Lifestyle news - তরুণদের পছন্দ ব্যাংকের চাকরি

সামাজিক মর্যাদা, ভালো বেতন, দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে ব্যাংকের চাকরিতে। এসব কারণেই মূলত তরুণদের ব্যাংকের চাকরি বেশি টানছে। কৃতজ্ঞতা: ইস্টার্ন ব্যাংক l ছবি: জাহিদুল করিম
সোনালী ব্যাংকে গত বছরে সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) পদে ১ হাজার ৭০৭টি পদের বিপরীতে নিয়োগের আবেদন জমা পড়ে ২ লাখ ২০ হাজার। একই বছরে জনতা ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার-টেলর (ক্যাশ) পদের ৬৪৮টি পদের জন্য আবেদন এসেছিল ২ লাখ ৪৭ হাজার। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর লক্ষাধিক সিভি জমা পড়ছে। এ তথ্যই বলে দিচ্ছে, চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের পছন্দের তালিকায় ব্যাংক শীর্ষের কাছাকাছি আছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫৬টি ব্যাংক আছে। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ব্যাংক। আর এসব ব্যাংকের দেশব্যাপী শাখার সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় হাজার। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষ কাজ করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের জনবল প্রায় ৬০ হাজার। গত বছরও নিয়োগ করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তাকে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অনেকে কাজ করছেন। দিন দিন ব্যাংকগুলোর শাখা ও কার্যক্রম বাড়ছে। আর এ জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি জনবল। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক হিসাব বলছে, এসব ব্যাংকে প্রতিবছর ২০ হাজারের বেশি নতুন লোক নিয়োগ হয়।
ব্যাংকের চাকরি তরুণদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে কেন—এ প্রশ্নের জবাব দিলেন সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত। তিনি বলেন, সামাজিক মর্যাদা, ভালো বেতন, দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে ব্যাংকের চাকরিতে। এসব কারণেই মূলত তরুণদের ব্যাংকের চাকরি বেশি টানছে। এ ছাড়া একটি বড় কারণ চাকরির নিরাপত্তা অনেক বেশি। আর বাড়ি (ফ্ল্যাট), গাড়ি কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়।
একই প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, তরুণেরা মনে করছেন, ব্যাংকের চাকরি ‘স্মার্ট জব’। এখানে উচ্চ বেতন ও অন্য সুযোগ-সুবিধা যেকোনো খাতের চেয়ে বেশি। এখানে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে ব্যাংকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়া যায়।
সরকারি ব্যাংকগুলোতে সাধারণত নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), সহকারী প্রোগ্রামার, সিনিয়র অফিসার (আইটি), সহকারী প্রকৌশলী, অফিসার প্রকৌশলী (আইটি), উপসহকারী প্রকৌশলী—এসব ক্ষেত্রে নিয়োগ হয়।
সোনালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আশরাফ উল্লাহ বলেন, সরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব। সরকারি ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয় নির্দিষ্ট থাকে না বলে এখানে সবাই চাকরির সুযোগ পান। সরকারি ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধাও অন্যান্য সরকারি চাকরির মতোই। আছে বাড়তি অনেক সুবিধা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের মঞ্জুরুল আলম বলেন, তাঁদের ব্যাংকে প্রায় ২৭০ ধরনের কাজ আছে এবং প্রতিটি কাজের জন্যই নতুন নিয়োগ হয়। বেশি নিয়োগ হয় ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। ব্যাংকের ঋণ, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক বাড়াতে সেলস ও মার্কেটিংয়ে লোক নেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্রাঞ্চ রিলেশনশিপ অফিসার, করপোরেট ব্যাংক রিলেশনশিপ অফিসারসহ বিভিন্ন পদে ব্যাংক নিয়োগ দিয়ে থাকে।
তিনি জানালেন, ফিউচার লিডার কর্মসূচিতে তাঁরা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিতে তরুণদের নিয়োগ দেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নেই, এমন তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে তরুণদের নেওয়ার পর তাঁদের ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। নানা ধরনের দরকারি প্রশিক্ষণ, আদবকেতাসহ বিভিন্নভাবে তাঁদের যাচাই করা হয়। এরপর তাঁদের দক্ষতা ও আগ্রহ পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত স্থানে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তা পর্যায়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বেতন শুরু হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার আর ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনিদের বেতন শুরু হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকগুলোতে ভালো করলে কাজের সুযোগ বাড়ছে অন্য ব্যাংকগুলোতেও। যাঁরা ভালো করেন, তাঁরা অন্য ব্যাংকের নজরে আসেন। আরও বেশি বেতনে অন্য ব্যাংকগুলো তাঁদের নিয়ে নেয়।
মূলত ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ব্যাংকেও কর্মকর্তা পর্যায়টি ঠিক একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ পদগুলো থেকে ভালো করতে পারলেই ধাপে ধাপে যাওয়া যাবে ব্যাংকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। মঞ্জুরুল আলম বলেন, ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখারও এ ব্যাংকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে। এখন নিজের যোগ্যতায় তিনি ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের চেয়ারম্যান। ব্যাংকার ফরমান আর চৌধুরী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ১৯৮৬ সালে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম হাফিজ আহমেদ ১৯৮৩ সালে পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সোহেল আর কে হুসেইন ১৯৯০ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগ দেন। এখন তিনি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও । মো. হাবিবুর রহমান ১৯৭৮ সালে সোনালী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। আর এখন তিনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, আপনিও যদি ভালো করেন, তাহলে যেতে পারবেন সর্বোচ্চ স্থানে।

-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts