News of Fiture - ঝলমলে চুল


ঝলমলে চুল
দীঘল কালো চুল নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। তবে লম্বা চুলের জন্য আপনাকে নিয়মিত পরিচর্যার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেননা বাইরের ধুলো-ময়লার কারণে সোজা ও লম্বা চুল সহজেই নেতিয়ে পড়তে পারে। বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে চুলের চকচকে ভাব নষ্ট হয়ে যায়, চুল আরও শুষ্ক হয়ে যায়। সাধারণ কিছু উপায় আর টোটকা অগোছালো চুল সুন্দর করতে সাহায্য করবে। লিখেছেন আহসান রনি
শুষ্ক চুলের যত্নে অয়েলিং
এক কাপ মধু ও এক কাপ অলিভ অয়েল মিশিয়ে তাতে দুই চা-চামচ মেথি ক্রাশ করে মিলিয়ে নিন এবং একটুখানি আমলকিও ক্রাশ করে এর ভেতর মিলিয়ে এই মিশ্রণ তিন-চার দিন রোদে রেখে দিন। যখনই রোদে দেবেন একটু ঝাঁকিয়ে দিন। এভাবে দু-তিন দিন পর রোদ দেওয়ার পর তেলের মিশ্রণটা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে বোতলে ভরে তার ভেতর ১০ ভাগ কেস্টর অয়েল মিশিয়ে রেখে দিন।
এবার যখনই ব্যবহার করবেন, একটু গরম পানির পাত্রে কিছুক্ষণ রেখে দিলে তেলটা হালকা গরম হয়ে যাবে। ওই তেল চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান, হালকা হাতে ম্যাসেজ করুন। এরপর এক ঘণ্টা রেখে দিন। চাইলে স্টিম নিন ১০ মিনিট। স্টিমটা নেওয়ার ফলে তেলের পুষ্টিটা গোড়ায় গোড়ায় ঠিকভাবে পৌঁছে যাবে। এরপর প্রোটিনসমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। স্টিম চাইলে গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়েও নিতে পারেন।
কন্ডিশনার
পার্সেল পাতা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে বোতলে ভরে রেখে দিন। এটা ভীষণ ভালো নেচারাল কন্ডিশনার। এই কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় চুল শ্যাম্পু করা হয়ে গেলে ভালোভাবে ভেজা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ম্যাসেজ করুন এবং পাঁচ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব বেশি গরম পানি মাথায় ঢালবেন না, এতে আপনার চুলে অয়েল ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সবসময় মাথা ধোয়ার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। সবশেষে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি চুল সব রুক্ষ হয়, তবে সপ্তাহে দু’দিনের বেশি শ্যাম্পু করবেন না। চুলের ময়েশ্চার বজায় রাখতে ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুল করবেন না। সপ্তাহে এক দিন একটি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনিং করে নিলে আপনার চুল থাকবে ঝলমলে।
হেয়ার প্যাক
আমলকির গুঁড়া ২ চা চামচ, মেথিগুঁড়া ১ চা চামচ, ডিম ১টি কুসুমসহ, হেনা পাউডার ১ চা চামচ, মধু ১ চা চামচ, চায়ের লিকার আধা কাপ। সব উপকরণ মিশিয়ে হালকা গরম অবস্থায় চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। যাদের ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা থাকে, তারা ২০ মিনিট রাখতে পারেন; তাতেও আপনার কাজ হয়ে যাবে। এরপর আপনার চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং সবশেষে পার্সেল পাতার রস দিয়ে কন্ডিশনিং করুন।
খুশকি
খুশকি থাকলে অনেক সমস্যা। এ সময় খুশকির সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ সময় লেবুর রস ও আমলকির রস সমপরিমাণে মিশিয়ে চুলের শুধু গোড়াতে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন, শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি খুশকি ভালো হয়ে যাবে। এভাবে নিয়মিত পরিচর্যার (সপ্তাহে দুই দিন) মাধ্যমে আপনার চুলকে রাখুন ঝলমলে ও খুশকিমুক্ত।
কালারড হেয়ারের যত্নে
আজকাল চুল কালার বা হাইলাইট করার ট্রেন্ড বেশ চলছে। চেহারায় একটা আলাদা ভাব নিয়ে আসতে বা অকালেই পাকা চুলগুলোকে ঢাকতে হেয়ার কালারই যেন একমাত্র ভরসা, আর তার জন্য মার্কেটে রয়েছে হরেক রকমের হেয়ার কালার। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো এসব হেয়ার কালারে রয়েছে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া, যা এক ধরনের ক্যামিকেল ব্লিচিং এজেন্ট এবং এটি চুলকে কালার করার সাথে সাথে চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ করে তোলে যার ফলে হেয়ার ফল হয়। তাই কালার করা চুলের জন্য অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেওয়া চাই।
l চুল কালার করানোর আগে থেকেই চুল যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর এবং ময়েশ্চারাইজড রাখার চেষ্টা করুন এবং কমপক্ষে ৩-৪ সপ্তাহ আগে থেকে চুলে কোনো কেমিকেল ট্রিটমেন্ট করাবেন না।
l কালার করা চুলের জন্য স্পেশালি কালার প্রটেক্টিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এসব শ্যাম্পু চুলের কালার ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং চুলের ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখে।
l কালার করা চুলে সপ্তাহে অন্তত একবার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। চুল ডিপ কন্ডিশন করতে এর জুড়ি নেই। পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল, আমনড অয়েল এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালো মতো ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের নিষ্প্রাণ ভাব দূর করে চুল সিল্কি ও সুন্দর করে।
l যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার বা চুল আয়রন করা থেকে বিরত থাকুন। এসব জিনিস চুলকে ভেতর থেকে ড্যামেজ করে এবং ধীরে ধীরে চুল রুক্ষ ও মলিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এসব হেয়ার স্টাইলার ব্যবহার করা।
অতিরিক্ত শুষ্ক চুলের যত্নে
l একটা পাত্রে দুই চামচ অলিভ অয়েল, একটি ডিমের সাদা অংশ এবং পরিমাণমতো টক দই নিয়ে ভালো করে মিশান।। এবার এই মিশ্রণ সব চুলে ভালো করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
l সমপরিমাণ মধু ও অলিভ অয়েল চুলের পরিমাণ অনুযায়ী ভালোভাবে মিশান। এই মিশ্রণ সব চুলে ভালো করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ১ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
l শ্যাম্পু করার পর একটি পাত্রে অর্ধেক পরিমাণ পানি এবং অর্ধেক পরিমাণ ভিনেগার নিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ঝলমলে হবে।
হেয়ার প্রোটিন অয়েল প্যাক
আমরা সবাই চাই চুলের বিশেষ যত্ন নিতে। চুলকে শক্ত মজবুত ও চুলের গ্রোথের জন্য তেল অত্যন্ত উপকারী উপাদান। তেল হচ্ছে চুলের উজ্জ্বলতার প্রাণ। কিন্তু সাধারণ তেলের সাথে যদি কিছু উপাদান যোগ করি তাহলে তা চুলের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি হেয়ার টনিকে পরিণত হয়। তেলকে প্রোটিনযুক্ত করার জন্য হেয়ার প্রোটিন প্যাক তৈরি করতে হবে।
যা লাগবে—আমলকি ৫-৬টি, মেথি ১ চামচ (গুঁড়া বা আস্ত), জবাফুল ৩টি, ই-ক্যাপসুল (সফট জেল) ২টি, নারকেল তেল (এক কৌটা)
প্যাক তৈরির নিয়ম :একটি পাত্রে নারকেল তেল, আমলকি, মেথি, জবা ফুল, ই-ক্যাপসুল অর্থাত্ উপর্যুক্ত সকল উপাদান নিয়ে ৩০ মিনিট অল্প আঁচে একসাথে গরম করতে হবে। এরপর গরম করা তেল ছেঁকে নিয়ে কোনো সুবিধাজনক কৌটাতে সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল প্রোটিন অয়েল প্যাক। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনার চুল হবে ঘন কালো লম্বা ও মসৃণ। চুলের জন্য এই প্যাকটি অত্যন্ত উপকারী একটি অয়েল প্যাক।
তৈলাক্ত চুলের যত্ন
চুল মেয়েদের সৌন্দর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সাজের ধরন অনুযায়ী চুলের ফ্যাশনও বদলে যায়। কিন্তু এর জন্য চুল ভালো রাখা খুব জরুরি। আর চুল ভালো রাখার জন্য নিয়মিত এর যত্ন নেওয়া উচিত। চুলের ধরন অনুযায়ী এর যত্নও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে চুলের একটু বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কারণ চুল তৈলাক্ত হলে এতে ধুলোবালি বেশি জমে এবং খুশকি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া এই ধরনের চুলের জন্য স্কাল্পেও সমস্যা হয়ে থাকে। এখন একটু সতর্ক হলে ঘরে বসেই হাতের কাছের কিছু উপাদান দিয়েই এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন।
 
অন্যান্য ট্রিটমেন্ট
ভিনেগার ব্যবহারেও চুলের তৈলাক্ততা কমে যায়। ৩ টেবিল চামুচ ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে সম্পূর্ণ চুলে স্প্রে করুন। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে চুলের তৈলাক্ত ভাব কমার সাথে সাথে চুল উজ্জ্বল হবে। একটা পাত্রে একটা ডিম ভেঙে তার সাথে ৩ টেবিল চামচ মেহেদি পাউডার মেশান। এবার এর সাথে ১ চামচ মধু ও ১ চামচ অলিভ ওয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। প্রয়োজন হলে এতে একটু গরম পানি মিশাতে পারেন। এবার এটাকে সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন যতক্ষণ পর্যন্ত চুল থেকে এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার না হয়ে যায়। সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহারে চুলের তৈলাক্ততা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts