‘অসুস্থ হওয়ার সুযোগ কই! অসুস্থ হলে সবকিছু কে
সামলাবে!’ স্বজনদের কেউ কোনো নারীর কাছে শারীরিক সুস্থতার কথা জানতে চাইলে
এরকম অসহায়ত্বই ফুটে ওঠে অনেক নারীর কথায়। নারীরা প্রতিদিন গৃহস্থালি
কাজে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় দেন সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক রকম
পরিশ্রমের। আর পেশাজীবী নারী হলে তো কথাই নেই, ঘরে-বাইরে দুই জায়গাতেই
খাটতে হয় সমান তালে। ঘর-বাহির সামলাতে গিয়ে অনেক নারীই যেন নিজের
শারীরিক-মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকির কথা ভাববার সময় পান না। কিন্তু সব
সামলাতে হয় বলেই নিজেকে নিয়ে সচেতন হতে হবে। জিনিউজের প্রতিবেদন অবলম্বনে
নারীর শীর্ষ পাঁচ স্বাস্থ্য সমস্যার কথা তুলে ধরা হলো।
হৃদরোগ
হৃদরোগের
কথা আসলেই চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে সেটা যেন ‘হৃদরোগাক্রান্ত কোনো
পুরুষের ছবি’। কিন্তু বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হৃৎপিণ্ড ও
ধমনীর রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ। বুকে ব্যথা না হলেও কোনো এক হাত বা দুই
হাতে ব্যথা, গলা ও ঘাড়ে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা কিংবা পাকস্থলীর সমস্যা
হলেও দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান, পরামর্শ নিন।
স্তন ক্যানসার
২০
থেকে ৫৯ বছরের নারীদের ক্যানসারে মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী মারা
যান স্তন ক্যানসারে। একসময় এটা চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের সমস্যা বলে ধরে
নেওয়া হলেও এখন তরুণতরদের মধ্যেও স্তন ক্যানসার দেখা যাচ্ছে। পরিবারের
অন্য কারও স্তন ক্যানসার থাকা, বিআরসিএ জিন, বুকে তেজস্ক্রিয় রশ্মির
থেরাপি, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, বেশি বেশি লাল মাংস খাওয়া স্তন
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া জীবনযাপনে অতিরিক্ত প্রসাধনী
নির্ভরতা, বাহুমূলে বেশি মাত্রায় গন্ধনাশকের ব্যবহার থেকেও স্তন
ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
সার্ভিকাল ক্যানসার
বিশ্বজুড়ে নারীদের
ক্যানসারে মৃত্যুর চতুর্থ বড় কারণ সার্ভিকাল ক্যানসার। ভারতে নারীমৃত্যুর
অন্যতম প্রধান একটি কারণ এটি। দেশটিতে প্রতিবছর ৩৩ হাজার নারী এই রোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হিউম্যান পাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) সার্ভিকাল
ক্যানসারের কারণ। বিশেষ যৌন আচরণ থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এ
ছাড়া অনিরাপদ যৌন সংস্রবের কারণে হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস
(এইচআইভি) থেকে সার্ভিকাল ক্যানসার হতে পারে।
ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন
কিডনি, জরায়ু,
মূত্রথলি ও মূত্রনালিতে সংক্রমণের রোগ এটি। ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন
(ইউটিআই) পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়।
অন্তত অর্ধেক নারীই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এ ধরনের একটি সংক্রমণে
আক্রান্ত হয়। নিয়মিত পানি পান না করা এবং প্রস্রাব আটকে রাখা শহুরে
নারীদের মধ্যে এমন সংক্রমণের একটি সাধারণ কারণ। এ ছাড়া যৌন সংস্রব এবং
পরিবারে অন্য কারও এ রোগ থাকাটাও এ ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি হতে পারে।
বিষাদগ্রস্ততা
বিষাদগ্রস্ততার ঝুঁকিতে অনেক
ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষের তুলনায় এগিয়ে থাকেন। সামাজিক কাঠামো ও
জীবনযাপনের ধরন বিষাদগ্রস্থতার একটি বড় কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে
উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশ সব জায়গাতেই নারীদের রোগাক্রান্ত হওয়ার
একটি বড় কারণ ডিপ্রেশন বা বিষাদগ্রস্ততা। গর্ভধারণের পর (পোস্টাপার্টাম)
এবং মাসিক ঋতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর (মেনোপজ) অনেক নারী বিষাদগ্রস্ততায়
আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া দাম্পত্য সম্পর্ক ও যৌন জীবন বিষাদগ্রস্ততার
একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত।