National news - লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা


লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ড. অভিজিৎ রায় (৪২) কে হত্যা করেছে। দুর্বৃত্তদের হামলায় তার স্ত্রী ডা. রাফিদা আফরিন বন্যা (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। দুর্বত্তরা তার মাথায় উপর্যুপরি কুপিয়েছে। দুর্বৃত্তদের কোপে তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
অভিজিৎ রায় একজন ব্লগার। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ‘মুক্তমনা’ নামে একটি ব্লগের তিনি প্রতিষ্ঠাতা। ঐ ব্লগে সাম্প্রদায়িক ও উগ্র ধর্মীয় চেতনাবিরোধী লেখালেখি করতেন। তিনি স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী ছিলেন। বুয়েট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশুনা করে সেখানেই শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন অভিজিৎ। দুই মাস পর তিনি পিএইডি ডিগ্রীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন। সেখানেই তিনি সপরিবারের ছিলেন। জানা গেছে, লেখালেখি নিয়ে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীরা।
এবার একুশের বইমেলায় দুটি বই প্রকাশ হয়েছে অভিজিতের। এ কারণে তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি সপরিবারে দেশে ফেরেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তারা বাংলা একাডেমীতে একুশে বই মেলায় ঘুরতে আসেন। রাত সাড়ে সাড়ে ৯ টার সময় স্বামী ও স্ত্রী দুজন টিএসসির সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাত দিয়ে শাহবাগের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত ৪/৫ জন সন্ত্রাসী তাদেরকে হঠাৎ করেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আশেপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তরা ভিড়ের মাঝে মিলিয়ে যায়। ঐ সময় আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা অভিজিতকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়। আধা ঘন্টা চেষ্টার পর সাড়ে ১০ টার দিকে অভিজিৎ রায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
হামলার ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঐ সময় টিএসসিতে পুলিশের একটি টহল গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। বাংলা একাডেমীতে বই মেলায় প্রবেশের পথেও পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনার পরপর টিএসসি থেকে পুলিশ এগিয়ে আসে। তারা প্রথমে এটিকে দাম্পত্য কলহের জের ধরে হামলা চালানো হয়েছে মনে করে ঘাতকদের অনুসরণ করেনি। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলটি পরিদর্শন করা হয়েছে। হামলার মোটিভ শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অভিজিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে লেখক ও ব্লগাররা ছুটে যান। ছুটে যান অভিজিতের বাবা অজয় রায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কারা অভিজিৎকে হত্যা করেছে-এ ব্যাপারে অজয় রায় কিছুই বলতে পারেননি। ঢাকায় এলে অভিজিৎ রমনার সিদ্বেশ্বরীরর ২/এফ, ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে উঠতেন। তার তৃষা (১৬) নামে একমাত্র কন্যা সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
তবে অভিজিতের একজন সহকর্মী ও ব্লগার জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎ রায় ব্লগে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন। বিশেষ করে উগ্র ধর্মীয় চেতনা ও ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করতেন তাদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। ‘মুক্তমনা’ ব্লগে এসব নিয়ে লেখালেখির কারণে সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে বিশেষ করে শিবির ও হিযবুত তাহরীর কেন্দ্রিক বেশ কিছু ব্লগে তার বিরুদ্ধে লেখালেখি হয়েছে। ‘সদালাপ’নামে একটি ব্লগে তাকে প্রায়ই মৃত্যুর হুমকি দেয়া হতো।
ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।
অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্রতিবাদে রাত ১১ টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে ছাত্র ইউনিয়ন একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক জিলানী শুভ, যবু ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, জাসদ নেতা আকরামুল হক প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা এই হত্যার জন্য জামায়াত-শিবির, হিযবুত তাহরীর ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দায়ী করেন। এ হত্যার প্রতিবাদের আজ সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপারাজেয় বাংলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, কারা হত্যা করেছে- তা তদন্ত করা হচ্ছে। উগ্র ধর্মীয় চেতনার কোন গোষ্ঠী এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সেজন্য হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ও জামায়াত-শিবিরের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ঐ হামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ঐ হত্যাকান্ডে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত হিযবুত তাহরীরের ঐসব সদস্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ায় ব্লগার রাজীবকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছিল।
গত বছর ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলনকে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার পরপরই একটি জঙ্গি সংগঠন ফেসবুকে দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয়। ঐ হত্যার পেছনে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চক্র জড়িত বলে র‌্যাব ও পুলিশ ধারণা করছে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts