প্রায়
তিন মাস পর নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হলেন বিএনপির চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গতকাল
রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে দুর্নীতির দুই মামলায় জামিন পেয়েছেন। আর
জামিন পেয়ে গতকালই গুলশানের বাসায় (ফিরোজা) ফিরে গেছেন খালেদা জিয়া।
এর মধ্য দিয়ে তিন মাস ধরে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানের সমাপ্তি হলো, রাজনৈতিক অঙ্গনেও কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হলো।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। কিন্তু ৪০ দিনেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছায়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কথা হচ্ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল।
গতকাল সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। ১০টা ৪০ মিনিটে বিচারক এজলাসে বসেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ওই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৫ মে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এই তারিখ ধার্য করেন।
আগে থেকে আদালতের কাঠগড়ার সামনে একটি সুসজ্জিত কাঠের চেয়ার ও একটি ছোট টেবিল রাখা ছিল। আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়া সেখানে বসেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে গতকাল পৃথক ছয়টি আবেদন করা হয়। দুই মামলায় জামিন ও সাক্ষ্য কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে আবেদন ছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত মামলার বাদী সাক্ষীকে আসামিপক্ষে জেরা করার জন্য পুনরায় আদালতে তলব করার আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালত খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করে পরোয়ানা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করার পর খালেদা জিয়া আদালত থেকে বেরিয়ে যান। সেখান থেকেই তিনি গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হন।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, এই মামলার আসামি খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি। নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবী হিসেবে তাঁরাই খালেদা জিয়াকে আসা না আসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এটা কোনো উদ্দেশ্যমূলক নয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আসার পথে তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল। এরপর নিরাপত্তার অভাবে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এ ছাড়া ২৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ায় ২৯ জানুয়ারিও আসতে পারেননি। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ পর্যায়ে আইনজীবী ও বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া মাননীয় আদালতের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আছেন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন।’
এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। তিনি সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি জামিন পেতে পারেন। আমরা জামিনে বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আসামিপক্ষ একই দরখাস্তে উল্লেখ করেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সঠিক হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের আপত্তি আছে। জামিন চাইতে হলে দরখাস্তের ওই অংশ কেটে দিতে হবে।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর ছোট ছেলে মারা যাওয়ায় মা হিসেবে শোকাহত থাকাটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার সব মা যা করতেন, তিনিও তাই করেছেন। আদালতের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানানো হয়েছিল এবং সময়ও দেওয়া হয়েছিল। আমরা আজ (গতকাল) সরাসরি শোকবার্তা জানিয়ে দিতে চাই। এই মামলার দুজন আসামি শুরু থেকেই পলাতক। খালেদা জিয়াসহ তিনজন জামিনে আছেন। তারেক রহমান তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহর মাধ্যমে মামলা চালাচ্ছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আইনজীবী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাক্ষ্য কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে আইনানুযায়ী আদালত যা করার প্রয়োজন, তাই করেছেন। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একই দরখাস্তে জামিন চেয়েছেন, আবার লিখেছেন পরোয়ানা জারি সঠিক হয়নি।’
বিচারক আরও বললেন, ‘আসামিপক্ষ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিলে আমি তা মানতে বাধ্য। বদলি অথবা আদালত স্থানান্তরের আদেশ হলেও তা মানতে বাধ্য। তেমনিভাবে কোনো স্থগিতাদেশ না থাকলে বিচার আদালতে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বাধা নেই।’ বিচারক আরও বলেন, আইনজীবীদের খালেদা জিয়ার পক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা তা করেননি। তাই জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তাই আদালতের আদেশ সঠিক। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দরখাস্তের ওই অংশটুকু কেটে দেন।
এরপর আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তোলার জন্য সময়ের আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে প্রথমে ২৬ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে তারিখ পরিবর্তনের আবেদন জানালে আদালত ৫ মে নতুন তারিখ ধার্য করেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলা পরিচালনায় আরও অংশ নেন জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মহসীন মিয়া, গোলাম মোস্তফা খান প্রমুখ।
দুদকের পক্ষে শুনানিতে মোশাররফ হোসেন ছাড়াও তাঁকে সহায়তা করেন মীর আহমেদ আবদুস সালাম, কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহীন আহমেদ, রেজাউল হক প্রমুখ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদক খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে। ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর মামলাটি করে দুদক। এই মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যেভাবে আদালতে ও বাসায় গেলেন খালেদা: গতকাল সকাল সাড়ে আটটার আগেই চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরা গুলশানের কার্যালয়ের ভেতর থেকে দফায় দফায় মালপত্র বের করেন। ছোট-বড় অনেক ব্যাগে করে বের করা ওই সব মাল চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নিয়ে যাওয়া হয়। সিএসএফের সদস্যরা কখনো হেঁটে, কখনো গাড়িতে করে ব্যাগগুলো নিয়ে যান।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিএসএফের সদস্যরা খালেদা জিয়ার গাড়ি পরীক্ষা করেন। গাড়ি চালু করেও পরীক্ষা করা হয়। সকাল নয়টার দিকে কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এরপর খালেদা জিয়া কখন বের হবেন, সেই অপেক্ষা করতে থাকেন বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় পুলিশ।
সকাল ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান গেট খুলে দেওয়া হয়। বেরিয়ে আসে খালেদা জিয়ার গাড়ি। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, সিএসএফ ও গণমাধ্যমের গাড়িগুলো যুক্ত হয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের রুটের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া বকশীবাজারের আদালতে পৌঁছালে বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা স্লোগান দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া পৌঁছানোর আগেই পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড় ও মাদ্রাসা-ই-আলিয়াসহ বকশীবাজার-সংলগ্ন এলাকায় যান ও মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। জামিন পেয়ে দুপুর পৌনে ১২টায় আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়া। তিনি বের হয়েই হাত নেড়ে সেখানে উপস্থিত তাঁর নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। সেখান থেকে সরাসরি গুলশানের বাসার পথে রওনা হন তিনি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাসভবনে প্রবেশ করেন। বাসায় আগে থেকেই তাঁর কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে ওই রাত থেকে তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে তালা মেরে দেওয়া হয়। এরপর ১৯ জানুয়ারি থেকে অবরোধমুক্ত করা হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি। ৩ জানুয়ারির পর গতকালই প্রথম কার্যালয় থেকে বের হয়ে আদালতে যান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে ফিরলেন নিজ বাসভবনে।
এর মধ্য দিয়ে তিন মাস ধরে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানের সমাপ্তি হলো, রাজনৈতিক অঙ্গনেও কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হলো।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। কিন্তু ৪০ দিনেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছায়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কথা হচ্ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল।
গতকাল সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। ১০টা ৪০ মিনিটে বিচারক এজলাসে বসেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ওই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৫ মে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এই তারিখ ধার্য করেন।
আগে থেকে আদালতের কাঠগড়ার সামনে একটি সুসজ্জিত কাঠের চেয়ার ও একটি ছোট টেবিল রাখা ছিল। আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়া সেখানে বসেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে গতকাল পৃথক ছয়টি আবেদন করা হয়। দুই মামলায় জামিন ও সাক্ষ্য কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে আবেদন ছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত মামলার বাদী সাক্ষীকে আসামিপক্ষে জেরা করার জন্য পুনরায় আদালতে তলব করার আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালত খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করে পরোয়ানা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করার পর খালেদা জিয়া আদালত থেকে বেরিয়ে যান। সেখান থেকেই তিনি গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হন।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, এই মামলার আসামি খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি। নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবী হিসেবে তাঁরাই খালেদা জিয়াকে আসা না আসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এটা কোনো উদ্দেশ্যমূলক নয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আসার পথে তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল। এরপর নিরাপত্তার অভাবে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এ ছাড়া ২৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ায় ২৯ জানুয়ারিও আসতে পারেননি। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ পর্যায়ে আইনজীবী ও বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া মাননীয় আদালতের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আছেন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন।’
এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। তিনি সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি জামিন পেতে পারেন। আমরা জামিনে বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আসামিপক্ষ একই দরখাস্তে উল্লেখ করেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সঠিক হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের আপত্তি আছে। জামিন চাইতে হলে দরখাস্তের ওই অংশ কেটে দিতে হবে।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর ছোট ছেলে মারা যাওয়ায় মা হিসেবে শোকাহত থাকাটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার সব মা যা করতেন, তিনিও তাই করেছেন। আদালতের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানানো হয়েছিল এবং সময়ও দেওয়া হয়েছিল। আমরা আজ (গতকাল) সরাসরি শোকবার্তা জানিয়ে দিতে চাই। এই মামলার দুজন আসামি শুরু থেকেই পলাতক। খালেদা জিয়াসহ তিনজন জামিনে আছেন। তারেক রহমান তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহর মাধ্যমে মামলা চালাচ্ছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আইনজীবী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাক্ষ্য কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে আইনানুযায়ী আদালত যা করার প্রয়োজন, তাই করেছেন। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একই দরখাস্তে জামিন চেয়েছেন, আবার লিখেছেন পরোয়ানা জারি সঠিক হয়নি।’
বিচারক আরও বললেন, ‘আসামিপক্ষ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিলে আমি তা মানতে বাধ্য। বদলি অথবা আদালত স্থানান্তরের আদেশ হলেও তা মানতে বাধ্য। তেমনিভাবে কোনো স্থগিতাদেশ না থাকলে বিচার আদালতে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বাধা নেই।’ বিচারক আরও বলেন, আইনজীবীদের খালেদা জিয়ার পক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা তা করেননি। তাই জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তাই আদালতের আদেশ সঠিক। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দরখাস্তের ওই অংশটুকু কেটে দেন।
এরপর আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তোলার জন্য সময়ের আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে প্রথমে ২৬ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে তারিখ পরিবর্তনের আবেদন জানালে আদালত ৫ মে নতুন তারিখ ধার্য করেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলা পরিচালনায় আরও অংশ নেন জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মহসীন মিয়া, গোলাম মোস্তফা খান প্রমুখ।
দুদকের পক্ষে শুনানিতে মোশাররফ হোসেন ছাড়াও তাঁকে সহায়তা করেন মীর আহমেদ আবদুস সালাম, কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহীন আহমেদ, রেজাউল হক প্রমুখ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদক খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে। ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর মামলাটি করে দুদক। এই মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যেভাবে আদালতে ও বাসায় গেলেন খালেদা: গতকাল সকাল সাড়ে আটটার আগেই চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরা গুলশানের কার্যালয়ের ভেতর থেকে দফায় দফায় মালপত্র বের করেন। ছোট-বড় অনেক ব্যাগে করে বের করা ওই সব মাল চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নিয়ে যাওয়া হয়। সিএসএফের সদস্যরা কখনো হেঁটে, কখনো গাড়িতে করে ব্যাগগুলো নিয়ে যান।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিএসএফের সদস্যরা খালেদা জিয়ার গাড়ি পরীক্ষা করেন। গাড়ি চালু করেও পরীক্ষা করা হয়। সকাল নয়টার দিকে কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এরপর খালেদা জিয়া কখন বের হবেন, সেই অপেক্ষা করতে থাকেন বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় পুলিশ।
সকাল ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান গেট খুলে দেওয়া হয়। বেরিয়ে আসে খালেদা জিয়ার গাড়ি। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, সিএসএফ ও গণমাধ্যমের গাড়িগুলো যুক্ত হয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের রুটের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া বকশীবাজারের আদালতে পৌঁছালে বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা স্লোগান দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া পৌঁছানোর আগেই পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড় ও মাদ্রাসা-ই-আলিয়াসহ বকশীবাজার-সংলগ্ন এলাকায় যান ও মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। জামিন পেয়ে দুপুর পৌনে ১২টায় আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়া। তিনি বের হয়েই হাত নেড়ে সেখানে উপস্থিত তাঁর নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। সেখান থেকে সরাসরি গুলশানের বাসার পথে রওনা হন তিনি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাসভবনে প্রবেশ করেন। বাসায় আগে থেকেই তাঁর কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে ওই রাত থেকে তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে তালা মেরে দেওয়া হয়। এরপর ১৯ জানুয়ারি থেকে অবরোধমুক্ত করা হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি। ৩ জানুয়ারির পর গতকালই প্রথম কার্যালয় থেকে বের হয়ে আদালতে যান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে ফিরলেন নিজ বাসভবনে।