সব
ধরনের খাদ্যশস্যই শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু আঁশজাতীয় শস্যগুলোর
সুনির্দিষ্ট কিছু উপকারী দিক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক বলছেন, এ
ধরনের খাবার মানুষের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি এবং অকালমৃত্যুর আশঙ্কা
কমায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ থেকে ৭১ বছর বয়সী ৩ লাখ ৬৭ হাজার
মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে লেখা ওই গবেষণা প্রতিবেদন বিএমসি
মেডিসিন সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ওই
স্বেচ্ছাসেবীরা কী ধরনের খাবার খান এবং তাঁদের খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয়
শস্যের উপস্থিতি কী পরিমাণ—ইত্যাদি প্রশ্ন করা হয়। গবেষণাকালে দেখা গেছে,
যাঁরা নিয়মিত আঁশজাতীয় খাবারে অভ্যস্ত, ১৪ বছরের মধ্যে তাঁদের মৃত্যুর
আশঙ্কা অন্যদের (যাঁরা সবচেয়ে কম আঁশজাতীয় খাবার খায়) তুলনায় ১৭ শতাংশ কম।
আর যাঁরা এ ধরনের খাবার সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খান, ওই সময়ের মধ্যে তাঁদের
মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম।
আঁশজাতীয় খাবার মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে মৃত্যুর
আশঙ্কা থেকে অনেকটাই মুক্ত রাখে। গবেষণাকালীন ওই স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন
রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়,
ডায়াবেটিসের রোগে মৃত্যুর হার সামগ্রিক শস্যজাতীয় খাবারে অভ্যস্ত
স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে অন্যদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। এসব শস্য বেশি পরিমাণে
খেলে শ্বাসতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি ১১ শতাংশ, হৃদ্রোগের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ এবং
ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে। কিন্তু পরে তাঁদের ওপর কেবল
আঁশজাতীয় খাবারের প্রভাব যাচাই করে দেখা যায়, এগুলো অনেক বেশি উপকারী।
অন্যান্য শস্যের উপকারিতার পাশাপাশি বাড়তি কিছু উপকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে
আঁশজাতীয় খাদ্যশস্যে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক লু কি বলেন, মানুষ খাওয়ার
জন্য শস্য ও বীজের চাষ করে। সামগ্রিক শস্য বলতে সম্পূর্ণ শস্যদানাটিকে
বোঝায়, যার মধ্যে রয়েছে খোসা বা শস্যদানাটির বাইরের স্তর এবং ভেতরের
অংশটিও রয়েছে। কিন্তু আঁশ বলতে কেবল শস্যের খোসা বা বাইরের অংশটিকেই
বোঝায়। তবে সামগ্রিক শস্যে আঁশজাতীয় উপাদান বেশি রয়েছে—এমন খাবার বেশি
খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিক শস্যও
অকালমৃত্যু ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়। দিনে অন্তত ২৮ গ্রাম পরিমাণ
সামগ্রিক শস্য খেলে ২৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। তবে শারীরিক
ব্যায়াম, ওজনের ভারসাম্য সূচক (বিএমআই), ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি
ইত্যাদি প্রভাবকও এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।