Media news - নারীর চোখে চলচ্চিত্র

নারীর চোখে চলচ্চিত্র
ঢাকায় আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উত্সব হয়ে গেল। উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এবারের উত্সবের শ্লোগান ছিল
‘নারীর চোখে চলচ্চিত্র’। উত্সবটি  উত্সর্গ করা হয় নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত
হোসেনকে। জানাচ্ছেন সামিহা সুলতানা অনন্যা ও মোহাম্মদ ওমর ফারুক

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উত্সব শেষ হয়ে গেল গত সপ্তাহে। উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এবারের উত্সবের শ্লোগান ছিল ‘নারীর চোখে চলচ্চিত্র’। উত্সবটি উত্সর্গ করা হয়েছে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে। কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে শুরু হয়ে ৪ দিনব্যাপী এ উত্সবের সমাপ্তি ঘটে। উত্সবটি উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। উত্সবে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি লাইলুন নাহার ইকরাম, মেহেদী হাসান, মশিউর রহমান, রেজওয়ানা খান। উত্সবে দু’জন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন- ইয়াসমিন কবির ও শাহিদা আক্তার। এছাড়া নারীদের চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা করার জন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেয়া হয়। এবারের উত্সবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের নারী নির্মাতাদের মোট ৭০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। প্রতিটি সিনেমার কাহিনীও নারীকে কেন্দ্র করে। সিনেমা প্রদর্শন ছাড়াও উত্সব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিনেমা বিষয়ক কর্মশালা ও সেমিনার। নারীর চোখে চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ও নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা সামিয়া জামান।
নারী নির্মাতাদের জন্য আলাদা
তহবিল দরকার
                                    — সারাহ বেগম কবরী
                                                                       অভিনেত্রী

দেশে নারীরা এখনো অবহেলিত। এখনো মেয়েরা ইভটিজিংয়ের শিকার হন। এ ধরনের উত্সব আরো হওয়া দরকার। নারী নির্মাতাদের জন্য সরকারি পৃথক কোনো তহবিল নেই। পৃথক তহবিল করা দরকার। চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রেরণা জোগাতে এ ধরনের উত্সব কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শন উত্সব আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে। নারীরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে আনতে সরকার সবসময় সচেষ্ট থাকাটা জরুরি। বুদ্ধিচর্চার দিক থেকে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য নেই। চলচ্চিত্র নির্মাণেও তাই নারী দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। চলচ্চিত্রকে সরকার বিশেষ শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। আর্থিক সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়েছে। এফডিসিকেও নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন জোয়ার আসবে। কিন্তু আমরা চাই নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করা হোক। সাফল্য এবং স্বীকৃতিই এখন নারী পরিচালকদের প্রধান উত্সাহ। এর সঙ্গে যদি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের পাশাপাশি অন্যান্য খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসে, সরকার যদি অনুদানের ক্ষেত্রে নারী পরিচালকদের জন্য আলাদা একটা কোটা করেন এবং নারী পরিচালকদের ছবি আয়কর মুক্ত করেন, তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণে নারী পরিচালকদের অগ্রযাত্রা সমৃদ্ধ হবে।

পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো ভালো
কিছু করতে পারবে
                                        — সামিয়া জামান
                                                              চলচ্চিত্র নির্মাতা

১৯৭০ সালে বিন্দু থেকে বৃত্ত চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে রেবেকা বাংলা চলচ্চিত্রে যে পথ এঁকেছিলেন, সে পথেই হাঁটছেন বর্তমান নারী নির্মাতারা। নির্মাণ করছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র কিংবা তথ্যচিত্র। অনেক কিছু জয় করে এখন নারীরা চলচ্চিত্রেও নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, পোশাক ও সাজসজ্জায় বেড়েছে নারীদের উপস্থিতি। ভালো কাজের জন্য তারা পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই সময়ে নারী নির্মাতাদের তালিকা করতে গেলে পাওয়া যাবে অনেকের নাম। সাংস্কৃতিক উন্নয়নে প্রয়োজন নারীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সমাজ ও পরিবারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শুধু ঘর-সংসার, অভিনয়, নাচ-গানের বাইরে একজন নারী নির্মাতাও হতে পারেন চলচ্চিত্রের মতো বিশাল মাধ্যমে ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। সরকারের পক্ষ থেকেও মোটামুটি সহযোগিতা পাচ্ছেন নারীরা। এখন শুধু প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি এবং কাজ করার আগ্রহ। নিশ্চয়ই আলোকিত হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। আর সেখানে ক্যামেরার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা থাকবে নারীদের। নারীদের স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় সে ক্ষেত্রে যদি আবার পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হয় তাহলে তারা এগিয়ে যেতে পারবে না। সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাহলেই নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা অনেক ভালো করতে পারবে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts