শিশুর পেটে ব্যথা হলে মা-বাবা খুব উদ্বিগ্ন
হয়ে পড়েন। হওয়ারই কথা। কেননা, শিশুরা পেটব্যথা শুরু হলে কাঁদে এবং কখনো
কখনো ব্যথায় কাতরাতে থাকে। আবার প্রায়ই পেটব্যথা হলে বেশির ভাগ মানুষ
ভাবেন—ও কিছু নয়, হয়তো কৃমি হয়েছে। তবে পেটব্যথা হলেই কৃমির সংক্রমণ
ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। শিশুদের পেটব্যথার আছে অনেক কারণ, যেমন: চকলেট, জুস
বা বাইরের জীবাণু পেটে গেলে পেটে ব্যথা করে। বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের
ভারী খাবারও অনেকের সহ্য হয় না। পেটে সংক্রমণ বা গ্যাস, খাবারে
অ্যালার্জি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে সংক্রমণ, বয়ঃসন্ধিকালের
সমস্যা ছাড়াও টিউমার, অ্যাপেন্ডিসাইটিসসহ বিভিন্ন সার্জিক্যাল সমস্যাতেও
শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে। বিষয়টিকে তাই উড়িয়ে দেওয়ার কিছু নেই।
পেটে
গ্যাস কিংবা সংক্রমণ হলে উপযুক্ত ওষুধে সেরে যায়, তবে শিশুকে এ ধরনের
সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় শেখানো দরকার। খাওয়ার আগে-পরে এবং টয়লেট
ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং মুখে
নোংরা হাত না দেওয়া ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃমি হলে পেটব্যথার
সময়টিতে কৃমির ওষুধ না দিয়ে ব্যথা কমার দু-তিন দিন পরে খাওয়ানো ভালো।
সার্জিক্যাল কারণ থাকলে শিশুবিষয়ক সার্জনের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শিশুর
পেটব্যথা অনেক সময় মানসিক কারণেও হয়। শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে, পড়া
ভালো না লাগলে, পরিবারে অশান্তি থাকলে, বন্ধুরা কোনো বিষয় নিয়ে উত্ত্যক্ত
করলে, হঠাৎ বাসা পরিবর্তন বা বন্ধু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে পেটব্যথার মতো
উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই ব্যথা কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয় বরং তার মনের গহিনে
যে টানাপোড়েন চলে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পেটে ব্যথার মাধ্যমে। এসব ক্ষেত্রে
পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়,
সন্তানের ব্যথা মানসিক নাকি কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেই হচ্ছে। লক্ষণগুলো
হলো:
১. তিন বছরের নিচে পেটে ব্যথা হলে তা সাধারণত রোগের কারণেই হয়ে থাকে।
২.
রোগের কারণে ব্যথা হলে শিশুরা সুনির্দিষ্টভাবে ব্যথার জায়গাটা দেখাতে
পারে আর মানসিক কারণে হলে সেভাবে দেখাতে পারে না বা একেকবার একেক স্থানে
দেখায়।
৩. ব্যথার সঙ্গে জ্বর, র্যাশ, হাড়ে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হলে বুঝতে হবে, অবশ্যই সে ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।
৪. ব্যথার কারণে শিশুর ঘুম ভেঙে গেলে কখনোই তা মানসিক নয়।
মনোরোগের
কারণে ব্যথা হলে শিশুসন্তানকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। বকাঝকা না করে
কারণটা বের করতে হবে এবং অবশ্যই শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা
নিতে হবে।
কখন হাসপাতালে নেবেন
কখন হাসপাতালে নেবেন
ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়, অনবরত বমি হয়, পেট
শক্ত হয়ে যায়—সে ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ
জানার আগে শিশুকে কিছুই খাওয়ানো উচিত নয়।
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল