Science and Technology news - শুকতারায় ভাসমান শহর!

শিল্পীর কল্পনায় শুক্র গ্রহের ওপরে ভাসমান শহর l ছবি: নাসা
  গড় তাপমাত্রা ৪৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর চেয়ে ৯২ গুণ বেশি। রয়েছে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উঁচুমাত্রার অগ্ন্যুৎপাৎ। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেশি, নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম। আরও আছে সালফিউরিক অ্যাসিডের এক মেঘস্তর। সব মিলিয়ে শুকতারা বা শুক্র গ্রহের পরিবেশ মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। তবু সব বাধা অতিক্রম করে সেখানে যেতে চান মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) একদল বিজ্ঞানী।
কিন্তু কীভাবে? নাসার বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনাটা বেশ উচ্চাভিলাষী। শুক্র গ্রহের মেঘের ওপর ভেসে বেড়াবে তাঁদের বহনকারী মহাকাশযান। সেখানেই গড়ে তোলা হবে একটি শহর। ঠিক যেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনি অবলম্বনে নির্মিত স্টার ওয়ারস সিরিজের চলচ্চিত্র, যেখানে রয়েছে কোনো এক অজানা গ্রহের ওপর মানুষের ভাসমান বসতির দৃশ্য। সেই কল্পনাকেই এবার বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রস্তাব করলেন ওই বিজ্ঞানীরা।
নাসার সিস্টেম অ্যানালাইসিস অ্যান্ড কনসেপ্ট ডিরেক্টরেটের বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার জোন্স বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ভবিষ্যতে মানুষের অভিযানের জন্য শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। গ্রহটির পৃষ্ঠতল থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরের পরিবেশ তুলনামূলক অনুকূল। কারণ, সেখানকার চাপ, ঘনত্ব, মাধ্যাকর্ষণ এবং তেজস্ক্রিয়তা-সুরক্ষা অনেকটা পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের মতোই। শুক্র গ্রহে তাঁদের পরিকল্পিত অভিযান সফল হলে মঙ্গলের মতো অন্যান্য গ্রহে যাওয়ার জন্যও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করার সুযোগ তৈরি হবে।
মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে মহাকাশবিজ্ঞানীরা বহু আগে থেকেই চেষ্টা করছেন। সেই তুলনায় শুক্র গ্রহের অবস্থান পৃথিবীর কাছাকাছি। ঘূর্ণনের কারণে গড়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ থেকে ২৬ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শুক্র গ্রহই পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। আর মঙ্গলের অবস্থান পৃথিবী থেকে গড়ে ৫ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৪০ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে।
 
শুক্র গ্রহের ওপর ভাসমান মানুষবাহী নভোযান, শিল্পীর কল্পনায় l ছবি: নাসাপৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬ হাজার ৩৭১ কিলোমিটার, আর শুক্রের ব্যাসার্ধ ৬ হাজার ৫২ কিলোমিটার। দুই গ্রহের ঘনত্ব এবং রাসায়নিক গঠনেও মিল রয়েছে। কিন্তু এসব মিল বাদ দিলে দুই গ্রহের মধ্যে গুরুতর অনেক অমিল পাওয়া যায়। তবে নাসার বিজ্ঞানীদের পরিকল্পিত শুক্র অভিযানে ব্যবহারের জন্য হালকা রকেটের নকশাও অভিনব। এসব রকেট শুকতারার অম্লীয় মেঘের ওপর টিকে থাকতে পারবে প্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত। সেই সময়ের মধ্যে নভোচারীরা গ্রহটির বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠে মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই বলেই সেখান থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখান থেকে হিলিয়ামপূর্ণ বেলুনের মতো উড়ন্ত রোবটযানে করে শুক্র গ্রহের আরও কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এসব রোবটযানে শক্তি সংগ্রহ করার জন্য থাকবে সৌর প্যানেল।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করেন, কেবল মহাকাশ অভিযান পরিচালনাই শেষ কথা নয়। মানুষকে একসময় পৃথিবীর বাইরেই বসবাস করতে হবে। এ জন্য মঙ্গল বা অন্য কোনো সৌরজগতে পৃথিবীর কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের অন্যান্য গ্রহে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করতে হবে। আর তাই নির্মাণ করতে হবে অতিদ্রুতগামী নভোযান।
তবে শুক্র গ্রহে অভিযানের ব্যাপারটি এখনো শুধু পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়ে গেছে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts