একে তো শীত, তার ওপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
নির্জন সৈকত। এর মধ্যে ইতিউতি খুঁজে ফিরছেন একজন। তিনি তাকাইউকি উয়েনো।
খুঁজছেন চার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তিন বছরের শিশুপুত্রকে। সেই যে
মহাপ্রলয় ঘটানো সুনামি এসে জাপানের উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়েছিল, তারই
ছোবলে সাগরে বিলীন হয়েছে উয়েনোর সোনামণির ছোট্ট দেহ। জীবিত তো আর পাবেন
না। হাড়গোড় যদি পাওয়া যায়, সেই অদম্য আশায় তাঁর এই খুঁজে ফেরা।
হাড়গোড় যদি পান, তাহলে বাবা হয়ে তাকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইবেন তিনি।
জাপানে উয়েনোর মতো আরও অনেক বাবা এখনো খুঁজে ফিরছেন সুনামিতে হারিয়ে যাওয়া আদরের সন্তানকে। ২০১১ সালের ১১ মার্চ এই সুনামি জাপানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে এই সুনামি দেখা দেয়। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৯। এতে রাজধানী টোকিওসহ দেশটির বড় বড় কয়েকটি নগরে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। সরকারি তথ্যমতে, এই প্রলয়ংকরী সুনামিতে প্রায় ১৯ হাজার লোক প্রাণ হারায়।
হাড়গোড় যদি পান, তাহলে বাবা হয়ে তাকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইবেন তিনি।
জাপানে উয়েনোর মতো আরও অনেক বাবা এখনো খুঁজে ফিরছেন সুনামিতে হারিয়ে যাওয়া আদরের সন্তানকে। ২০১১ সালের ১১ মার্চ এই সুনামি জাপানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে এই সুনামি দেখা দেয়। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৯। এতে রাজধানী টোকিওসহ দেশটির বড় বড় কয়েকটি নগরে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। সরকারি তথ্যমতে, এই প্রলয়ংকরী সুনামিতে প্রায় ১৯ হাজার লোক প্রাণ হারায়।
ওই মহাদুর্যোগ থেকে কেবলমাত্র ছয় মাসের মেয়ে সারিকে বাঁচাতে পেরেছিলেন
উয়েনো। মেয়েটি এপ্রিল থেকে স্কুলে যাবে। মেয়েকে দেখে হারিয়ে যাওয়া
ছেলের কথা মনে পড়ে উয়েনোর। কত অল্প জীবন ছিল তার। মাত্র তিন বছরের। স্কুল
কী তা দেখেনি। পৃথিবীর আরও অনেক কিছুই অজানা, অচেনা রয়ে গেছে।
ফুকুশিমার উত্তর-পূর্ব উপকূলের মিনামিসোমা বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে উয়েনো
সেই ভয়াল সময়ের কথা মনে করে বলেন, ‘কেউ আমাদের সহায়তায় আসেনি। গোটা
তল্লাটে একমাত্র আমি ছিলাম সচল বস্তু।’
উয়েনো বলেন, ‘যেই প্রথম চুল্লিটা বিস্ফোরতি হলো। অমনি সবাই হারিয়ে গেল। তখন নিখোঁজ সবাইকে খুঁজতে শুরু করলাম।’
সুনামি আঘাত হানার প্রায় এক সপ্তাহ পরে বাড়ি থেকে একটু দূরে আট বছরের
মেয়ে এরিকার লাশ খুঁজে পান বাবা উয়েনো। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান।
মেয়েকে বাঁচাতে না পারার জন্য ক্ষমা চান তিনি। কিছুটা দূরে ছিল উয়েনোর
মায়ের লাশ। এরপর থেকে ছেলে কোতোরোকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এ বিপর্যয়ের পর উদ্ধারকাজে তাৎক্ষণিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সহায়তা আসে ৪০ দিন পর, যখন একটি সেনা দল এসে উদ্ধারকাজে লেগে পড়ে।
এ বিপর্যয়ের পর উদ্ধারকাজে তাৎক্ষণিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সহায়তা আসে ৪০ দিন পর, যখন একটি সেনা দল এসে উদ্ধারকাজে লেগে পড়ে।
উয়েনো বলেন, এরিকার মরদেহ জড়িয়ে ধরে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। একইভাবে ছেলে কোতারোকেও বুকে জড়িয়ে ধরতে চান। তার কাছেও ক্ষমা চাইতে চান। প্রাণ না বাঁচাতে পারার জন্য ক্ষমা। আর এ কারণেই কোতোরোকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাবা।
উয়েনোর মতো হতভাগ্য আরও অনেকে রয়েছেন। স্বজনের মরদেহের সৎকারও তাঁরা করতে পারেননি। আর এই দুঃখ পুষছেন বছরের পর বছর, মাসের পর মাস।
সুনামিতে জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন আরও অনেকে। তাঁদেরও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
জাপানে রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট তাদাতেরু কোনেই বলেন, ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার ও
পুনর্বাসনকাজ চলছে। গৃহহীনদের জন্য অস্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। রেডক্রস জানায়, যুবকেরা সংগ্রামে
টিকে যেতে পারলেও বয়স্কদের জন্য তা কঠিন হয়েছে। যেমন উয়েনোর মাথায় সব
সময় ভয়ংকর সেই স্মৃতি ঘুরে বেড়ায়। মাথা থেকে কিছুতেই ভয়াবহতা ঝেড়ে
ফেলতে পারেন না তিনি।
এখনো উয়েনো চলে যান সৈকতে। খুঁজে বেড়ান ছেলেকে। তাঁর মতো অনেকেই যান।
উয়েনো বলেন, গত বছর তিনি ওই এলাকায় একজনের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছিলেন।
কিন্তু কঙ্কালের খুলিটি পাননি।
আশাহি শিমবুন পত্রিকার এক খবরে জানা যায়, এ বছর সুনামিতে নিখোঁজ ১৩
বছরের এক মেয়ের কঙ্কালের হাড়ের ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে। পরে তার পরিচয়
শনাক্ত করা গেছে।
উয়েনো বলেন, ‘যত দিন বেঁচে আছি ছেলের খোঁজ করে যাব। তার দেহাবশেষ জড়িয়ে তাকে বাঁচাতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইব।