ছয় লাখ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে
নাবিকদের চাহিদা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশের নাবিকেরা কয়েকটি দেশে
ভিসা পেতে জটিলতা, জাল সনদে চাকরিসহ নানা কারণে জাহাজে নিয়োগ পেতে বিলম্ব
হচ্ছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এ অবস্থা সাময়িক। বাজার ধরতে পারলে দক্ষ
জনশক্তি রপ্তানির প্রধান খাত হয়ে উঠতে পারে এটি। দেশে নিবন্ধিত নাবিকের
সংখ্যা তিন হাজার ৬৯৮ জন। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত গড়ে দেড় হাজার নাবিক জাহাজে
কর্মরত থাকেন। ন্যূনতম ছয় মাস থেকে এক বছরের চুক্তিতে চাকরির পর বিরতি দিয়ে
আবার সুযোগ পেলে কাজে যোগ দেন নাবিকেরা।
যোগ্যতা :
ডেক ও ইঞ্জিন শ্রেণিতে প্রশিক্ষণার্থী রেটিংয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে
ন্যূনতম এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ২.৫। সেলুন (স্টুয়ার্ড ও কুক) বিভাগে
প্রার্থীদের যোগ্যতা এসএসসি যেকোনো বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫। ন্যাশনাল
মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে প্রতিবছর এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে শিক্ষার্থীদের ভর্তি
পরীক্ষা হয়। লিখিত, মৌখিক ও মেডিকেল টেস্টে উত্তীর্ণরা চূড়ান্ত নির্বাচিত
হিসেবে গণ্য হন। প্রার্থীদের বয়সসীমা হতে হয় ১৬ থেকে ২০ বছর। প্রতি ব্যাচে
১৫০ থেকে ১৭৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এর বাইরে অভিজ্ঞ
প্রশিক্ষণার্থী রেটিং হিসেবে প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। যেমন: ফিটার,
ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার ইত্যাদি বিভাগে ডিপ্লোমাধারী বা
অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরাও প্রশিক্ষণের সুযোগ নিতে পারেন।
বেতন-ভাতা:
জাহাজে লোক নিয়োগকারী সংস্থা বা ম্যানিং এজেন্টরা দেশি-বিদেশি জাহাজে
নাবিকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। লোক নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী
বেতন-ভাতা পান নাবিকেরা। দেশীয় জাহাজগুলোতে নবীন নাবিকেরা ২৫ থেকে ৩০
হাজার টাকা বেতন-ভাতা পান। তবে বিদেশি জাহাজে বেতন-ভাতা অনেক বেশি। সাধারণত
নবীনেরা কম-বেশি ৫০০ ডলার এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে এক থেকে দেড় হাজার
ডলার বেতন-ভাতা পান। তবে বাজার সংকুচিত থাকার সময় অনেক কম বেতনে জাহাজে
চাকরি করতে বাধ্য হয়েছেন অনেক নাবিক।
নাবিক পেশা সম্পর্কে ন্যাশনাল
মেরিটাইম কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র
পাঁচ-ছয় মাসের প্রশিক্ষণে সমুদ্রগামী জাহাজে রেটিং হিসেবে চাকরির সুযোগ
পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে নাবিকদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে
বাংলাদেশি নাবিকদের বাজার বেশ কিছুদিন সংকুচিত ছিল। তবে এখন সরকারি নানা
উদ্যোগের কারণে এই বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে
বাংলাদেশি নাবিকদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি এই
ইনস্টিটিউট থেকে ফিটার কাম ওয়েল্ডার শাখার প্রশিক্ষণার্থীদের জাহাজ ছাড়াও
বিশ্বের যেকোনো জাহাজ নির্মাণশিল্পে চাকরির যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়।’