Political News - পেট্রোলবোমা বানাচ্ছে সহস্রাধিক দুর্বৃত্ত!


পেট্রোলবোমা বানাচ্ছে সহস্রাধিক দুর্বৃত্ত!
রাজধানীতে পেট্রোল বোমার মজুদ গড়ে তুলছে ছাত্রশিবির। এ জন্য তাদের থানাভিত্তিক পৃথক দল কাজ করছে। এসব দলে সহস াধিক কারিগর (দুর্বৃত্ত) বোমা তৈরি করছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, ঢাকায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনাও আঁটছে জামায়াতে ইসলামীর ওই ছাত্র সংগঠন।
সম্প্রতি ভাষানটেক ও মহাখালীতে আটক শিবির নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, ‘রাজধানীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন থেকে শিবির কর্মীরা পেট্রোল সংগ্রহ করে। বর্তমানে পাম্পে বোতল বা জারকিনে তেল বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন তারা নিজেদের ব্যবহূত মোটরসাইকেল দিয়ে পেট্রোল সংগ্রহ করছে।’
গত শুক্রবার ভাষানটেকের একটি বাড়ি থেকে পুলিশ ১টি পেট্রোল বোমা, ২টি ককটেল, পেট্রোল ভর্তি প্লাস্টিকের ২টি বোতল, স্পিরিট জাতীয় তরল পদার্থ ভর্তি একটি ছোট বোতল, ৬০টি দলীয় বইসহ শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের গোপন ফাইল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ঢাকাকে কয়েকটি এলাকায় ভাগ করে একের পর এক পেট্রোল বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল শিবির। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা গোপন ডায়েরি থেকে অর্থদাতা কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। তারা মোবাইল ফোনে কথা না বলে ‘ভাইবার’ (ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের সফটওয়্যার) ব্যবহার করে বলে তিনি জানান।
ওসি আরো জানান, রাজধানীর প্রত্যেক থানায় শিবির পেট্রোল বোমা তৈরি ও মজুদের জন্য পৃথক ‘উইং’ গড়ে তুলেছে। শিবিরের সহস্রাধিক কারিগর এই বোমা তৈরিতে পারদর্শী। তবে বোমাগুলো কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তৈরি করা হয় না। যখন যেখানে সুবিধা সেখানেই তারা পেট্রোল বোমা তৈরি করছে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি মহাখালীর একটি মেস থেকে ১৩০টি ককটেল, দুই লিটার পেট্রোল, বিস্ফোরকে ব্যবহার করা হয় এমন ১০ কেজি পাথরের গুঁড়া, ১ কেজি গানপাউডার ও তিন কেজি ধারালো চার কোণ বিশিষ্ট পেরেকসহ শিবিরের চার নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদেরও রিমান্ডে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহ্বুব হাসান জানান, গাড়ি পোড়ানোর কৌশল হিসেবে তারা প্রথমে রাস্তায় পেরেক ছড়িয়ে দিয়ে চাকা পাংচার করে। পরে গাড়ি থেমে গেলে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চলমান অবরোধ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে পেট্রোল বোমাই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। কারণ এটি তৈরির প্রধান উপাদান পেট্রোল সহজেই পাওয়া যায়। প্রয়োজনে অকটেন, কেরোসিন, এমনকি ডিজেলও ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা। এই দাহ্য পদার্থের বাইরে তারা বোমায় গানপাউডারও মিশিয়ে দিচ্ছে। এতে পেট্রোল বোমার  ভয়াবহতা আরো মারাত্মক হচ্ছে।
র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জানান, জামায়াত-শিবিরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছে। রংপুরের মিঠাপুকুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, বরিশালের গৌরনদী, রাজশাহীর কাঁটাখালী ও গাইবান্ধার তুলসীঘাটে গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলায় শিবির জড়িত। এসব বোমায় গান পাউডারও ব্যবহার হয়েছে। খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া বিস্ফোরক থেকেই তারা গানপাউডার সংগ্রহ করছে। এর পাশাপাশি হাত বোমা বা ককটেল তৈরির জন্য রাসায়নিক উপাদানও তারা খোলাবাজার থেকে সংগ্রহ করে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন ও ডিজেল দিয়ে প্রাণঘাতী পেট্রোল বোমা তৈরি ও হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন ও ডিজেল যত্রতত্র খুচরা বিক্রি না করার নির্দেশনা জারি করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অবৈধ পথে বিস্ফোরক এনে  খোলাবাজারে বিক্রি করছে এমন বেশ কয়েকজন আমদানিকারকের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে বিস্ফোরকের ৯৯৪টি গুদাম রয়েছে। তবে ৮৬৭টিরই কোনো লাইসেন্স নেই। রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরক গুদামজাত করা হয় ব্যবসায়িক কাজে। তবে বর্তমানে সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীকে ম্যানেজ করে এসব বিস্ফোরক সংগ্রহ করছে বলে তারা অভিযোগ পেয়েছেন।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts