Media news - প্রীতি সমাচার

সানজিদা প্রীতি। ছবি: খালেদ সরকার     
১৩ ফেব্রুয়ারি। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়ক। বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামল। গাড়ি থেকে নেমে এলেন দুজন, ইন্তেখাব দিনার আর সানজিদা প্রীতি।
: এই তাহলে তোমার নতুন ঠিকানা?
: হু।
: চেনা রইল। খুব একটা উল্টোপথ না কিন্তু।
: এই বাড়িতে আমি পারমানেন্টলি থাকছি না। এটা আমার বন্ধু শাগুফতার (মৌটুসী বিশ্বাস) বাড়ি। কদিনের জন্য এ বাড়িতে থাকতে এসেছি। আসবেন?
: তুমি বলছ এ কথা? তুমি তো কখনো আমাকে বাড়ি যেতে বলো না। আমার সীমানা তো রাস্তা পর্যন্তই।
: আজ বলছি, আসবেন?
মনিটরের পেছন থেকে পরিচালক বললেন ‘কাট’। বাড়ির ভেতরে এলেন সবাই।
এখানে ‘ডলস হাউস’ সিরিজের দ্বিতীয় ধারাবাহিকটির শুটিং হচ্ছে। নাম সাতটি তারার তিমির। বাড়ির ভেতরে দরজায় দাঁড়িয়ে শুটিং দেখছেন আফসানা মিমি। তিনি এই ধারাবাহিকের প্রযোজক ও পরিচালক। এরপর শুটিং হবে এ বাড়ির চতুর্থ তলায়, বসার ঘরে। সেখানে চলে গেলেন শুটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
ধারাবাহিকটির যুগ্ম পরিচালক রাকেশ বসু। তিনি জানালেন, সাতটি তারার তিমির ধারাবাহিকের জন্য এই পুরো বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সাজানো হয়েছে প্রয়োজনীয় সব আসবাব দিয়ে।
প্রীতি ব্যস্ত শুটিংয়ে। ততক্ষণ আড্ডা হলো আফসানা মিমির সঙ্গে। প্রীতি এলেন অনেকক্ষণ পর। তার আগে দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্যামেরার পেছন থেকে মুঠোফোন বার্তা পাঠিয়েছেন।
প্রীতি এলেন। চতুর্থ তলার একটি কক্ষে তাঁকে পাওয়া গেল কিছুক্ষণের জন্য। জানালেন, ধারাবাহিকটির ৭৭ নম্বর পর্বের কাজ হচ্ছে। নাটকে তাঁর চরিত্রের নাম জেবা। এই নাটকে আরও আছেন মৌসুমী হামিদ, জয়িতা মহলানবীশ, স্বর্ণা, শর্মিমালা, মৌটুসী বিশ্বাস আর টয়া। সাত বন্ধুর গল্প। বললেন, ‘যেদিন সবাই থাকি, সেদিন দারুণ মজা হয়। অনেক আনন্দ হয়। আড্ডা হয়।’
সাতটি তারার তিমির দেখানো হচ্ছে এটিএন বাংলায়। একই টিভি চ্যানেলে আরেকটি ধারাবাহিক দেখানো হচ্ছে, নাম প্রজ্ঞা পারমিতা। এই নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন প্রীতি। এরই মধ্যে ২০০ পর্ব দেখানো হয়েছে।
বললেন, ‘প্রজ্ঞা সংগ্রামী মেয়ে। গ্রামের স্কুলের শিক্ষিকা। পারিবারিক সংকটের কারণে একসময় চাকরি ছেড়ে দেয়। নিজের শিকড়ের সন্ধানে বের হয়। চলে আসে দাদুর বাড়িতে। এখানে সে সবার সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশে যায়। আর ফিরে যায় না।’
ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো প্রীতির। স্বামী জিবরান তানভির, বিজ্ঞাপন চিত্রনির্মাতা। রিয়েলিটি শো করেছেন। ফিকশনও পরিচালনা করছেন।
প্রীতি বললেন, ১৫ বছর আগে থেকে ওকে চিনি। বন্ধুত্বটাও বেশ পুরোনো। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০১৩ সালে। আর বিয়ে করেছি ২০১৪ সালে।
বিয়ের পর বেড়ানো নিয়ে বললেন, ‘আমরা নৌকা নিয়ে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও যমুনা নদীতেই বেড়ানো হয়েছে।’
আরও বললেন, ‘পানিপ্রীতি আমার অনেক দিনের। যখন সাঁতার জানতাম না, তখনো ছিল।’
: সাঁতার শিখলেন কবে?
: নাটক করতে গিয়েই। বদরুল আনাম সৌদের গহীনে ধারাবাহিকটির প্রায় দুই বছর শুটিং হয়েছে। আমাকে অনেকটা সময় পানিতে থাকতে হয়েছে।
: কীভাবে শিখলেন?
: গহীনে নাটকের শুটিং হতো কালীগঞ্জে। যেখানে শুটিং হতো, পাশেই ছিল পুকুর। শুটিং শেষে সবাই পুকুরে নেমে যেত। সাঁতার কাটত। ভাবলাম, আমিও শিখে ফেলি। অল্প সময়েই শেখা হলো। এরপর তো একাই সাঁতার কাটতাম। এখন কিন্তু আমি ভালো সাঁতার কাটতে পারি।
প্রীতি বিয়ের পর স্বামীর নির্দেশনায় অভিনয় করেছেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। বললেন, ‘পাঁচ মিনিটের ছবি। গল্পটা ভূত নিয়ে। আমি ভূত বিশ্বাস করি না। ছোটবেলায় ভূতের অনেক গল্প পড়েছি। খুব মজা পেতাম। কখনো গা শিউরে ওঠেনি। আমার ভয় একটু কম। প্রমাণ ছাড়া কিছুই মানতে পারি না।’
সাতটি তারার তিমির নাটকে প্রীতির সঙ্গে থাকে সাইকেল আর ক্যামেরা। প্রীতি বললেন, ‘আমি আলোকচিত্রী না। আমার কয়েকজন আলোকচিত্রী বন্ধু আছেন। তাঁদের তো অনেক দিন থেকেই দেখছি। তাই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু জানি।’
: সাইকেল কবে থেকে ব্যবহার করেন?
: সেই ছোটবেলা থেকে। আমাদের বাসায় একটাই সাইকেল ছিল। আমরা সব ভাইবোন মিলে চালাতাম। তখন আমাদের বাসা ছিল নয়াপল্টন, না না সেগুনবাগিচায়। বাসার সামনে যথেষ্ট জায়গা ছিল। নাটকে কিন্তু প্রচুর সাইকেল চালাতে হয়েছে। সাইকেল চালাতে খুবই ভালো লাগে।
প্রীতির খুব ভালো লাগার জায়গা মঞ্চ। বললেন, ‘মঞ্চে কাজ করি ১৯৯৪ সাল থেকে। তরঙ্গ ললিতকলা একাডেমিতে থিয়েটার করতাম। এইচএসসি পাস করার পর ২০০২ সালে প্রাচ্যনাটে যোগ দিই। এরপর অনেক নাটক করেছি রাজা এবং অন্যান্য, ম্যান ফর অল সিজনস, সার্কাস সার্কাস, কইন্যা, কিনু কাহারের থেটার, এখন করছি ট্র্যাজিডি পলাশবাড়ি। তবে মাঝে একটা পথনাটক করেছিলাম। নাম মান্দার। গ্রামের বাক্প্রতিবন্ধী একটা মেয়ে। তার সব কথা বৃক্ষের সঙ্গে। প্রকৃতির সঙ্গে তার প্রেম ছিল। যেহেতু ওই নাটকে আমি প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয় করেছি, তাই নাটকটির কথা মনে থাকবে।’
আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে। সবাই প্রস্তুত। বিদায় নিয়ে প্রীতি ছুটলেন সেখানে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts