Lifestyle news - কনকের জীবন ক্যানভাস

সুতি শাড়ি কনকচাঁপা চাকমার প্রিয়৷ ছবি: সুমন ইউসুফচিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। ভালোবাসেন রান্না করতে। সংগ্রহ করেন অ্যান্টিক গয়না।
ব্যস্ত থাকতেই বেশি পছন্দ করেন চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। এর ফাঁকেই চলে ঘোরাঘুরি। কনকচাঁপা বললেন, ‘প্রতিবছর দেশে-বিদেশে অনেক জায়গায় যাই। ঘুরতে গেলেও আমার সঙ্গে একটা স্কেচ খাতা থাকে। পাহাড়, হ্রদ আর ঝরনা প্রবলভাবে টানে। ছোটবেলা থেকেই এ টানটা। রাঙামাটির লেক আর সবুজ আমাকে মুগ্ধ করে বলেই এখনো প্রতিবছর সেখানে ছুটে যাই।’
দেশে-বিদেশে যেখানেই ছবির প্রদর্শনী হোক, উদ্বোধনে সব সময় বেছে নেন স্বজাতীয় (আদিবাসী) পোশাক। এই পোশাকের নকশা দেখে সবাই তাঁর প্রশংসা করেন বলে জানালেন। এ ছাড়া নানা ধরনের রুপার গয়না পরেন। এর মধ্যে আদিবাসী পোশাকের সঙ্গে চার প্রজন্মের পুরোনো গয়না পরে ছবি তুললেন অধুনার জন্য।
পায়ে একটু উঁচু হিল পরতে ভালোবাসেন। ছবি আঁকায় খুঁজে পান আনন্দ। আঁকা শুরু করলে কখন যে সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় বুঝতে পারেন না। একটানা সাত-আট ঘণ্টা কেটে যায় ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে। প্রতিদিন সকাল নয়টার পর ছবি আঁকতে শুরু করেন। এই সময়টা বাড়িতে একাই কাটে তাঁর। একদমই যে একা সেটা বলাও ভুল হবে। কারণ, এ সময়ে তাঁকে সঙ্গ দেয় ছয়টা বিড়াল। ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বিড়ালগুলো নিয়ে সময় কাটান।
নেশা-পেশা ছবি আঁকা, বিড়ালদের সঙ্গে সময় কাটান, রান্না করতে ভালোবাসেনদেশ-বিদেশে বেশি পরেন আদিবাসী পোশাকএই সময়ে শিল্পী বেছে নেন তাঁর পছন্দের ঢিলেঢালা পোশাক। টপ বা ফতুয়ার সঙ্গে ঢোলা পালাজ্জো পরেন তখন। নিমন্ত্রণে গেলে বেছে নেন শাড়ি। নানা ধরনের শাড়ির মধ্যে সুতি বা আরামদায়ক শাড়ি বেশি পরেন। সাজগোজ বলতে তেমন কিছু না, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক। ব্যস, এটুকুই।
দেশের বাইরে গেলে রং, ক্যানভাস ছাড়া আর যে জিনিসটা কিনে আনেন, তা হলো অ্যান্টিক গয়না। নিজ হাতে রান্না করতে ভালোবাসেন। বাসায় অতিথি এলে নানা রকম আদিবাসী খাবার রান্না করেন নিজ হাতে। নিজের ছবিতে ঘুরেফিরে নারীর অবয়বই বেশি চলে আসে জানিয়ে কনকচাঁপা বলেন, ‘এটা কেন হয় জানি না। হয়তো আমি নিজে একজন নারী বলে এমনটা ঘটে। ছবিতে উজ্জ্বল রংই বেশি ভালোবাসি।’ শিল্পীর বসার ঘরের পুরোটা জুড়েই নানা ধরনের শোপিস আর পুরস্কারে ঠাসা। একটা দেয়ালজুড়ে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী সরঞ্জাম। স্বামী চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু, দুই সন্তান আর্য শ্রেষ্ঠ ও শিরোপা পূর্ণা।
কনকচাঁপা চাকমার মা শরৎ মালা চাকমা একজন বুননশিল্পী। আর মেয়ে শিরোপা এরই মধ্যে ছবি তোলা, চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তাই ‘থ্রি জেনারেশন’ শিরোনামে একটা প্রদর্শনীর কাজ গুছিয়ে এনেছেন চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। নিজের কাজের সঙ্গে মা ও মেয়ের কাজ নিয়ে এই ব্যতিক্রম প্রদর্শনীর কথা ভেবেছেন।
কনকচাঁপার বাসায় ছয়টি বিড়াল ছাড়াও আছে চারটি কুকুর। এগুলো আবার বিভিন্ন স্থান থেকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে আনা। পরিবারের সবাই মিলেই তাঁদের সুস্থ করে তুলেছেন। কনকচাঁপা চাকমা বলেন, ‘আমাদের বাসার প্রায় সবগুলো প্রাণীই বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া। এনিমেল শেল্টার নিয়ে কাজ করছি অনেক দিন ধরেই। ভালো লাগে আমাদের সন্তানেরাও প্রাণীদের গুরুত্ব বোঝে এটা দেখে।’ আর এসব নিয়েই কনকচাঁপা চাকমার প্রতিদিনের জীবন।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts