আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স কমে
যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এ আশংকা রয়েছে বাংলাদেশেরও। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ
পরিস্থিতি চলতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বাজেটে ঘটতি দেখা দিতে পারে। অর্থনীতির
গতি ঠিক রাখতে আরব দেশগুলো ইতিমধ্যে নতুন কর আপোর কিম্বা ব্যয় হ্রাসের বিষয়
খতিয়ে দেখছে।
বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়েছে, ২০১৩ সালে গালফ অর্থনীতির অর্ধেক জিডিপি (মোট দেশজ উত্পাদন) আয়
হয়েছিল তেল ও গ্যাসের মাধ্যমে। গাফলভূক্ত (ইরাক, সৌদিআরব, ওমান, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত) দেশগুলোর মোট রফতানির ৭৫ ভাগ ছিল তেল ও
গ্যাস রফতানি। যদি তেলের দাম এ ভাবে কমতেই থাকে তাহলে এ অঞ্চলে বছরে তেল
হতে ২১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো আয় কমে যাবে। এটা তাদের সম্মিলিত জিডিপির প্রায়
১৪ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি
তেলের মূল্য ছিল ৫০ ডলার ৩৪ সেন্ট। আগামী এক বছরের ভবিষ্যত্ মূল্যের
পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৭ ডলারে উঠানামা করতে পারে। গত সপ্তাহে ৫৭
ডলারে উঠলেও তা আবার ৫০ ডলারের ঘরেই নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে কী
ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা
কার্যালয়ের লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, এক হিসেব
অনুযায়ী, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য এক ডলার হ্রাস পায় তাহলে
বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমে যেতে পারে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মতো। বিগত ৫-৬
মাস যাবত্ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ৫০ ডলারের আসে পাশেই রয়েছে।
সহসাই এ দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের
জন্য বিষয়টি উদ্বেগের হতে পারে।
২০১৩ সালে গালফভুক্ত দেশগুলোর
বাজেট তাদের জিডিপির (মোট দেশজ আয়ের) ১০ শতাংশ উদ্বৃত্ত থাকলেও এবছর ৫
শতাংশ ঘাটতির আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে,
তারপরেও খরচ কমাতে তাদের কিছু পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষন দেখা যাচ্ছে। সৌদি আরবের
প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে তেলের দাম বাড়ানোর
দিকে হাটছে। বাহরাইন যারা আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ তারাও গালফ এলায়েন্স থেকে
বাজেট সহায়তা নেয়ার কথা ভাবছে। ওমান তাদের বাজেটে ২০১৫ সালের শুরুতে নতুন
করা কিম্বা খরচ কমানোর ঘোষণা না দিলেও বছর শেষে সে চিন্তা করতে পারে।
অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই নতুন উত্স থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পথ
খুঁজছে। এর মধ্যে রেমিটেন্সের উপর কর আরোপের চিন্তাও রয়েছে।
বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে রেমিটেন্স প্রেরণকারী
প্রায় সব দেশ থেকে প্রবাহ বাড়লেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে তা খুব বেশি
বাড়েনি। গত বছর প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৪৯৪ কোটি মার্কিন ডলার
রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ২০১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার।
রেমিটেন্স প্রবাহ নেতিবাচক না হলেও যে হারে রেমিটেন্স বাড়ার কথা
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উপর প্রভাবে সেভাবে বাড়েনি বলে সংশ্লিষ্টরা
জানিয়েছেন।
এক বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্সের প্রধান যোগানদাতা
সৌদি আরব থেকে মাত্র ২০ কোটি ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছে। একই অবস্থা
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ওমান, বাহারাইন, কুয়েত ও লিবিয়ার। কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলেছেন, আগের বছরগুলোতে
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যেহারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তা
বাড়েনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার প্রভাবে
মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের আশংকা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন,
বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যে ধরনের কর্মী পাঠানো হয় তাদের ছাঁটাইয়ের
আশংকা কম। কারণ নির্মানসহ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই
থাকে।
সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক
বাজারে তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে বাংলাদেশের সার্বিক বিবেচনায় লাভবান হবে।
এর কারণ হলো, তেল আমদানি বাবদ এক বছরে বাংলাদেশকে প্রায় ২শ কোটি ডলার কম
খরচ করতে হবে। তাছাড়া তেলের মূল্য কম থাকায় সারের মূল্যও কমে যাবে। আমদানি
খরচসহ সার্বিক খাদ্য পন্যের মূল্য নিম্নগতিই থাকবে। ফলে রেমিটেন্সে কিছুটা
প্রভাব পড়লেও সার্বিক দিক থেকে আমরা লাভবানই হবো।