Science and Technology news - মহাকাশে সৌরশক্তিচালিত যান!

সৌরশক্তিতে চলবে লাইটসেইল নামের এই পাল তোলা ছোট্ট যান lছবি: জশ স্প্র্যাডলিং/দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটি
     
সূর্যের আলোর শক্তির ওপর ভিত্তি করে মহাকাশে পাল তোলা যান চলবে— রকেটবিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই এমন স্বপ্ন দেখছেন। এবার তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটি। তারা আগামী মে মাসে প্রথমবারের মতো সৌরশক্তিনির্ভর পাল তোলা ছোট্ট একটি যান পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠাবে। গত সোমবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
পরীক্ষামূলক ওই যাত্রায় সৌরচালিত যানগুলোর সঙ্গে থাকবে অ্যাটলাস ফাইভ রকেটে যুক্ত ছোট আকারের একাধিক স্যাটেলাইট। প্ল্যানেটারি সোসাইটির প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম স্যানফোর্ড নি এবং তাঁর সহযোগী গবেষকেরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করেন, তাঁদের এবারের প্রচেষ্টা এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে বিভিন্ন অভিযান চালানোর ব্যাপারে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
আলোর কণা ফোটন যখন কোনো চকচকে পৃষ্ঠতলে ঠিকরে ফিরে আসে, সেগুলো ওই পৃষ্ঠতলে বাড়তি গতিবেগের জোগান দেয়। পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৬০-এর দশকে আলোর ওই প্রতিক্রিয়া একটি সমীকরণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। এটি তড়িৎ-চুম্বকতত্ত্বের সমীকরণ নামে পরিচিত। সুপরিচিত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচয়িতা জুল ভার্ন সম্ভবত সবার আগে বুঝতে পেরেছিলেন, আলোর ওই শক্তিকে মহাকাশ অভিযানে কাজে লাগানো যেতে পারে। বড় একটি ক্ষেত্রের ওপর অনবরত সূর্যালোক পড়তে থাকলে সেই শক্তির সাহায্যে ধাপে ধাপে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে একটি মহাকাশযান চালানো সম্ভব।
প্ল্যানেটারি সোসাইটির ছোট্ট যানটির নাম লাইটসেইল। এটি আকারে প্রায় একটা পাউরুটির সমান। পৃথিবীর কক্ষপথে এটি এক মাস ধরে পরীক্ষাধীন থাকবে। তারপর এটি ১৩ ফুট লম্বা চারটি দণ্ড এবং অত্যন্ত পাতলা চারটি ত্রিকোণ প্লাস্টিক পাত (মাইলার) মেলে ধরবে। এভাবেই ছোট্ট যানটি তৈরি করবে প্রায় ৩৪৫ বর্গফুটের একটি বর্গাকার পাল।
লাইটসেইলের পাল গঠন এবং অন্যান্য সামর্থ্য ঠিক আছে কি না—মে মাসে আসন্ন অভিযানটির সময় যাচাই করা হবে। কিন্তু এটি ঠিক কতটা উচ্চতায় উড়বে, প্ল্যানেটারি সোসাইটির বিজ্ঞানীরা জানাতে পারেননি। কারণ, অ্যাটলাস ফাইভ রকেট মূলত যাত্রা করবে একটি স্যাটেলাইট পরিবহনের উদ্দেশ্য নিয়ে। লাইটসেইলের পালে যে পরিমাণ বাতাস বাধা পাবে, তার মোট পরিমাণ হবে আলোর চাপের চেয়ে বেশি। তারপর একপর্যায়ে সৌরশক্তিনির্ভর যানটি কক্ষপথের বাইরে ছিটকে পড়বে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ধ্বংস হবে।
পরের বছর ফ্যালকন হেভি রকেটে করে আরেকটি (দ্বিতীয়) লাইটসেইল পাঠানো হবে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০ মাইল উচ্চতায়। আর সেটিই হবে পৃথিবীর কক্ষপথে কোনো সুনিয়ন্ত্রিত সৌরযানের চলাচলের প্রথম প্রদর্শনী। স্যানফোর্ড নি বলেন, প্রতিটি কক্ষপথে পাল তোলা নৌকার মতো সৌরচালিত যান স্থাপন করাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। প্রতিটি লাইটসেইল তৈরিতে খরচ পড়েছে ৪০ লাখ মার্কিন ডলারেরও কম।
মহাকাশে বড় বড় পাল তোলা যান চালানোর ক্ষেত্রে নানামুখী সমস্যা রয়েছে। তাই প্ল্যানেটারি সোসাইটির গবেষকেরা কিউবস্যাট নামের নতুন প্রজন্মের ছোট ও সাশ্রয়ী স্যাটেলাইটের আদলে ছোট আকারের লাইটসেইল তৈরি করেছেন।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও (নাসা) সৌরচালিত পাল তোলা যানের ব্যাপারে আগ্রহী। আর জাপান ইতিমধ্যে আন্তঃগ্রহ অভিযাত্রায় একটি সৌর পাল পাঠিয়েছে। তাদের ইকারোস নামের মহাকাশযানটি ২০১০ সালের মে মাসে যাত্রা করে শুক্র গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছায়।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী রবার্ট এল স্টায়েহ্ল বলেন, সৌরশক্তিচালিত যানগুলো ব্যবহার করলে জ্বালানি খরচ কমবে। এতে ১০ কোটি ডলারেরও কম খরচে সূর্য পর্যবেক্ষণ অভিযান চালানো সম্ভব, যা কিনা প্রচলিত পদ্ধতির ৫ ভাগের ১ ভাগ।
বিভিন্ন গ্রহ ছাড়াও দূর নক্ষত্রগুলোতে এ ধরনের সৌরযান পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সূর্যালোক অপর্যাপ্ত হলে শক্তিশালী লেজার রশ্মি ব্যবহার করে পাল তোলা যান চালানোর সম্ভাব্যতাও খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts