দেশে
জোয়ারের মতো ঢুকছে ইয়াবা। নানা কৌশলে এই নেশার ট্যাবলেট আনছে পাচারকারী
সিন্ডিকেট। সমপ্রতি ইয়াবা পাচারের অভিনব কৌশল নজরে আসে একটি গোয়েন্দা
সংস্থার। তারা জানতে পারে, কিছুদিন আগে নাটক শ্যুটিংয়ের নাম করে কক্সবাজার
যায় একটি দল। সঙ্গে ছিল উঠতি অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ ইউনিটের অন্যান্য
কলা-কুশলী। কিন্তু এই দলটি রাজধানীতে ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে আসে প্রায় কোটি
টাকার ইয়াবা। ‘নাটকের ইউনিট’ হওয়ায় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেক
পোস্টের নজর সহজেই এড়িয়ে যায় ।
এদিকে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন যে, দেশে
ইয়াবার প্রবাহ বাড়ছে। শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন ইয়াবা সহজলভ্য।
তারা জানান, ইয়াবা পাচারের রুট টেকনাফ, কক্সবাজার এবং রাঙ্গামাটির ২৩১
বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে কেবল টেকনাফেই রয়েছে ইয়াবা
পাচারের ৩০টি রুট। এছাড়া টেকনাফের ওপারে মিয়ানমারে রয়েছে ইয়াবা তৈরির
কারখানা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশটিকে বার বার ইয়াবা কারখানা বন্ধের দাবি
জানানো হলেও তা বন্ধ করা হচ্ছে না। চলতি বছরও দেশটি সফরকালে মাদক দ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বিষয়টি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৫-৬ মে ঢাকায় দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক
অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গোয়েন্দা
সংস্থাসূত্রে জানা গেছে, এরা আসলে নাটকের লোক নন। এদের আসল পরিচয় ইয়াবা
পাচারকারী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নাটকে অভিনয়ের জন্য নতুন মুখ চেয়ে
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। পুরো ইউনিট সাজিয়ে কক্সবাজারসহ অন্যান্য লোকেশনে
নিয়ে যায়। নাটকের শ্যুটিংও হয়। তবে সেই নাটক আর আলোর মুখ দেখে না। কেননা
এদের উদ্দেশ্য নাটক বানানো নয়। আসল উদ্দেশ্য ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে আসা। সাধারণত
শ্যুটিং শেষে ফেরার পথে এরকম প্রতিটি ইউনিট দেড় থেকে দুই লাখ পিছ ইয়াবা
নিয়ে আসে।
গোয়েন্দাদের
কাছে ফাঁস হওয়া সামপ্রতিক এই ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ইয়াবা পাচারকারী ওই
সিন্ডিকেট নাটকে অভিনয়ের কথা বলে এক নবীন অভিনেত্রীকেও ইউনিটের সঙ্গে
কক্সবাজার নিয়ে যায়। ফেরার পথে তার হাতে দেড় লাখ পিছ ইয়াবা ধরিয়ে দেয়া হয়।
তিনি নিজের অজান্তেই সেই চালান ঢাকায় এনে পৌঁছে দেন। পরে তার অভিনীত নাটক
কোথাও প্রচার না হওয়ায় তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নির্দিষ্ট ওই নামের
প্রোডাকশন হাউজের কোন অস্তিত্বই বাস্তবে নেই। তখন তিনি বিষয়টি গোয়েন্দাদের
জানান।
এ
প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বজলুর রহমান বলেন,
বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, ইয়াবার নেশা থেকে তরুণ প্রজন্মকে
বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আমরা। ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন
উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। আশা করছি আমরা সফল
হবো।