মাছের ঘেরে অস্তিত্ব সংকটে এখন তিতাস নদ। ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে এর
তলদেশ। ইতিমধ্যে নানা অংশে শীর্ণ হয়ে গেছে এই নদ। মাছের অবাধ বিচরণে বড়
বাধা এই ঘের। ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। নবীনগর এলাকায় তিতাস নদ ছাড়াও পাগলিনী
নদী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্বাংশে তিতাস নদে আছে এমন আরো অসংখ্য
ঘের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণঘাট থেকে নবীনগর পর্যন্ত তিতাস নদের
দীর্ঘ প্রায় ১৭ কিলোমিটার নৌপথের দু’ধারে এই ঘেরের অবস্থান চোখে পড়ে। মাঝের
সামান্য ফাঁক দিয়ে চলে লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান। উপজেলা মত্স্য অফিস সূত্রে
জানা যায়, নদের এই অংশেই তারা ৪ শতাধিক ঘেরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এসব
ঘের মালিকের নাম ঠিকানাও সংগ্রহ করেছেন তারা। জানা গেছে, জলাশয় নীতিমালা
অনুযায়ী নদী সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে সবার। মাছও
অবাধ বিচরণ করবে এখানে। কিন্তু এর কোনটাই মানা হচ্ছে না। নদী তীরবর্তী
রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী লোকজন এই ঘের বানিয়ে নদের মাছের
নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা মাছ লুটে নিচ্ছেন, দেশি প্রজাতির মাছের বংশ বিনাশ
করছেন। অবৈধ ঘেরে লাভবান হচ্ছেন প্রভাবশালীরা। লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি
করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ঘেরের মাছে তুষ্ট থাকায়
এ নিয়ে ভাবেন না।
নবীনগরের দিকে মূল তিতাস নদী অনেক দূর
পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। কোন কোন জায়গায় দু’টি লঞ্চ এক সাথে চলাচল করতে পারে
না। তার মতে গত ৫০ বছরে তিতাস নদের যে এই অবস্থা হলো এর পেছনে অনেক কারণ
আছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে কারণ তা হচ্ছে মাছের এই অবৈধ ঘের। ঘের করার জন্য
নদে প্রচুর পরিমাণ গাছের ঢালপালা ফেলা হয়। আর ওপরে থাকে কচুরিপানা-কলমীলতা
ইত্যাদি। এর নিচেই মাছের আশ্রয়স্থল । এখান থেকে বিশেষ জালে সব ধরনের দেশি
মাছ নিঃশেষ করা হয়। ওদিকে ঘের ভাঙ্গার পর ঢালপালাগুলো নদের তলদেশে পড়ে
থাকে। এছাড়া বছরের ২/৩ মাস ছাড়া সারা বছরই এই ঘের থাকে। এতে নদের পানির
সঙ্গে প্রবহমান বালি ঐসব ঢালপালায় আটকে নিচে স্তূপ হচ্ছে। এভাবে নদের তলদেশ
ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে চাষাবাদ হয় ইরি ফসল। স্থানীয় ভূমি
অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রফাদফায় এই জমিও ভোগ দখল করছেন প্রভাবশালীরা।
অবৈধ ঘের মালিকদের একজন বিল্লাল মিয়া জানান, নদীর বুকে কমপক্ষে ১৫০ শতাংশ
জায়গা নিয়ে একেকটি ঘের হয়। একটি ঘের করতে খরচ পড়ে আড়াই তিন লাখ টাকা। এসব
ঘের প্রায় সারাবছরই থাকে। ঘের থেকে শোল, গজার, পাবদা, চিংড়িসহ নানা জাতের
দেশি মাছ আহরণ করা হয়। প্রশাসনের কোন অনুমতি লাগে না। ঘের থেকে প্রতিদিন
মণে মণে মাছ আহরণ হয়। ৩ লাখ টাকা খরচ করে ঘের দিয়ে লাভ হয় দ্বিগুণের বেশি।
জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, এসব ঘেরকে বলি ‘মিনি
অভয়াশ্রম’। এখানে মা মাছ ডিম পাড়তে পারে নির্বিঘ্নে। ছোট মাছ আশ্রয় পায়।
কিন্তু ঘেরের নিচে আশ্রয় নেয়া সব মাছই ধরে ফেলে মালিকরা। এতে দেশি প্রজাতির
মাছ দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
নবীনগর উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা
মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, অবৈধ ঘেরের মালিকের তালিকা করেছি। তিতাস ছাড়াও
পাগলিনী নদীতে আরো কিছু ঘের রয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। গত বছরের
সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৪টি মোবাইল কোর্ট
পরিচালনা করেছি। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময় এই ঘের থাকে। নবীনগর উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, ঘের অবৈধ এটাই বড় বিষয়। এর
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।