ঘরের
সাদামাটা দেয়ালে একটু রঙের ছোঁয়া না থাকলে যেন ভালোই লাগে না।
পলেস্তারার পর চুনকাম, তারপর বাহারি নানা রঙের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে
হয়। কিন্তু ঘরবাড়ি রাঙানোর এসব উপাদানে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ
থাকে, যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ঘর রাঙাতে কোন রং
ব্যবহার করবেন, সে ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়া চাই। লিখেছেন ফারজানা হালিম
রঙের ভালো-মন্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরনবী প্রথম আলোকে বলেন, রঙে এমন কিছু সাধারণ উপাদান আছে, যেগুলো মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: অনেক রঙেই স্থায়িত্বের জন্য ইপক্সিজাতীয় সারফেকটেন্ট ব্যবহৃত হয়। এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আবার রঙে যাতে ছত্রাক না জন্মায়, সে জন্য ফরমালডিহাইড ব্যবহার করা হয়। এটিও ক্ষতিকর।
বাসাবাড়ির গ্রিল বা ধাতব জিনিস রাঙাতে যে এনামেল পেইন্ট করা হয়, তাতে ক্ষতিকর উদ্বায়ী জৈবযৌগ ভিওসি থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায়, সারাক্ষণ রঙের কাজের সংস্পর্শে থাকা মানুষের ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
তবে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলে রং ব্যবহারজনিত এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রঙের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো কতক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, তা বোঝার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে এর গন্ধ। রঙের গন্ধ একেবারে দূর হওয়ার পরই সেই ঘরে বসবাস শুরু করুন। প্রশস্ত দরজা-জানালার ব্যবস্থা যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং ঘরে আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত যাতায়াত নিশ্চিত করুন।
কোন ঘরে কোন রং?
ঘরের দেয়ালে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের পছন্দ বা রুচি ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো প্রাধান্য পায়। সাধারণত বিভিন্ন ঘরের রং আলাদা হলেই ভালো হয়। তবে ঘরের তিন দেয়াল অফ-হোয়াইট কিংবা সাদা রেখে বাকি এক দিকের দেয়ালে রঙের ভিন্নতা আনলে সব দিক থেকেই ভালো।
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ড্রয়িংরুমের দেয়ালের রং হতে পারে লাল। রংটি চিত্তাকর্ষক এবং জমজমাট পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। সবার আগে যেহেতু এ ঘরই বাইরের মানুষের চোখে পড়ে, রুচির পরিচয় অনেকখানি তুলে ধরা যায় অতিথিকক্ষের মাধ্যমে। খাবারঘরের দেয়ালটিতেও উজ্জ্বল রং (যেমন: কমলা) ব্যবহার করতে পারেন। এ ঘরে সাধারণত হই-হুল্লোড়, আড্ডা খুব বেশি হয়। তাই উজ্জ্বল রংগুলো সেখানে সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য নীল আর মেয়েদের জন্য গোলাপি ধাঁচের রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া একরঙা দেয়ালের পরিবর্তে একটি ফিচার দেয়ালে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্য রাখা যেতে পারে। শোবারঘরের জন্য বেগুনির মতো রং জুতসই। বয়স্ক মানুষেরা বেশি রঙের ব্যবহার অপছন্দ করলে তাঁদের ঘরের জন্য চার দেয়ালেই হালকা বা অফ-হোয়াইট ধরনের রং ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ বা ইলিউশন ব্যবহার করলে ফ্লোরাল কিংবা লতাপাতা নকশার ইলিউশনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। পুরো বাড়ির ছাদ ও মেঝেতেও সাদার ব্যবহার থাকলে ভালো। এতে ঘরগুলোকে প্রশস্ত মনে হয়। অফ-হোয়াইট কিংবা সাদার পরিবর্তে চার দেয়ালজুড়ে একই রং ব্যবহার করলে হিজিবিজি ও আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
দেশে প্রচলিত যত রং
দেশে বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠানের প্লাস্টিক পেইন্ট, ডিস্টেম্পার, ইলিউশন ইত্যাদি রং পরিবেশবান্ধব উপায়ে বাজারে এসেছে। তাই রং কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল করে কিনুন, তা পরিবেশবান্ধব কি না। আর দামেরও খুব একটা তারতম্য নেই, সাধ্যের নাগালেই। যাঁরা ইতিমধ্যে অন্য রং কিনে ফেলেছেন, তাঁদের জন্য গুলশান নাসরিনের পরামর্শ—রঙের গন্ধ পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ঘরে বসবাস শুরু করুন অথবা রঙের বিষক্রিয়া দূর করতে ঘরে বেশি করে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ লাগান।
বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের রং তৈরি হয়—ওয়াটার বেইজড ও ওয়েল বেইজড রং। বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) বলছে, ওয়াটার বেইজড রঙে কোনো সিসা ব্যবহৃত হয় না। তবে ওয়েল বেইজড রঙে সামান্য পরিমাণে সিসা ব্যবহৃত হয়।
রং ব্যবহারের ঝুঁকি বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিএমএর সাবেক মহাসচিব আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রঙেই সবচেয়ে কম সিসা ব্যবহার করা হয়। যেটুকু সিসা ব্যবহৃত হয়, সেটাও দূর করতে কাজ চলছে। বাংলাদেশের গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত রংকে পুরোপুরি সিসামুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দুই-আড়াই বছর ধরে বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং বিপিএমএ যৌথভাবে কাজ করছে।
রঙের ভালো-মন্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরনবী প্রথম আলোকে বলেন, রঙে এমন কিছু সাধারণ উপাদান আছে, যেগুলো মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: অনেক রঙেই স্থায়িত্বের জন্য ইপক্সিজাতীয় সারফেকটেন্ট ব্যবহৃত হয়। এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আবার রঙে যাতে ছত্রাক না জন্মায়, সে জন্য ফরমালডিহাইড ব্যবহার করা হয়। এটিও ক্ষতিকর।
বাসাবাড়ির গ্রিল বা ধাতব জিনিস রাঙাতে যে এনামেল পেইন্ট করা হয়, তাতে ক্ষতিকর উদ্বায়ী জৈবযৌগ ভিওসি থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায়, সারাক্ষণ রঙের কাজের সংস্পর্শে থাকা মানুষের ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
তবে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলে রং ব্যবহারজনিত এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রঙের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো কতক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, তা বোঝার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে এর গন্ধ। রঙের গন্ধ একেবারে দূর হওয়ার পরই সেই ঘরে বসবাস শুরু করুন। প্রশস্ত দরজা-জানালার ব্যবস্থা যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং ঘরে আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত যাতায়াত নিশ্চিত করুন।
কোন ঘরে কোন রং?
ঘরের দেয়ালে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের পছন্দ বা রুচি ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো প্রাধান্য পায়। সাধারণত বিভিন্ন ঘরের রং আলাদা হলেই ভালো হয়। তবে ঘরের তিন দেয়াল অফ-হোয়াইট কিংবা সাদা রেখে বাকি এক দিকের দেয়ালে রঙের ভিন্নতা আনলে সব দিক থেকেই ভালো।
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ড্রয়িংরুমের দেয়ালের রং হতে পারে লাল। রংটি চিত্তাকর্ষক এবং জমজমাট পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। সবার আগে যেহেতু এ ঘরই বাইরের মানুষের চোখে পড়ে, রুচির পরিচয় অনেকখানি তুলে ধরা যায় অতিথিকক্ষের মাধ্যমে। খাবারঘরের দেয়ালটিতেও উজ্জ্বল রং (যেমন: কমলা) ব্যবহার করতে পারেন। এ ঘরে সাধারণত হই-হুল্লোড়, আড্ডা খুব বেশি হয়। তাই উজ্জ্বল রংগুলো সেখানে সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য নীল আর মেয়েদের জন্য গোলাপি ধাঁচের রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া একরঙা দেয়ালের পরিবর্তে একটি ফিচার দেয়ালে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্য রাখা যেতে পারে। শোবারঘরের জন্য বেগুনির মতো রং জুতসই। বয়স্ক মানুষেরা বেশি রঙের ব্যবহার অপছন্দ করলে তাঁদের ঘরের জন্য চার দেয়ালেই হালকা বা অফ-হোয়াইট ধরনের রং ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ বা ইলিউশন ব্যবহার করলে ফ্লোরাল কিংবা লতাপাতা নকশার ইলিউশনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। পুরো বাড়ির ছাদ ও মেঝেতেও সাদার ব্যবহার থাকলে ভালো। এতে ঘরগুলোকে প্রশস্ত মনে হয়। অফ-হোয়াইট কিংবা সাদার পরিবর্তে চার দেয়ালজুড়ে একই রং ব্যবহার করলে হিজিবিজি ও আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
দেশে প্রচলিত যত রং
দেশে বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠানের প্লাস্টিক পেইন্ট, ডিস্টেম্পার, ইলিউশন ইত্যাদি রং পরিবেশবান্ধব উপায়ে বাজারে এসেছে। তাই রং কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল করে কিনুন, তা পরিবেশবান্ধব কি না। আর দামেরও খুব একটা তারতম্য নেই, সাধ্যের নাগালেই। যাঁরা ইতিমধ্যে অন্য রং কিনে ফেলেছেন, তাঁদের জন্য গুলশান নাসরিনের পরামর্শ—রঙের গন্ধ পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ঘরে বসবাস শুরু করুন অথবা রঙের বিষক্রিয়া দূর করতে ঘরে বেশি করে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ লাগান।
বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের রং তৈরি হয়—ওয়াটার বেইজড ও ওয়েল বেইজড রং। বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) বলছে, ওয়াটার বেইজড রঙে কোনো সিসা ব্যবহৃত হয় না। তবে ওয়েল বেইজড রঙে সামান্য পরিমাণে সিসা ব্যবহৃত হয়।
রং ব্যবহারের ঝুঁকি বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিএমএর সাবেক মহাসচিব আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রঙেই সবচেয়ে কম সিসা ব্যবহার করা হয়। যেটুকু সিসা ব্যবহৃত হয়, সেটাও দূর করতে কাজ চলছে। বাংলাদেশের গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত রংকে পুরোপুরি সিসামুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দুই-আড়াই বছর ধরে বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং বিপিএমএ যৌথভাবে কাজ করছে।